গাজায় চলমান হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে বৈশ্বিক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দুটি সংগঠন—নিউইয়র্ক হেলথকেয়ার ওয়ার্কার্স ফর প্যালেস্টাইন এবং ডক্টর্স অ্যাগেইনস্ট জেনোসাইড। আজ সোমবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের প্রধান কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করার কথা রয়েছে। কর্মসূচির নাম—‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’।
এদিকে, ফিলিস্তিনভিত্তিক সংগঠন ‘দ্য ন্যাশনাল অ্যান্ড ইসলামিক ফোর্সেস ইন প্যালেস্টাইন’ বিশ্বজুড়ে সর্বাত্মক অবরোধের ডাক দিয়েছে। ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল আনটিল জেনোসাইড স্টপস’—শিরোনামে আজ সোমবার থেকে কাজ ও স্কুল বন্ধ রেখে আন্দোলনে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
গ্লোবাল স্ট্রাইকের বিষয়ে হেলথকেয়ার ওয়ার্কার্স ফর প্যালেস্টাইন ইনস্টাগ্রামে জানিয়েছে—গাজায় চলমান গণহত্যা বন্ধে আমরা এই বৈশ্বিক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছি। লক্ষ্যে পৌঁছাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থল বন্ধ রাখা হবে। পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এখনই।
ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা ও ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থী–অ্যাক্টিভিস্টদের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের দমন–পীড়নের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে রাস্তায় নেমেছে হাজারো মানুষ। গত শনিবার ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত এক বিশাল সমাবেশে অংশ নেয় তিন শতাধিক সংগঠনের কর্মীরা। এতে প্যালেস্টাইন ইয়ুথ মুভমেন্ট, দ্য পিপলস ফোরাম, জিউস ফর পিস এবং অ্যানসার কোয়ালিশনের মতো অ্যাডভোকেসি গ্রুপগুলো নেতৃত্ব দেয়।
এ ছাড়া ‘ট্রাম্পের পদত্যাগ চাই’, ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’, ‘আমাদের কোনো রাজা নেই’—শনিবার এমন স্লোগানে দিনভর উত্তাল ছিল যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর উপদেষ্টা ধনকুবের ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে দেশটির ৫০টি অঙ্গরাজ্যের সব কটিতে বিক্ষোভ করেন লাখ লাখ মানুষ। ইউরোপের কয়েকটি দেশেও রাজপথে নেমেছেন বিক্ষোভকারীরা। ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতা হরণ করছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপী এ বিক্ষোভের নাম দেওয়া হয়েছে ‘হ্যান্ডস অফ’। অধিকারকর্মীদের প্রায় দেড় শ গোষ্ঠী এ বিক্ষোভে অংশ নেয়। ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক, টেক্সাস, ফ্লোরিডা, কলোরাডো, মিনেসোটা, ক্যারোলাইনা, ডেলাওয়ারসহ সব অঙ্গরাজ্যের প্রধান শহরগুলোয় ১ হাজার ৪০০ টির বেশি বিক্ষোভ-সমাবেশের আয়োজন করা হয়। বিক্ষোভে যোগ দেওয়া ‘ইনডিভিজিবল’ নামের একটি সংগঠনের তথ্যমতে, শনিবারের বিক্ষোভে যোগ দিতে প্রায় ছয় লাখ মানুষ সই করেন।
ওয়াশিংটন ডিসিতে বিক্ষোভকারীরা ৩ নম্বর স্ট্রিট এনডব্লিউ ও পেনসিলভানিয়া অ্যাভিনিউ এনডব্লিউ–এর চৌরাস্তায় জড়ো হয়ে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) সদর দপ্তরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মিছিল করে। তারা গ্রেপ্তার ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থী ও শিক্ষাবিদদের মুক্তির দাবি জানায়, যার মধ্যে ফিলিস্তিনি অধিকারকর্মী মাহমুদ খলিল ও তুর্কি শিক্ষার্থী রুমেইসা ওজতুর্ক অন্যতম।
বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা গাজায় নিহত শিশুদের ছবি, প্ল্যাকার্ড ও পোস্টার প্রদর্শন করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের ওপর দমন–পীড়নের নিন্দা জানান।
এছাড়া, গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে গতকাল রোববার মরক্কোর বিভিন্ন শহরে হাজারো মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। রাজধানী রাবাতে আয়োজিত এই বিক্ষোভ ছিল সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বড় জনসমাগমগুলোর একটি। বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি পতাকা পদদলিত করেন, হামলায় নিহত হামাস নেতাদের ব্যানার বহন করেন এবং বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের ছবির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি যুক্ত করে পোস্টার প্রদর্শন করেন।
মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার অন্যান্য দেশেও একই ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। এসব কর্মসূচিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিন্দা ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করা হয়।
বিক্ষোভকারীরা গাজার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের তীব্র সমালোচনা করেন। বিশেষ করে গাজার পুনর্গঠনের নামে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের প্রস্তাবকে তাঁরা জাতিগত নির্মূলের পরিকল্পনা হিসেবে আখ্যা দেন, যা আরব দেশগুলোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোরও নিন্দার মুখে পড়েছে।
এদিকে আজ সোমবার বাংলাদেশেও ধর্মঘট ও সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ।