ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
সম্প্রতি দেশে চলমান ধর্মীয় সহিংসতার অসংখ্য ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এর মধ্যে ভাইরাল হওয়া বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও পুরোনো, ভিন্ন ঘটনার, এমনকি বাংলাদেশেরও নয়।
ফেসবুকে বেশ কিছু আইডি, পেজ ও গ্রুপ থেকে একটি ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, কুমিল্লায় এক মসজিদে ঢুকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা কোরআন শরিফ ছিঁড়ে ফেলেছে। ছবিটিতে মসজিদের ভেতরে মেঝেতে ছড়িয়ে থাকা কিছু বইয়ের পাতা (কোরআনের ছেঁড়া পৃষ্ঠা বলে দাবি) ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
ওই পোস্টগুলোতে দাবি করা হচ্ছে, কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের ধান্যদৌল গ্রামের বাজারে অবস্থিত মসজিদে গভীর রাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু লোক দরজার তালা ভেঙে ঢুকে পড়ে। এ সময় চারটি জানালার গ্লাস ও কোরআন শরিফ রাখার র্যাক ভাঙচুর করে তারা।
ফ্যাক্টচেক
ভাইরাল হওয়া ছবিটি অনুসন্ধান করে দেখা যায়, মসজিদে সহিংসতার ঘটনাটি ২০১৬ সালের। ২০১৬ সালের ১৯ অক্টোবর কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় একটি মসজিদে কোরআন শরিফ বিনষ্ট করার ঘটনা ঘটে। তবে ওই ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর জড়িত থাকার প্রমাণ মেলেনি। বরং ওই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ব্যক্তি মুসলিম ধর্মাবলম্বী।
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায়, একই দাবিতে এর আগেও ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে। ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর বাংলাদেশ পুলিশের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজের একটি পোস্ট থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, ঘটনাটি ২০১৬ সালের ১৯ অক্টোবরের। ওই ঘটনায় একটি মামলা হয়েছিল। মামলার নম্বর-১১/২১৬। মামলার আসামি মো. জাহাঙ্গীর আলমকে (৩৮) পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করে। মামলাটি আদালতে বিচারাধীন বলে ওই পোস্টে জানানো হয়।
ফ্যাক্টচেক-বিষয়ক ওয়েবসাইট বিডি ফ্যাক্টচেকের ফেসবুক পেজে ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত বেশ কিছু প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট পাওয়া যায়।
কুমিল্লার স্থানীয় সংবাদমাধ্যম কুমিল্লার কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গ্রেপ্তার জাহাঙ্গীর মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত।
সিদ্ধান্ত
সম্প্রতি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের অভিযুক্ত করে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার মসজিদে হামলার দাবিতে ভাইরাল হওয়া ছবিটি ২০১৬ সালের। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত জাহাঙ্গীরকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জাহাঙ্গীর মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত ছিলেন। ভাইরাল হওয়া ছবির ঘটনার সঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়ের কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে, তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা—factcheck@ajkerpatrika.com