হোম > বিনোদন > হলিউড

বিদ্রোহী এমিলির রূপালি প্রত্যাবর্তন

মোশারফ হোসেন

সময়টা উনিশ শতকের মাঝামাঝি। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস রাজ্যের আর্মহার্স্টে শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা রাখছেন এমিলি ডিকিনসন। সমসাময়িক নারীদের থেকে একটু স্বাধীনচেতা এমিলির একান্ত পরম বন্ধু কবিতা। এর মাধ্যমেই নিজের মুক্তির পথ খুঁজে নেন তিনি। তৎকালীন সমাজব্যবস্থা অবশ্য বাদ সাধে। তৎকালীন সময়ে নারীদের ছিল না কোনো সামাজিক মর্যাদা কিংবা স্বীকৃতি। নারীদের কাজ ছিল ঘরে বসে রান্নাবান্না করা, গৃহস্থালির কাজ আর স্বামীর মনোরঞ্জন করা। নারীদের সাহিত্যচর্চা ছিল পরিবার ও সমাজের জন্য অসম্মানজনক। বাবা এডওয়ার্ড ডিকিনসনের তুমুল বিরোধিতা সত্ত্বেও বিপ্লবী কবিতা হাতে এগিয়ে আসেন এমিলি ডিকিনসন। বাবা যদিও হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, বংশের নাম খারাপ হবে তাতে।

ঠিক এমনি এক আবহে নির্মিত অ্যাপল টিভি প্লাসের অরিজিনাল সিরিজ ‘ডিকিনসন’। বিখ্যাত আমেরিকান নারী কবি এমিলি ডিকিনসনের জীবনের ছায়া অবলম্বনে নির্মিত এই সিরিজ তিন সিজনে শেষ হয় গত বছরের ডিসেম্বরের শেষের দিকে। প্রথম সিজনে উঠে আসে এমিলির কবিতার প্রতি নিস্পৃহ ভালোবাসা। দিনরাত একটি আবদ্ধ ঘরে বন্দী হয়ে একের পর এক কবিতা লিখে যেতেন তিনি। তাঁর কবিতার একান্ত পাঠক ছোটবেলার বান্ধবী সুজান, সংক্ষেপে সু। কবিতায় ভাব প্রকাশের মাধ্যমে একসময় আত্মিক-শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে এমিলি ও সুজানের মধ্যে।

তখনকার সময়ে মেয়েদের তেমন কোনো মৌলিক অধিকার ছিল না। ঘরে আবদ্ধ গৃহস্থালির কাজ ও স্বামীর মন জুগিয়ে চলাই জীবনের মূল লক্ষ্য ছিল তখনকার পশ্চিমা সমাজের মেয়েদের। কিন্তু এমিলির মতে, কেন তাঁকে একজন পুরুষকে বিয়ে করে মনোরঞ্জন করতে হবে, যখন কবিতার মাধ্যমে তিনি তাঁর দুঃখ, কষ্ট, সংগ্রাম ও আনন্দ প্রকাশ করতে পারেন? কেনই-বা তাঁকে সমাজের প্রতিটি নির্দেশে তাল মিলিয়ে চলতে হবে? সমাজে যে নারীদেরও অস্তিত্ব আছে, নারীরাও যে পুরুষদের মতো মৌলিক অধিকারের দাবিদার—এমিলির এসব উপলব্ধিই উঠে আসে সিরিজের প্রথম সিজনে।

দ্বিতীয় সিজন মূলত এমিলির খ্যাতি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে তুলে ধরেছে। এমিলি ভাবেন, তাঁর সাহিত্যকর্ম মানুষের কাছে পৌঁছানো দরকার। তাঁর চিন্তা-চেতনা, সমাজ নিয়ে বিপ্লবী ধারণা মানুষকে প্রগতিশীল করে তুলবে। তিনি সুজানের মাধ্যমে এক পত্রিকার সম্পাদকের কাছে ধরনা দেন। কবিতা আদান-প্রদান হয়। ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠলেও এমিলি একসময় বুঝতে শুরু করেন যে, নারী হিসেবে তাঁর আদর্শকে সমর্থন করেন না সম্পাদক। ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর তাঁর জনপ্রিয়তাতেও ভাটা পড়ে। তাইতো এমিলিকে বলতে শোনা যায়, ‘ফেইম ইজ অ্যা পিকল ফুড!’

তৃতীয় ও শেষ সিজন মূলত যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধ ঘিরে। মার্কিন জাতি তখন অন্তর্কোন্দলে বিভক্ত। দেশের নবীন-যুবকেরা যে যার মতো বেরিয়ে পড়ছে যুদ্ধের ময়দানে। ঠিক সেই সময়ে একের পর এক কবিতা লিখে যান এমিলি। তাঁর লেখনীর মাধ্যমে সাহস জোগান যোদ্ধাদের। এমিলির বক্তব্যে উঠে আসে—এমনকি সবচেয়ে খারাপ দিনগুলোতেও, মানুষের উচ্চারিত কোমল ও সাহসী শব্দগুলোই আমাদের সামনে এগিয়ে চলার সাহস জোগায়। অস্ত্র কিংবা গ্রেনেডের চেয়ে ওই শব্দগুলোই তখন সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী।

জাতিগত, আত্মিক, পারিবারিক দ্বন্দ্ব এবং সুজান ও এমিলির সম্পর্কের টানাপোড়েন দিয়ে গৃহযুদ্ধের মাঝপথেই যবনিকা ঘটে ‘ডিকিনসন’-এর। সিরিজের পুরোটা একেবারে ঐতিহাসিকভাবে নিখুঁত না হলেও মূল গল্প ঠিক রেখে নাটকীয়ভাবে উপস্থাপন করেছেন এর নির্মাতা অ্যালেনা স্মিথ। এমিলি ডিকিনসন চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন হেইলি স্টাইনফিল্ড। প্রতিটি সিজনে ১০টি পর্ব করে মোট ৩০টি পর্ব রয়েছে সিরিজটিতে। প্রতিটি পর্বের নাম ধার করা হয়েছে এমিলি ডিকিনসনের একেকটি কবিতা থেকে। যেমন: কোনো পর্বের নাম ‘আই ফেল্ট আ ফানেরাল ইন মাই হেড’, আবার কোনোটির নাম ‘আই এম নোবোডি–হু আর ইউ’। যেটি ছিল একেবারেই নতুন ঘরানার এবং অনন্য তো অবশ্যই।

 ‘ডিকিনসন’-এর সবগুলো এপিসোড দেখা যাচ্ছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম অ্যাপল টিভি প্লাসে। দেখা শুরু করলে আশা করি পস্তাবেন না। 

টম ক্রুজের নতুন সিনেমা ‘ডিগার’

প্যারামাউন্টের ১০৮ বিলিয়নের প্রস্তাবে না, নেটফ্লিক্সের ৭২ বিলিয়নের চুক্তিই চায় ওয়ার্নার ব্রস

হলিউডের পরিচালক ও তাঁর স্ত্রীর রহস্যময় মৃত্যু, ছেলে গ্রেপ্তার

প্লাস্টিক সার্জারি নিয়ে আপত্তি কেট উইন্সলেটের

ওয়ার্নার ব্রাদার্স বিক্রি: নেটফ্লিক্সের বিপরীতে প্যারামাউন্টের আকাশছোঁয়া প্রস্তাব, নেপথ্যে ট্রাম্প-কুশনার

নেটফ্লিক্সের ওয়ার্নার ব্রাদার্স কেনায় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প

ওয়ার্নার ব্রাদার্স কিনে সমালোচনার মুখে নেটফ্লিক্স

নেটফ্লিক্সের দখলে যাচ্ছে হলিউড সাম্রাজ্য, বাদ সাধতে পারে রাজনৈতিক চক্রান্ত

৭২ বিলিয়ন ডলারে ওয়ার্নার ব্রাদার্সের সিনেমা ও স্ট্রিমিং ব্যবসা কিনছে নেটফ্লিক্স

অবশেষে জাস্টিন ট্রুডো-কেটি পেরির প্রেমের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এল, ইন্টারনেটে তোলপাড়