হোম > বিশ্ব > আফ্রিকা

শীতকালীন পার্টিতে সবাই কেন নাইজেরিয়ায় ছুটছে

অনলাইন ডেস্ক

আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২২: ৫৪
নাইজেরিয়ার লাগোসে ক্যালাবার কার্নিভালের একটি দৃশ্য। ছবি: এএফপি

ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির প্রথম অংশ। এই সময়টিতেই উদ্দাম উৎসবের এক নগরীতে পরিণত হয় নাইজেরিয়ার বৃহত্তম শহর লাগোস। এই উৎসবের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডেটি ডিসেম্বর’। শব্দটি মূলত ‘ডার্টি ডিসেম্বর’ থেকেই এসেছে।

নাইজেরিয়ার এই উৎসব এখন সারা বিশ্বের ভ্রমণপিপাসুদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। বিশেষ করে তরুণ পর্যটকদের কাছে। উৎসবের সময় নাচ, গান, খাবার, ফ্যাশন এবং অসাধারণ উচ্ছ্বাস মিলেমিশে এক অনন্য অভিজ্ঞতা তৈরি করে লাগোসে।

অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে—এ ধরনের একটি উৎসব কীভাবে আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠল?

জাতিসংঘের তথ্যমতে, নাইজেরিয়ার জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই এখন ২৫ বছরের নিচে। ডেটি ডিসেম্বরে তাই দেশটির যুবসমাজের অসীম শক্তি এবং সৃজনশীলতা ফুটে ওঠে।

আরেকটি বিষয় হলো—নাইজেরিয়ার যুব সমাজের একটি বৃহৎ অংশ বিদেশে কাজ করে। বছরের ওই নির্দিষ্ট সময়টিতে তাঁদের অনেকেই দেশে যান ঘুরতে। তাঁদের পকেটে থাকে তখন প্রচুর অর্থ। এই অর্থ খরচ করে তাঁরা তাঁদের দেশে ফেরাকে উদ্‌যাপন করেন। ফলে জমে ওঠে লাগোসের উৎসবও।

এই উৎসবে শীর্ষস্থানীয় আফ্রোবিটস তারকারা পারফর্ম করেন। বুর্না বয়, উইজকিড, আয়রা স্টার এবং টেমসের মতো তারকারা তাঁদের গান ও সুর দিয়ে উৎসবকে জীবন্ত করে তোলেন।

এ ছাড়া ক্যালাবার কার্নিভালও এই উৎসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি আফ্রিকার বৃহত্তম ‘রাস্তার উৎসব’ নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে রঙিন এবং বৈচিত্র্যময় পোশাকে তরুণীরা নেচে গেয়ে শোভাযাত্রা করেন।

এবারের উৎসবে আয়রা স্টারের পরিবেশনা। ছবি: এএফপি

এই সময়ের আয়োজনগুলোতে ‘কালচার-এফএম’-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসে স্থানীয় সৃজনশীলতা এবং আফ্রিকার গানের বৈচিত্র্যকে উদ্‌যাপন করার জন্য। এবারের উৎসবে কালচার-এফএম লাগোসের ঐতিহ্যবাহী সুরুলেরে এলাকায় একটি ব্লক পার্টির আয়োজন করেছিল। সেখানে আইকনিক হলুদ মিনিবাসের ওপর ডিজে বুথ স্থাপন করা হয় এবং স্থানীয় শিল্পী অক্সলেডের পরিবেশনা দর্শকদের মুগ্ধ করে।

ডেটি ডিসেম্বর শুধু বিনোদন নয়, এটি নাইজেরিয়ার অর্থনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে রেস্তোরাঁ, হোটেল এবং স্থানীয় ব্যবসাগুলোতে ভিড় বাড়ে। এতে বিপুল আয়ও হয়। প্রবাসীদের দেশে ফেরা এবং পর্যটকদের আগমন দেশটির অর্থনৈতিক কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।

সিনথিয়া এনিওলা ওয়েনেইন যুক্তরাজ্যে বসবাস করলেও প্রতি বছরই একবার তাঁর নিজের দেশ নাইজেরিয়ায় ঘুরতে যান। এবারের ডেটি উৎসবে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষ এখানে আনন্দ করতে আসে, যা অর্থনীতিতে টাকার প্রবাহ বাড়ায় এবং নতুন কাজের সুযোগ তৈরি করে। এটি দেখতে সত্যিই অসাধারণ।’

দেশি-বিদেশি পর্যটকের সমাগম ঘটে এই উৎসবে। ছবি: সংগৃহীত

তবে ডেটি ডিসেম্বরের কিছু বিড়ম্বনাও রয়েছে। উৎসবের সময় ফ্লাইট এবং হোটেলগুলোর ভাড়া আকাশচুম্বী হয়ে যায়। লাগোসের ভয়ানক যানজট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। তবু এই উৎসব পশ্চিম আফ্রিকাকে আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে।

এটি শুধুমাত্র উৎসব নয়, বরং নাইজেরিয়ার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং অদম্য চেতনাকে উদ্‌যাপন করে। এই আয়োজন আফ্রিকার গৌরব উদ্‌যাপনের পাশাপাশি স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে গভীর সংযোগ স্থাপন করে। এটি একটি আন্দোলনও বটে, যা আফ্রিকার শ্রেষ্ঠত্ব এবং ঐক্যকে তুলে ধরে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা factcheck@ajkerpatrika.com

চাদের প্রেসিডেন্টের বাসভবনে হামলা, নিহত ১৯

কেনিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভে নির্বিচার গুম-খুন, যেভাবে ধামাচাপা দিয়েছে পুলিশ

জিম্বাবুয়েতে মৃত্যুদণ্ডের বিধান বাতিল