রুবি মূলত দামি একটা পাথর। এই রত্ন হীরার চেয়েও দুর্লভ। রুবিকে বাংলায় চুনি বলে। রক্তের মতো লাল হয় বহু মূল্যবান এই চুনি। আর এমন রঙে সুশোভিত এক পাখির নাম সাইবেরিয়ান রুবি থ্রোট বা সাইবেরিয়ান চুনিকণ্ঠী।
আকার–আকৃতিতে আমাদের দেশি দোয়েলের চেয়ে বড় নয়। নাম শুনেই বোঝা যায়, সুদূর সাইবেরিয়া থেকে ৬ হাজার ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে শীতকালে আমাদের দেশে উড়ে আসে ছোট্ট এই পাখি।
পাখির সন্ধানে ঘুরতে ঘুরতে বেশ কয়েকবারই এদের সঙ্গে দেখা হয়েছে। সাধারণত জলাভূমি, নদীচরের ঘাস কিংবা কাশবনের ঝোপে এরা বাসা বাঁধে। অন্য যেকোনো প্রাণী দেখলেই এমনভাবে লুকিয়ে পড়ে যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকলেও আর হদিস মেলে না। দূর থেকে ওদের ডাক অনুসরণ করে অপেক্ষায় থাকলে হয়তো একসময় অপূর্ব সুন্দর চুনিলাল গলায় গান গাইতে গাইতে সামনে চলেও আসতে পারে অনিন্দ্যসুন্দর এই পাখি।
পরিযায়ী এই পাখি আমাদের দেশে আসে মূলত তীব্র শীত এড়াতে আর খাদ্যের সন্ধানে। তিন থেকে চার মাস অবস্থান করে প্রজননের জন্য আবারও উড়ে যায় নিজ দেশে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, মিয়ানমার ও আশপাশের দেশগুলোয় পাখিটি দেখা যায়। তবে আমাদের দেশের জন্য সাইবেরিয়ার চুনিকণ্ঠী বিরল পরিযায়ী এক পাখি। অনেকের কাছে পাখিটি ‘লাল গলা বা গুম্পিগোরা’ নামেও পরিচিত।
পাখিটির দৈর্ঘ্য বড়জোর ১৫-১৭ সেন্টিমিটার। ডানা মেললে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২২-২৫ সেন্টিমিটারে। স্ত্রী-পুরুষভেদে পাখিটির চেহারা কিছুটা ভিন্ন। মূলত পুরুষ পাখির গলার মাঝখানেই থাকে উজ্জ্বল লাল রং, যা পাখিটির সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ওপর-নিচে স্পষ্ট চওড়া সাদা টান। অন্যদিকে, স্ত্রী পাখির গলা অস্পষ্ট সাদাটে। আছে বেগুনি রেখা। উভয়ের মাথা, পিঠ ও লেজ জলপাই-বাদামি। লেজ ঊর্ধ্বমুখী, এর তল সাদাটে। ঠোঁট কালো, গোড়ার দিকে ফ্যাকাশে। মূলত পুরুষ পাখিটির গলা চুনি পাথরের মতো লাল টকটকে হওয়ায় এর নাম রুবি থ্রোট বা চুনিকণ্ঠী।
এরা সাধারণত পোকামাকড় ও কীটপতঙ্গ ধরে খায়। ময়লার স্তূপ বা জমে থাকা লতাপাতায় ঠোঁট দিয়ে খুঁচিয়ে খাবার খুঁজে বেড়ায়। প্রজনন মৌসুম মে থেকে আগস্ট। এ সময় এরা বাসা বাঁধে সাইবেরিয়ার তাইগ্যা অঞ্চলে। সরাসরি ভূমিতে ঘাস, তন্তু, চিকন ডালপালা ও চুল পেঁচিয়ে বাসা বানায়। এরা ডিম পাড়ে ৪ থেকে ৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪ দিন। বাচ্চা ফুটে উড়ে যেতে আরও সময় লাগে দুই সপ্তাহ।