আফগানিস্তানের আরেকটি প্রাদেশিক রাজধানী তালেবান নিয়ন্ত্রণে গেল। এই নিয়ে দেশটির ছয়টি প্রাদেশিক রাজধানীতে তারা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করল। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিদেশি বাহিনী দেশটি থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর একের পর এক শহরের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে তালেবান। তারই ধারাবাহিকতায় আজ সোমবার তারা উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ সামানগানের রাজধানী আয়বাক দখলে নেয়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, আজ সোমবার সামানগান প্রদেশের রাজধানী আয়বাক দখলে নিয়েছে তালেবান। গতকাল রোববার এক দিনেই তারা তিনটি প্রদেশ নিজেদের কবজায় নেয়। এদিকে একই দিনে কাবুলে রেডিও স্টেশনে চালানো হামলায় স্টেশনটির ব্যবস্থাপক নিহত হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।
আয়বাক শহরের আইনজীবী জিয়াউদ্দিন জিয়া রয়টার্সকে বলেন, ‘শহরের অনেকগুলো অংশের নিয়ন্ত্রণ তারা এরই মধ্যে নিয়ে নিয়েছে। এখন তারা শহরের পুলিশ সদর দপ্তর ও প্রাদেশিক গভর্নরের কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ নিতে পুলিশের সঙ্গে যুদ্ধ করছে।’
এখন পর্যন্ত যতগুলো অঞ্চল তালেবানের দখলে এসেছে, সবগুলোতেই তারা ইসলামি আইন কায়েম করছে। ২০০১ সালের আগের পরিস্থিতি আবার ফিরে আসতে পারে বলে এরই মধ্যে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে। একই শঙ্কা রয়েছে আফগানদের মধ্যেও। এরই মধ্যে মুজাহিদীনদের অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার খবর এসেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে।
আফগানিস্তান পরিস্থিতি দিন দিন জটিল আকার ধারণ করছে। এরই মধ্যে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল রোববার মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তিনটি প্রাদেশিক রাজধানী তালেবানের দখলে যায়। এগুলো হলো—কুন্দুজ, সার–এ–পুল ও তালুকান।
গত কয়েক মাসে গ্রামাঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের পর সম্প্রতি তারা প্রাদেশিক রাজধানীগুলোর দিকে মনোযোগ দেয়। গত শুক্রবার থেকে এখন পর্যন্ত তারা মোট ছয়টি প্রাদেশিক রাজধানীতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, রোববার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলের শহর কুন্দুজ, সার–এ–পুল ও তালুকান দখলে নেয় তালেবান। সঙ্গে আজ যুক্ত হলো সামানগান। টানা ছয়টি প্রাদেশিক রাজধানীর পতন দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য এক বড় ধাক্কা হিসেবে গণ্য হচ্ছে।
তালেবানের দখলে যাওয়া প্রাদেশিক রাজধানীগুলোর মধ্যে কুন্দুজ সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। ২০১৫–১৬ সালেও এই শহরের দখল নিয়েছিল তালেবান। তবে বিদেশি সেনাদের সহায়তায় সরকারি বাহিনী তখন কুন্দুজ পুনরুদ্ধার করেছিল। আফগানিস্তানে মোট ৩৪টি প্রদেশ রয়েছে। যেভাবে একের পর এক প্রদেশ তালেবানের নিয়ন্ত্রণে যাচ্ছে, তাতে আফগান সরকারের বাহিনী কত দিন কাবুল টিকিয়ে রাখতে পারবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে, সরকারি বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো পুনর্দখলের জন্য তীব্র লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। কমান্ডো বাহিনী অভিযান শুরু করেছে। জাতীয় রেডিও, টিভি ভবনসহ কিছু এলাকা তালেবান মুক্ত করা হয়েছে।