অর্থপাচারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান চালিয়েছে সিঙ্গাপুরের পুলিশ। নগদ অর্থসহ বিদেশিদের ১০০ কোটি ডলারের সম্পদ জব্দ করেছে পুলিশের বিশেষ বাহিনী। এই ঘটনায় এক নারীসহ ১০ বিদেশিকে গ্রেপ্তার করে বুধবার রাতে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংবাদমাধ্যম স্ট্রেইটস টাইমস এক প্রতিবেদনে এসব জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই বিদেশিদের সবার বয়স ৩১ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যে। তাঁদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি, অর্থপাচার ও গ্রেপ্তার প্রতিহত করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ আছে। বিদেশিদের এই দলটি ভালো মানের বাংলো (জিসিবি) ও উন্নত কনডোমিনিয়ামে থাকতেন। সবারই বিলাসবহুল গাড়ি আছে।
পুলিশ বলছে, গতকাল মঙ্গলবার সন্দেহভাজন মুদ্রা পাচারকারীদের ধরতে সিঙ্গাপুরজুড়ে অভিজাত আবাসিক এলাকাগুলোতে একসঙ্গে অভিযান চালানো হয়। এর মধ্যে ট্যাংলিন, বুকিত তিমাহ, অর্চার্ড রোপ, সেনটোসা ও রিভার ভ্যালি রয়েছে।
আজ বুধবার এক বিবৃতিতে পুলিশ বলেছে, অভিযানে ৪০০টিরও বেশি কর্মকর্তা ছিলেন। এর মধ্যে দেশটির অপরাধ তদন্ত বিভাগ, বাণিজ্যিক বিষয়ক বিভাগ (সিএডি), স্পেশাল অপারেশন কমান্ড বা দাঙ্গা পুলিশ, এবং পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা ছিলেন।
পুলিশ বলেছে, ৯৪টি সম্পত্তি এবং ৫০টি গাড়ির মালিকানা বাতিল করা হয়েছে। যার মোট আনুমানিক মূল্য ৮১৫ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। একাধিক অলংকার এবং মদ ও মদের বোতলও জব্দ করা হয়েছে।
তদন্তের জন্য এবং অর্থপাচার রোধে পুলিশ ৩৫টিরও বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ১১০ মিলিয়ন ডলারের বেশি।
এ ছাড়া জব্দ করা হয়েছে ২৩ মিলিয়নের বেশি নগদ টাকা, ২৫০টিরও বেশি বিলাসবহুল ব্যাগ এবং ঘড়ি, ১২০টিরও বেশি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যেমন কম্পিউটার এবং মোবাইল ফোন, ২৭০টিরও বেশি গয়না, দুটি সোনার বার এবং ভার্চুয়াল সম্পদের তথ্যসহ ১১টি নথি।
সিঙ্গাপুরে অর্থপাচারের দায়ে গত পাঁচ বছরে ১৭টি সংস্থাকে জরিমানা করা হয়েছে। এসব অপরাধ দমনে বিভিন্ন ব্যাংকের সমন্বয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির কথা ভাবছে দেশটি।
তার কাছে চীন এবং কম্বোডিয়া থেকে জারি করা অন্যান্য বিদেশি পাসপোর্ট ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ লোকটির কাছ থেকে ২ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলারের বেশি নগদ অর্থ জব্দ করেছে এবং ১১৮ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের ১৩টি সম্পত্তি এবং পাঁচটি গাড়ির জন্য নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করেছে।
পুলিশ সেখান থেকে একাধিক অলংকার এবং মদ ও মদের বোতলও জব্দ করেছে এবং ৬ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারের বেশিসহ চারটি সম্পর্কিত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে।
এই অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া অন্যরা হলেন, ৪২ বছর বয়সী এক তুর্কি নাগরিক, ৪৪ ও ৪৩ বছর বয়সী দুই চীনা নাগরিক, ৪১ বছর বয়সী কম্বোডিয়ার নাগরিক, ৩৫ বছর বয়সী নি-ভানুয়াতুর নাগরিক, ৩৩ বছর বয়সী আরেক কম্বোডিয়ার নাগরিক, ৩৪ বছর বয়সী সাইপ্রাসের আরেক নাগরিক, ৩১ বছর বয়সী আরেক চীনা নাগরিক এবং ৩১ বছর বছর বয়সী আরেক কম্বোডিয়ার নাগরিক।
সিঙ্গাপুরের কমার্শিয়াল অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্টের (সিএডি) ডিরেক্টর ডেভিড চিউ বলেছেন, সিঙ্গাপুরকে এই ধরনের অপরাধের কেন্দ্র হওয়া থেকে রক্ষা করতে পুলিশ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের সঙ্গে কাজ করবে।
ডেভিড চিউ বলেন, ‘সিঙ্গাপুরকে অপরাধীরা আশ্রয়স্থল বানাতে পারবে না। আমাদের ব্যাংকিং খাত অপব্যবহারের ব্যাপারেও আমরা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। এই অপরাধীদের প্রতি আমাদের বার্তা সহজ— আমরা আপনার অপরাধ জানতে পারলে গ্রেপ্তার করবই। পাচার বা দুর্নীতি করে গড়া সম্পদ বাজেয়াপ্ত করব। আমরা আমাদের আইন অনুযায়ী আপনাদের মোকাবিলা করব।’
মনিটারি অথোরিটি অব সিঙ্গাপুরের (এমএএস) ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (আর্থিক তত্ত্বাবধান) মিসেস হো হার্ন শিন বলেছেন, সিঙ্গাপুর অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত। ফলে দেশটি অর্থপাচারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তবে আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তড়িঘড়ি করে করা ট্রানজ্যাকশন তদন্তে পুলিশকে সাহায্য এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে সাহায্য করেছে।