Ajker Patrika

স্কুলশিক্ষার্থীদের ক্যামেরায় উঠে এল শ্রমজীবী বাবা–মায়ের সংগ্রামী জীবন

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৫, ১৭: ৫৭
তামাক কারখানায় কর্মরত বৃদ্ধা। ছবি: সংগৃহীত
তামাক কারখানায় কর্মরত বৃদ্ধা। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি ভারতের চেন্নাইয়ের এগমোর জাদুঘরে আয়োজন করা হয় এক বিশেষ প্রদর্শনীর। ‘দ্য আনসিন পারসপেক্টিভ’ শীর্ষক এই প্রদর্শনীতে স্থান পায় ভারতের শ্রমজীবী মানুষের অসাধারণ কিছু ছবি। যে ছবিগুলো ক্যামেরায় ধারণ করেছে ওই শ্রমিকদের সন্তানেরাই!

তামিলনাড়ু রাজ্য সরকারের বিশেষ প্রকল্প ‘স্কুল এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট’–এর আওতায় সরকারি একটি স্কুলের ৪০ জন শিক্ষার্থীকে দিয়ে তোলানো হয় ছবিগুলো। শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাবা–মা কিংবা নিজ এলাকার কোনো শ্রমজীবী মানুষের অর্থপূর্ণ ছবি তুলে আনতে বলা হয় তাদের। এই অ্যাসাইনমেন্টের আওতায় বিভিন্ন খাতের শ্রমিকদের কয়েক হাজার ছবি তোলে ওই ৪০ শিক্ষার্থী। আর সেগুলো থেকেই বাছাইকৃত ছবি প্রদর্শিত হয় চেন্নাই জাদুঘরে।

ওই শিক্ষার্থীদের একজন রাশমিথা টি। সে ছবি তুলেছে এক বৃদ্ধার। যিনি একটি তামাক কারখানায় কাজ করেন। খালি হাতে বানান ভারতের ঐতিহ্যবাহী সিগারেট ‘বিড়ি’। রাশমিথা বলে, ‘এই শ্রমিকদের কথা কেউ জানে না। তাঁরা কী ধরনের কাজ করেন, তাঁদের কত কষ্ট করতে হয়, তা কখনোই সামনে আসে না। কিন্তু খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এই কাজ। দীর্ঘ সময় তামাক কারখানায় থাকার কারণে ফুসফুসের রোগে ভোগেন তাঁরা। এত ভয়ংকর ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে হাড়ভাঙা খাটুনির বিপরীতে তাঁরা মজুরি পান খুবই সামান্য। ১ হাজারটা সিগারেটের জন্য মজুরি দেওয়া হয় ২৫০ রুপি। আমি চাই এই বিষয়গুলো সামনে আসুক।’

জয়রাজ এস নামের আরেক শিক্ষার্থী নিজের মায়ের ছবি তুলেছে, যিনি কাজ করেন ইটভাটায়। জয়রাজ বলেন, ‘আমার মা প্রায়শই বলেন, তাঁর হাতে, পায়ে, কোমরে ব্যথা। মাঝে মাঝে তো অজ্ঞানও হয়ে যান! সত্যি বলতে, মায়ের কাজের ছবি তোলার আগে কোনো দিন আমি বুঝিনি তাঁকে কতটা কঠোর পরিশ্রম করতে হয়! প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে উঠে কাজ যান তিনি।’

ইটভাটায় কাজ করছেন জয়রাজের মা। ছবি: সংগৃহীত
ইটভাটায় কাজ করছেন জয়রাজের মা। ছবি: সংগৃহীত

আরেক শিক্ষার্থী গোপিকা লক্ষ্মী ক্যামেরাবন্দী করেছে নিজের বাবাকে। অসুস্থ শরীর নিয়ে ভ্যানে করে সবজি নিয়ে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন তিনি। অথচ এই শারীরিক অবস্থায় তাঁর বিশ্রামে থাকার কথা। একটা কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সপ্তাহে দু’দিন ডায়ালাইসিস করাতে হয়। কিন্তু অভাব অনটনের কারণে ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই গোপিকার বাবার। গোপিকা বলে, ‘শরীরের এমন অবস্থার পরও বাবা আমাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেন। আমার চোখে তিনি একজন হিরো!’

বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবজি বিক্রি করছেন গোপিকার বাবা। ছবি: সংগৃহীত
বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবজি বিক্রি করছেন গোপিকার বাবা। ছবি: সংগৃহীত

এসব শিক্ষার্থীর সবার বয়স ১৩ থেকে ১৭ বছর। তামিলনাড়ু সরকারের বিশেষ এক প্রকল্পের আওতায় ফটোগ্রাফিসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলা শেখানো হচ্ছে তাদের। তামিলনাড়ুভিত্তিক এনজিও নীলাম ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও তামিলনাড়ু স্কুল এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের প্রধান মুহথামিজ কালাইভিঝি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল করে তুলতেই এমন অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হয়েছে। তারা নিজেদের আশপাশের শ্রমজীবী মানুষের জীবনকে দেখেছে এবং বুঝতে পেরেছে কতটা পরিশ্রম ওই মানুষগুলোকে করতে হয়। আর এই বুঝতে পারাটাই সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল হয়ে ওঠার প্রথম ধাপ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএসএমএমইউতে হেনস্তার ঘটনা নিয়ে যা বললেন প্রাণ গোপালের মেয়ে ডা. অনিন্দিতা

বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছেড়ে আমার জামাইকে নিয়ে আসব: গ্রেপ্তার ছোট সাজ্জাদের স্ত্রী

স্বাধীনতা দিবসে কুচকাওয়াজ কেন হচ্ছে না, ব্যাখ্যা দিলেন প্রেস সচিব

জামিনে বেরিয়েই ছদ্মনামে হাসপাতালে ভর্তি হন ‘ডিবি হেফাজতে’ মৃত এজাজ

নিউজিল্যান্ডের কাছে বাজে হারের ‘বদলা’ নেবেই পাকিস্তান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত