মীর রাকিব হাসান
আজ কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের ৭৩তম জন্মদিন। তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেছেন তাঁর সহধর্মিণী অভিনেত্রী, নির্মাতা ও শিল্পী মেহের আফরোজ শাওন।
প্রতিবছরের মতো এবারও একই রকম আয়োজন। ২০১৫ সাল থেকে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনের আগের দিন ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার’ দেওয়া হয়। এবারও হলো বাংলা একাডেমিতে। হুমায়ূন আহমেদের নামে সাহিত্য পদক প্রণয়ন হয়েছে, এটা আমার কাছে খুবই গর্বের ব্যাপার। কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য একজন প্রবীণ ও একজন নবীন লেখক এ পুরস্কার পান। এ বছর প্রবীণ শাখায় পুরস্কৃত হয়েছেন কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন এবং নবীন শাখায় ফাতেমা আবেদীন। এই আয়োজনটা আমার কাছে মনে হয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
১২ তারিখ দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রতিবছর হুমায়ূন আহমেদ থাকতে যেভাবে কেক কাটা হতো, সেভাবেই আমরা কেক কাটি ‘দখিন হাওয়া’য়। উপস্থিত থাকেন হুমায়ূন আহমেদের ভক্ত, অনুরাগী ও কাছের মানুষজন। কেক কেটে আমরা চলে যাই নুহাশ পল্লীতে। সেখানে রাতটা থাকি। সকালে নুহাশ পল্লীতে হুমায়ূন আহমেদের সমাধিতে ফুল দিয়ে ঢাকায় চলে আসি। বিভিন্ন অনুষ্ঠান থাকে সেগুলোয় উপস্থিত থাকার চেষ্টা করি। এবারও এর ব্যত্যয় হবে না।
নিজের জন্মদিনে তেমন কিছুই করতেন না হুমায়ূন আহমেদ। যা করার তাঁর ভক্তরাই করতেন। রাত ১২টার মধ্যেই চলে আসতেন সবাই। কেউ ফুল নিয়ে আসতেন, কেউ কেক নিয়ে, কেউবা আসতেন গিফট নিয়ে। গিফট পেয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতেন। র্যাপিং পেপারটা সঙ্গে সঙ্গে টেনে খুলে ফেলা, পাঞ্জাবিটা হাতে পাওয়া মাত্রই সেটা খুলে তাঁর সামনেই পরে ফেলা—এভাবেই প্রতিক্রিয়াটা জানাতেন।
‘দখিন হাওয়া’ (হুমায়ূন আহমেদের বাসভবন) অপরিচিত মানুষ ঢোকার অনুমতি ছিল না; কিন্তু এই দিনে সবার জন্য দরজা খোলা থাকত। বাসায় বড় বড় যে কেক আনা হতো, সেগুলো কেটে রেডি রাখা হতো সবাইকে দেওয়ার জন্য।
এই মুহূর্তে জন্মদিনের দুটো উপহারের কথা মনে পড়ছে। দুটোই খুব পছন্দ করেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। একটা আমার দেওয়া অন্যটি পাক্ষিক অন্যদিনের।
হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট চরিত্রগুলো নিয়ে আমি একটা ক্যালেন্ডার বানিয়ে গিফট করেছিলাম তাঁকে। নাম দিয়েছিলাম ‘হুমায়ূন ক্যালেন্ডার’।
আরেকবার পাক্ষিক অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে হুমায়ূন আহমেদের একটি আবক্ষ স্কাল্পচার বানিয়ে আনল। হুমায়ূন আহমেদ সেই স্কাল্পচার দেখে মুগ্ধ হয়ে বললেন, ‘দেখো দেখো এটার নাম আমি দিলাম ছোটদের হুমায়ূন আহমেদ।’ মূর্তিটা এখনো নুহাশ পল্লীতে আছে।
অনুলিখন: মীর রাকিব হাসান