সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে এক তরুণকে কুপিয়ে হত্যার বীভৎস ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। ৩০ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, জিনস প্যান্ট পরিহিত উদোম গায়ের এক তরুণের হাত পেছন মোড়া করে বাঁধা, মুখও বাঁধা। তাঁকে গলা, ঘাড়ে কোপাচ্ছেন একজন। ভিডিওটিতে আরও কয়েকজনকে দেখা যাচ্ছে। এক্সে (সাবেক টুইটারে) ভিডিওটি টুইট করেছেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) সহযোগী অধ্যাপক আরিফা রহমান রুমা।
টুইটে তরুণটিকে ছাত্রলীগ কর্মী উল্লেখ করে করে আরিফা রহমান রুমা দাবি করেছেন, নরসিংদীর পৌর শহরের কাউরিয়াপাড়া ঈদগা গেটের সামনে ভিডিওর ঘটনাটি ঘটেছে। কথিত ওই ছাত্রলীগ কর্মীকে জামায়াতে ইসলামীর সন্ত্রাসীরা গলা কেটে হত্যা করেছে। তাঁর টুইটটি সাড়ে ১৮ হাজার বার দেখা হয়েছে। রিটুইট হয়েছে ১৮২ বার। একই ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওতে থাকা তরুণ যুবলীগ নেতা। তাঁকে প্রকাশ্যে জবাই করে হত্যা করেছে জামায়াত–বিএনপির সন্ত্রাসীরা।
টুইট বা ফেসবুকের পোস্টগুলোর কোথাও এই তরুণের নাম–পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি।
ঘটনাটির সত্যতা যাচাইয়ে ভিডিওটি থেকে কিছু কি–ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলে ২০১৯ সালের ১৯ জুনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশে সম্প্রতি জামায়াত–বিএনপির হাতে হত্যার শিকার দাবিতে ভাইরাল একই তরুণের একটি ছবি পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, লাতিন আমেরিকার দেশ প্যারাগুয়ের সান পেদ্রো দে ইকুয়ামান্দিউ আঞ্চলিক কারাগারে ওই সময় বন্দীদের মধ্যে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটে। কারাগারটিতে বন্দী ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় অপরাধী সংগঠন প্রাইমার কমান্ডো দ্য ক্যাপিটালের (পিসিসি) সদস্যরা একই কারাগারে বন্দী প্রতিপক্ষ সংগঠন রোটেলা ক্ল্যানের সদস্যদের ওপর ছুরি, চাকু দিয়ে হামলা চালায়। রোটেলা ক্ল্যান প্যারাগুয়ের সন্ত্রাসী ও মাইক্রো ড্রাগ পাচারকারী সংগঠন। এ হামলায় রোটেলা ক্ল্যানের অন্তত ১০ জন নিহত হন। এর মধ্যে অন্তত ৬ জনের দেহ খণ্ড–বিখণ্ড করা হয়।
স্পেনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম পেরিওদিস্তা ডিজিটালের ওয়েবসাইটেও সম্প্রতি বাংলাদেশের ঘটনা দাবিতে ভাইরাল ভিডিওর একই তরুণের একাধিক ছবি পাওয়া যায়। ছবিগুলো সম্পর্কে পেরিওদিস্তা ডিজিটালের বর্ণনার সঙ্গে ডেইলি মেইলের বর্ণনার মিল রয়েছে।
ছবিটি সম্পর্কে আলাদা আলাদা বর্ণনা পাওয়া গেলেও এসব প্রতিবেদন থেকে এটি নিশ্চিত, অজ্ঞাত ছাত্রলীগ বা যুবলীগ কর্মীকে নরসিংদীতে কুপিয়ে মেরে ফেলার দাবিতে ভাইরাল ভিডিওটি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কোনো ঘটনার নয়।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) নরসিংদী পৌর শহরের কাউরিয়াপাড়া ঈদগার সামনে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত ওই যুবকের নাম হানিফ মিয়া (৩৫)। তিনি পৌর শহরের চৌয়ালা এলাকার আব্দুল কাদেরের ছেলে। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা ছিল। হানিফ মিয়া হত্যার সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। হানিফ মিয়া হত্যার সঙ্গে জড়িত তাঁর দুই মামাতো ভাই নাঈম ও নাদিম।
নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নাঈম ও নাদিম একই এলাকার মৃত হাবিব উল্লাহর ছেলে। দেড় মাস আগে হানিফ তাঁর মামা মো. হাবিব উল্লাহকে পারিবারিক কলহের জেরে রড দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেন। বাবা হত্যার প্রতিশোধ নিতে হানিফকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা পুলিশের। এ নিয়ে আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন পড়ুন—
(প্রতিবেদনটির কিছু তথ্য হালনাগাদ করা হয়েছে)