ঢাকা: প্রথম ছবি ‘আয়নাবাজি’ নির্মাণ করেই হইচই ফেলে দিয়েছিলেন নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী। এরপর কেটে গেছে প্রায় পাঁচ বছর। এবার আসছেন নিজের দ্বিতীয় পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘রিকশা গার্ল’ নিয়ে। গত মঙ্গলবার রাতে ‘রিকশা গার্ল’–এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেলার প্রকাশিত হয়েছে। সোয়া দুই মিনিটের ট্রেলারটিতে পাওয়া গেছে দারুণ এক গল্পের আভাস। সেই সঙ্গে চমৎকার দৃশ্য, রং মুগ্ধ করবে যেকোনো সিনেমাপ্রেমীকে।
ল্পীমনা নারী নাঈমার গল্প ‘রিকশা গার্ল’। অন্তত ট্রেলারে তেমনই ইঙ্গিত। সোয়া দুই মিনিটের ট্রেলারে দেখা যায়, নাঈমার কাছে ছবি আঁকা ভীষণ পছন্দের। কিন্তু দরিদ্র সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তার বাবা হঠাৎ একদিন অসুস্থ হলে সবকিছু পাল্টে যায়। ছবি এঁকে যেহেতু পয়সা পাওয়া যায় না, তাই বাধ্য হয়ে সেই নাঈমা রাস্তায় রিকশা নিয়ে বের হয়। তাকে সম্মুখীন হতে হয় নানা জটিলতার।
নভেরা রহমানের বয়স যখন চার মাস, তখন তাঁর মা মোমেনা চৌধুরী অভিনীত একটা নাটক চলছিল ‘দূরে কোথাও’। সেটাতে মোমেনা চৌধুরীর বাচ্চার চরিত্র করার জন্য আগে থেকেই একটা বাচ্চা ঠিক করা ছিল। কিন্তু সেই বাচ্চাটা সেটে আসতে পারেনি। বাচ্চাটা আমেরিকায় চলে গিয়েছিল। এমন একটা সমস্যার কারণে প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো নভেরার।
তারপর থেকে শিশুশিল্পী হিসেবে অনেক কাজ করা হয়েছে। ‘পাখি সব করে রব’, ‘একান্নবর্তী’র মতো আরও অনেক নাটকে শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ করা হয়েছে। মা আরণ্যকে থাকায় মঞ্চের ব্যাকস্টেজেই বড় হয়েছেন নভেরা। এমনও হয়েছে ট্রাংকের ওপর ঘুম পাড়িয়ে শো করতে যেতেন মা মোমেনা।
সেই জায়গা থেকে থিয়েটার রক্তের মধ্যেই আছে। চোখের সামনে থিয়েটারকে একদম ভেতর থেকে দেখেছি। আরণ্যকের জন্য আমার অভিনয় বা চিন্তাভাবনার বিকাশটা হয়েছে। কারণ, সংক্রান্তি দেখে বড় হয়েছি। এমনও হয়েছে সংক্রান্তি, ময়ূর সিংহাসন–এর সংলাপ আমার মুখস্থ থাকত। এত নাটক দেখেছি এই দলের!
নভেরা রহমান, ‘রিকশা গার্ল’ অভিনেত্রী
তবে ছোটবেলা থেকে কখনোই চিন্তা ছিল না অভিনেত্রী হবেন। বড় হয়ে আর্কিওলজিস্ট হওয়ারই ভাবনা ছিল। ইতিহাস নিয়ে চিন্তাভাবনা ছিল মাথায়। কিন্তু সেটা আর শেষ পর্যন্ত হয়নি। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন গেলেন তখন খুব শখ করে একটা থিয়েটার কোর্স নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই কোর্সটা করে এতটা ভালো লাগল, মনে হলো আমি ওই জায়গাটাতেই থাকতে পারি। ‘এর মধ্যে আমি কানাডায় গিয়েছিলাম থিয়েটার আর ইকোনমিকসে পড়াশোনার জন্য। আলাদাভাবে দুটি বিষয়ের ওপর ডিপ্লোমা করা হচ্ছিল। থিয়েটারটা শেষ করে ইকোনমিকস আর শেষ করা হয়নি। সেটা এখন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে কন্টিনিউ করছি।’ বললেন নভেরা।
কানাডায় গিয়ে যখন থিয়েটার করা শুরু করলাম। সেখান থেকে উৎসাহ পেলাম। ওখানকার সবাই বলত, তোমার অভিনয়টা ভালোই হচ্ছে। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম অভিনয়টাকে প্রফেশন হিসেবে নিতে পারি। ওভাবে কানাডায় একটা থিয়েটার কোম্পানির সঙ্গে কাজ করেছি। আমার ট্রেনিংটা ওখান থেকেই নেওয়া।
নভেরা রহমান, ‘রিকশা গার্ল’ অভিনেত্রী
এর আগেও মান্নান হীরার ‘একাত্তরের ক্ষুধিরাম’ সিনেমায় কাজ করেছেন। সেখানে মাত্র দুটি দৃশ্যে অভিনয় করেছেন। নতুন একজন হিন্দু বউ, তাঁকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ধরে নিয়ে যাবে। ওই দৃশ্যটা এত ভালো হয়েছিল, যার জন্য মান্নান হীরা সিনেমায় তাঁর জন্য আরেকটা দৃশ্য রেখেছিলেন। যেটা ছিল সিনেমায় প্রথম কাজ। তারপর মেড ইন বাংলাদেশে কাজ করা।
সেটে গিয়ে দেখি ইয়ং একজন মেয়ে সেটে বসগিরি করছেন। সেটা আমার খুবই ভালো লেগেছিল। সিনেমাটির ডিরেক্টর, সিনেমাটোগ্রাফি, চিফ এডি, সাউন্ডে যে ছিলেন সবাই নারী। আমরা পাঁচজন নারী অভিনয় করেছি মূল চরিত্রে। অনেক নারীর দক্ষতায় সিনেমাটি নির্মাণ হয়েছে।
নভেরা রহমান, ‘রিকশা গার্ল’ অভিনেত্রী
এরপর শঙ্খ দাসগুপ্তর ‘সুন্দর চান’ নামের একটি শর্টফিল্মে অভিনয় করেছেন। সিনেমায় একজন পতিতার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। পতিতা ও তাঁর বানরকে নিয়ে গল্পটা। ‘অভিজ্ঞতটা ক্রেজি ছিল। এই চরিত্রের জন্য নিজেকে তৈরি করতে হয়েছে। এই শর্টফিল্মের শুটিং হয়েছে দৌলতদিয়ায়। শুটিংয়ের আগে সেখানে গিয়ে ওখানকার পতিতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। ওখানে থেকেছি, যা আমার জন্য নতুন একটা অভিজ্ঞতা ছিল।’
আমি অনেক গবেষণা করেছি। আমি অনেকবার ফিল্ডে গিয়েছি। ফিল্ডে গিয়ে অনেকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। রিকশা গার্লের জন্য আমার অনেক মানুষ দেখতে হয়েছে। ছোটবেলা থেকেই আমার মানুষ দেখতে ভালো লাগে। বাসে বসে মানুষের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। রিকশা গার্লের জন্য ঢাকায় অনেক ঘুরেছি।
নভেরা রহমান, ‘রিকশা গার্ল’ অভিনেত্রী
তবে নভেরার ভীষণ আগ্রহ ক্যামেরার পেছনে কাজ করার। ‘“মেড ইন বাংলাদেশ” করার পরপরই আমার মনে হলো ফিল্ম মেকিং করব। এখনো আমার ইচ্ছে আছে ক্যামেরার পেছনে কাজ করার। সেই চিন্তাভাবনা থেকেই আফসানা মিমির প্রোডাকশনে সহকারী হিসেবে কাজ করতে ঢুকি। ইন্টার্ন হিসেবে ঢুকে প্রায় প্রধান সহকারী হয়ে গিয়েছিলাম। তা ছাড়া কানাডায় কস্টিউম নিয়েও পড়া হয়েছিল। এরপর দেশে এসে মায়ের “শূন্যন রেপার্টরি থিয়েটার” কোম্পানির কস্টিউম ও মিউজিক্যাল পার্ট দেখতাম। ঢাকার বাইরে গিয়ে কাজ করতাম, যেটা আমার নিজের ব্যস্ততায় এখন আর হচ্ছে না।’
নতুন একটা রেকর্ড লেভেলের জন্য কাজ করছেন। রেকর্ড লেভেলটার নাম হচ্ছে ‘দ্য মাদারশিপ’। ‘আমরা নতুন ব্যান্ডকে প্রকাশ করি। মাত্র শুরু করলাম আমাদের যাত্রা। ইতিমধ্যে নতুন কয়েকটি ব্যান্ড ও সলো ভালো আর্টিস্ট পেয়েছি আমরা। খুব শিগগিরই বড় পরিসরে আত্মপ্রকাশ করব।’
দেখুন ‘রিকশা গার্ল’ সিনেমার ট্রেলার: