হোম > বিশ্ব > মধ্যপ্রাচ্য

গাজাবাসীকে মরক্কো ও সোমালিয়ায় স্থানান্তর করতে চান ট্রাম্প

অনলাইন ডেস্ক

উপকূলীয় অঞ্চলে গাজাবাসীদের ভিড়। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন গাজাবাসীদের পুনর্বাসনের জন্য তিনটি সম্ভাব্য এলাকা বিবেচনা করছে। এলাকাগুলো হলো—মরক্কো এবং সোমালিয়ার পুন্টল্যান্ড ও সোমালিল্যান্ড। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুসালেম পোস্ট দেশটির সম্প্রচারমাধ্যম এন ১২-এর প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে।

সম্প্রতি ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক শেষে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র পুনর্বাসন করার পর যুক্তরাষ্ট্র এই ভূখণ্ডের ‘দখল নেবে’ এবং ‘মালিক হবে’। গাজার জন্য এক ব্যতিক্রমী পুনর্নির্মাণ পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়ে দাবি করেছেন, গাজাকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরায়’ এ পরিণত করা হবে।

হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প জানান, তাঁর প্রশাসন গাজায় অর্থনৈতিক উন্নয়নের নেতৃত্ব দেবে, যা এই অঞ্চলের জনগণের জন্য ‘অসীম সংখ্যক চাকরি ও বাসস্থান’ নিশ্চিত করবে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র গাজা উপত্যকার দখল নেবে এবং সেখানে আমরা কাজ করব। আমরা মালিক হব।’ তিনি আরও জানান, ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবন পরিষ্কার করা এবং বিপজ্জনক অবিস্ফোরিত বোমা ও অন্যান্য অস্ত্র অপসারণের দায়িত্ব তাঁর প্রশাসন নেবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র গাজার ওপর দীর্ঘমেয়াদি মালিকানা প্রতিষ্ঠা করবে। এটি হালকাভাবে নেওয়া সিদ্ধান্ত নয়। আমি যাদের সঙ্গে কথা বলেছি, সবাই এই ধারণাকে পছন্দ করে যে, যুক্তরাষ্ট্র এই জমির মালিক হবে, এটিকে পুনর্নির্মাণ করবে এবং হাজারো চাকরি তৈরি করবে। বিষয়টি অসাধারণ কিছু হবে।’

আর এ লক্ষ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম দিকে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, গাজাবাসীদের একটা বড় অংশকে জর্ডান ও মিসরকে গ্রহণ করতে বলবেন তিনি। তবে আম্মান এবং কায়রো তাঁর বক্তব্যের পরপরই এর তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে। দেশ দুটি ট্রাম্পের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করার পর গাজার ফিলিস্তিনিদের মরক্কো ও সোমালিয়ায় স্থানান্তরের পরিকল্পনার বিষয়টি সামনে এল।

এ বিষয়ে এন ১২ এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন গাজার বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের জন্য মরক্কো, পুন্টল্যান্ড এবং সোমালিল্যান্ড অঞ্চলগুলোকে বিবেচনা করছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই তিনটি অঞ্চলের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ মিল হলো, এগুলো মার্কিন সমর্থনের জন্য যথেষ্ট নির্ভরশীল। সোমালিল্যান্ড ও পুন্টল্যান্ড দীর্ঘদিন ধরে সোমালিয়া থেকে স্বাধীন হয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে মরক্কো পশ্চিম সাহারায় নিজের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক ও সামরিক সহায়তা চায়।

এর আগে, ট্রাম্প ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, তাঁর মতে, জর্ডান ও মিসর গাজাবাসীদের পুনর্বাসনের ব্যাপারে তাঁকে না বলবে না। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের সময় এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প বলেন, ‘ওরা আমাকে না বলবে না। আমি গাজার সব বাসিন্দাকে সরিয়ে নিতে চাই। এটি ঘটবেই।’

ট্রাম্প এর আগে এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, গাজা উপত্যকার বর্তমান পরিস্থিতি কখনোই কার্যকর হয়নি। তিনি বলেন, ‘গাজার ব্যাপারটা কখনোই কাজ করেনি। আমি গাজার বিষয়ে অনেকের থেকে আলাদাভাবে ভাবি। আমি মনে করি, তাদের ভালো, নতুন, সুন্দর একটি জায়গা পাওয়া উচিত। আমরা কিছু লোককে অর্থায়নে যুক্ত করব, জায়গাটা গড়ে তুলব, এটি বাসযোগ্য ও উপভোগ্য করে তুলব।’

তবে এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন একে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে যে গাজার ভবিষ্যৎ ‘কূটনৈতিক আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে নির্ধারিত হওয়া উচিত, একতরফা পদক্ষেপের মাধ্যমে নয়।’

জার্মানি, ফ্রান্স এবং স্পেনসহ বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানালেনা বেয়ারবক সতর্ক করে বলেছেন, ‘গাজার বেসামরিক জনগণকে সরিয়ে নেওয়া হলে তা নতুন দুর্ভোগ ও নতুন ঘৃণার জন্ম দেবে।’

এদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোও এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। জর্ডান, মিসর, সৌদি আরব এবং কাতার সবাই এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে। জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইমান সাফাদি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উচ্ছেদে অংশ নেব না।’ অন্যদিকে, মিসর এই পরিকল্পনাকে জনমিতিক ও নিরাপত্তাগত উদ্বেগের কারণে প্রত্যাখ্যান করেছে।

এ ছাড়া, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই পরিকল্পনার কড়া সমালোচনা করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, গাজার জনগণকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা ‘জেনেভা কনভেনশনের লঙ্ঘন এবং জাতিগত নিধনের শামিল।’ তাদের মতে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে তা ‘বিপজ্জনক নজির’ স্থাপন করবে এবং ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের সুযোগ আরও বাড়িয়ে তুলবে।

ফিলিস্তিনি নেতারাও এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। তাঁরা সতর্ক করে বলেছেন, এই পদক্ষেপ ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের ওপর ‘সরাসরি আঘাত’ হানবে এবং এর ফলে পুরো মধ্যপ্রাচ্য কয়েক দশক ধরে অস্থিতিশীলতার শিকার হতে পারে।

তবে যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রতিবেদনের সত্যতা নিশ্চিত বা অস্বীকার করেনি। পাশাপাশি, মরক্কো, পুন্টল্যান্ড ও সোমালিল্যান্ডের পক্ষ থেকেও এখনো কোনো স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া আসেনি।

এরই মধ্যে, এই পরিকল্পনার ‘বাস্তবায়নের সম্ভাবনা ও যৌক্তিকতা’ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সমালোচকেরা বলছেন, একটি সম্পূর্ণ জনসংখ্যাকে অপরিচিত ভূখণ্ডে পুনর্বাসন করা আদৌ সম্ভব কি না এবং এই অঞ্চলগুলো আসলেই এত বিপুলসংখ্যক বাস্তুচ্যুত মানুষকে গ্রহণ করতে সক্ষম কি না—তা নিয়ে গুরুতর সন্দেহ রয়েছে।

বাড়ি থেকে বিমানবন্দর, ১৫ মিনিটের উড়ন্ত ট্যাক্সি সেবা চালু করছে ‘ভার্জিন’

গরম কফিতে দগ্ধ ডেলিভারি ম্যান, ৬০৬ কোটি টাকা দিতে হবে স্টারবাকসকে

ইয়েমেনে মার্কিন বিমান হামলা, প্রতিশোধের হুমকি হুতিদের

ডিজিটাল থেকে কেন হঠাৎ কাগুজে মুদ্রায় ফিরছে সুইডেন, নরওয়ে

বোয়িংয়ের ওপর থেকে আস্থা হারাচ্ছে মার্কিনরা

ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটানো যুদ্ধটির অজানা কাহিনি

সন্তানদের নাম নেই হ্যাকম্যানের উইলে, কে পাবে ৯৭১ কোটি টাকার সম্পত্তি

নর্থ মেসিডোনিয়ায় নাইটক্লাবে অগ্নিকাণ্ড, নিহত ৫১

স্কুলশিক্ষার্থীদের ক্যামেরায় উঠে এল শ্রমজীবী বাবা–মায়ের সংগ্রামী জীবন

কনুই উঁচিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্টা আক্রমণের বার্তা দিচ্ছেন কানাডীয়রা