ক্ষমতায় থাকাকালে বিখ্যাত বামিয়ান বুদ্ধমূর্তি ডিনামাইট দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল তালেবান। তারাই এখন সেই ফাঁকা পাথুরে গুহা পাহারা দিতে নিয়োজিত করেছে বন্দুকধারী।
আফগানিস্তানের বামিয়ান প্রদেশের বুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভগুলো প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ২০০১ সালে তালেবান শাসনামলে এর অধিকাংশই ধ্বংস করা হয়। এই সময় কঠোর ইসলামি শরিয়া আইন জারি করেছিল তালেবান। টেলিভিশন নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি নারীদের জন্য কঠোর পর্দার বিধান এবং খেলাধুলা, গানবাজনার মতো বিনোদনও নিষিদ্ধ করা হয়।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শত শত তালেবান কর্মী টানা তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। তারা পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা উঁচু মূর্তিগুলো ধূলিসাৎ করে দেন। ওই সময় এই ঘটনা বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
পাথরে স্থাপিত ব্রোঞ্জের ফলকে এখনো লেখা আছে, ‘২০০১ সালে তালেবানের হাতে বুদ্ধকে ধ্বংস করা হয়েছিল’।
পেন স্টেট এবিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ আলী এ ওলোমির মতে, ‘বুদ্ধমূর্তি ধ্বংসের অন্যতম কারিগর’ ছিলেন আফগানিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ।
বিশ্ব ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে এটি বড় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত কি-না বা এই মূর্তিগুলো এভাবে ধ্বংস করার কাজটি কেমন- এমন প্রশ্নে তালেবানের তরুণ সদস্য সাইফুর রহমান মোহাম্মদী বার্তা সংস্থা এএফপির সাংবাদিকদের সামনে কিছুটা বিব্রত বোধ করেন।
সম্প্রতি বামিয়ান প্রদেশের সাংস্কৃতিক বিষয়ক কার্যালয়ে নিযুক্ত হয়েছে মোহাম্মদী। তিনি বলেন, ‘আচ্ছা...আমি সত্যিই মন্তব্য করতে পারছি না।’
তিনি এএফপিকে বলেন, তখন আমি খুব ছোট ছিলাম। যদি তারা তা এটা করেই থাকেন, তাহলে ইসলামিক আমিরাতের কাছে নিশ্চয়ই কোনো যুক্তি ছিল। কিন্তু এখন যা নিশ্চিত তা হলো, এখন আমরা আমাদের দেশের ঐতিহাসিক ঐতিহ্য রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটা আমাদের দায়িত্ব।
মোহাম্মদী বলেন, তিনি সম্প্রতি ইউনেসকোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তালেবান ক্ষমতা দখলের পর যারা বিদেশে পালিয়ে গিয়েছিল তাঁদের আফগানিস্তানে ফিরে আসতে অনুরোধ করা হয়েছে। তাদের পূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়ার নিশ্চয়তা আমরা দিচ্ছি।
স্থানীয় কর্মকর্তা এবং ইউনেসকোর সাবেক এক কর্মী এএফপিকে বলেন, তালেবানদের দখলের পর কাছাকাছি গুদামে সংরক্ষিত প্রায় এক হাজার অমূল্য নিদর্শন চুরি বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে মোহাম্মদী বলেন, আমি নিশ্চিত যে লুটপাট হয়েছে, কিন্তু এটা আমাদের আসার আগেই ঘটেছে। আগের সরকার পালিয়ে যাওয়ার পর যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল তখনই এই চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেন তিনি।
মোহাম্মদী বলেন, আমরা তদন্ত করছি এবং সেগুলো ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।
উল্লেখ্য, বামিয়ান উপত্যকাটি হিন্দু কুশ পর্বতমালার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে উৎপত্তির পর বৌদ্ধধর্মের দূর পশ্চিমাঞ্চলে পৌঁছানোর নিদর্শন এখানে পাওয়া যায়। শতাব্দী ধরে ফারসি, তুর্কি, চীনা এবং গ্রিক প্রভাবের এক সম্মিলন এখানে লক্ষণীয়। এসব নিদর্শনের বেশির ভাগই অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে।
আফগানিস্তানে ফরাসি প্রত্নতাত্ত্বিক প্রতিনিধিদলের পরিচালক ফিলিপ মারকুইস বলছেন, দেশের অর্থনীতি নড়বড়ে। তালেবান বুঝতে পারছে ঐতিহ্য রক্ষা তাঁদের নিয়মিত আয়ের একটি উৎস হতে পারে।
ইউনেসকো-সমর্থিত ২ কোটি ডলারের একটি প্রকল্পের অংশ হিসেবে একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং জাদুঘর উন্নয়নে শ্রমিকেরা কাজ করছেন বামিয়ানে। বর্তমানে ফ্রান্সে অবস্থানরত ফিলিপ বলছেন, এখন আমাদের দেখতে হবে এই উদ্যোগ কীভাবে কাজ করে। বর্তমান প্রশাসন চায় আমরা একসঙ্গে কাজ করতে ফিরে আসি। এটা বেশ নিরাপদ বলে মনে হচ্ছে।