দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি, প্রত্নসম্পদ, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবান্বিত স্থান, আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জনগুরুত্বপূর্ণ জায়গা সম্পর্কে জানতে ও জানাতে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় গিয়ে ধারণ করা হয় বিটিভির জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’। এরই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্বটি ধারণ করা হলো নৈসর্গিক শোভার লীলাভূমি নেত্রকোনায়। মঞ্চ নির্মাণ করা হয় এই জেলার বিজয়পুরের সাদামাটির পাহাড়ের সামনে। সবুজ বনানী, পাহাড় আর অসাধারণ নৈসর্গিক দৃশ্যের সঙ্গে সংগতি রেখে সাজানো মঞ্চে ধারণ করা হয়েছে এবারের ‘ইত্যাদি’।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ফাগুন অডিও ভিশন জানায়, অধিকাংশ সময়ই রাতের আলোকিত মঞ্চে ইত্যাদি ধারণ করা হলেও বিজয়পুরের নৈসর্গিক রূপ রাতের বেলায় দেখানো সম্ভব নয় বলে এবার দিনের আলোর পড়ন্ত আভায় ইত্যাদির দৃশ্যধারণ হয়েছে। অনুষ্ঠানটি ধারণ করা হয় ১৩ সেপ্টেম্বর।
আমন্ত্রিত দর্শক ছাড়াও প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ আশপাশের পাহাড়, গাছ ও লেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে ইত্যাদির ধারণ উপভোগ করেন। ধারণ চলে রাত ১১টা পর্যন্ত। এই দীর্ঘ সময়ে দর্শকেরা অবাক বিস্ময়ে দেখেছেন হানিফ সংকেতের নির্মাণ কারিশমা। হাজার হাজার দর্শক সুশৃঙ্খলভাবে উপভোগ করেছেন তাঁদের প্রিয় অনুষ্ঠানের ধারণ। কিছুক্ষণ পরপরই দর্শকদের তালিবৃষ্টি আর আনন্দ চিৎকারে পুরো বিজয়পুরই যেন সেদিন আনন্দনগরে পরিণত হয়েছিল।
এবারের অনুষ্ঠানে মাটি ও মানুষের শিল্পী নেত্রকোনার সন্তান কুদ্দুস বয়াতি ও তাঁর শিষ্য ‘দেওরা’খ্যাত ইসলাম উদ্দিন পালাকার দু’জনে একসঙ্গে ওই অঞ্চলের দুটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। গানটির সংগীতায়োজন করেছেন মেহেদি। এ ছাড়া নেত্রকোনাকে নিয়ে মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের কথায়, হানিফ সংকেতের সুরে এবং মেহেদির সংগীতায়োজনে একটি গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেছেন বিজয়পুরের স্থানীয় দুই শতাধিক গারো, হাজং ও বাঙালি নৃত্যশিল্পী। কোরিওগ্রাফি করেছেন মালা মার্থা আরেং, কণ্ঠ দিয়েছেন পুলক, তানজিনা রুমা, মোমিন বিশ্বাস ও নোশিন তাবাসসুম। গানটির চিত্রায়ণ হয়েছে দুর্গাপুরেরই কিছু মনোরম লোকেশনে।
অন্যদিকে, দর্শকপর্বের নিয়ম অনুযায়ী নেত্রকোনাকে ঘিরে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে উপস্থিত দর্শকের মাঝখান থেকে ৪ জন দর্শককে বেছে নেওয়া হয়। নির্বাচিত সেই দর্শকদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক শিল্পী মলয় কুমার গাঙ্গুলি। তাঁর বাড়িও নেত্রকোনায়। নির্বাচিত দর্শকের সঙ্গে তিনি তাঁর নিজের গাওয়া ৪টি জনপ্রিয় গানের অংশবিশেষে কণ্ঠ ধরেছেন।
ইত্যাদিতেই প্রথম পরিবেশিত হয় বিশ্বের বিস্ময়কর বিষয়ের ওপর বিদেশি প্রতিবেদন। এবারের পর্বে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে অবস্থিত গিয়ংবকগাং প্রাসাদের ওপর একটি সচিত্র প্রতিবেদন। এ ছাড়া নেত্রকোনার মঞ্চে যথারীতি সমসাময়িক বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে থাকছে নানি-নাতির কথার মাতামাতি। নিয়মিত অন্যান্য পর্বসহ রয়েছে বিভিন্ন সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে বেশ কিছু সরস অথচ তীক্ষ্ণ নাট্যাংশ। টেলিভিশন প্রযুক্তির উন্নয়ন বনাম অনুষ্ঠানের মানে অবনমন, ইন্টারনেট আসক্তির নেতিবাচক প্রভাব, ভুলে ভরা জীবন, সবিনয়ে আমন্ত্রণ-ক্রোধে প্রত্যাখ্যান, ভোট ভিখারি, ইউটিউবে টাকা কামানোর ধান্দা, সেলফি ভাইরাস, ননসেন্স মানুষের রাস্তায় হাঁটার লাইসেন্স, সুবিধাবাদী ব্যবসায়ী, জীবনের ওপর ফাইলের চাপসহ বিভিন্ন বিষয়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি নাট্যাংশ।
আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে একযোগে প্রচার হবে গণমানুষের এই প্রিয় অনুষ্ঠান। বরাবরের মতো ‘ইত্যাদি’র রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের সৌজন্যে এটি নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন।