রানির মতো পোশাক পরায় নাকি তাঁকে অপমান করা হয়েছে। এমনই অভিযোগে এক তরুণীকে ২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে থাইল্যান্ডের একটি আদালত। জাতুপর্ন সায়েইয়োং নামে ২৫ বছরের ওই তরুণী ২০২০ সালে ব্যাংককে একটি রাজনৈতিক সমাবেশে রানির পোশাকের মতো পোশাক পরে হাজির হয়েছিলেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি নিউজের এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জাতুপর্ন সায়েইয়োং তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তিনি কাউকে অপমান করার জন্য কোনো পোশাক পরেননি, তিনি কেবল একটি ঐতিহ্যবাহী একটি পোশাক পরেছিলেন। তবে, ওই তরুণী মূলত থাইল্যান্ডের রাজপরিবারের বিরুদ্ধে সমালোচনা রুখতে একটি শক্তিশালী আইনের আওতায় পড়ে গিয়েছেন।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—আদালতের রায়ের আগে এক সাক্ষাৎকারে জাতুপর্ন বলেছিলেন, ‘কাউকে উপহাস করার কোনো উদ্দেশ্য আমার ছিল না। আমি সেদিন কেবল নিজের জন্যই ওই পোশাক পরেছিলাম। পোশাকটি থাই ঐতিহ্যের একটি সংস্করণ।
স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার থাই আদালতের দেওয়া ওই রায়ের কঠোর সমালোচনা করেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। জাতুর্পনকে প্রথমে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলেও পরে তা কমিয়ে ২ বছর করা হয়। জাতুপর্ন ২০২০ সালে একটি ঐতিহ্যবাহী গোলাপি সিল্কের পোশাক পরে একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে তিনি লাল গালিচার ওপর দিয়ে হেঁটে গিয়েছিলেন এবং এ সময় তাঁর সঙ্গে সহশিল্পী হিসেবে একজন পরিচারিকার ভূমিকায় অভিনয় করেন। ওই নারী জাতুপর্নের মাথায় ছাতা ধরে রেখেছিলেন। এদিকে, থাইল্যান্ডের বর্তমান রাজা মহা ভাজিরালংকর্নের স্ত্রী রানি সুথিদা প্রায়ই জনসমাগমে আসার জন্য ঐতিহ্যবাহী রেশমি পোশাক পরেন।
২০১৯ সালে থাইল্যান্ডের বর্তমান রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন সিংহাসনে আরোহণের পর থেকে দেশটির রাজনৈতিক এবং মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো ক্ষমতাশালী রাজতন্ত্রের সংস্কারের দাবিতে একটি প্রতিবাদ–আন্দোলন শুরু করে। তবে এসব আন্দোলন দমাতে দেশটির কর্তৃপক্ষ ক্রমবর্ধমানহারে রাজপরিবারকে সুরক্ষার বিশেষ আইন যা ‘লেস ম্যাজেস্তে’ নামে পরিচিত তা নির্বিচারে প্রয়োগ করেছে।
২০২০ সালের নভেম্বর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত অন্তত ২১০ জন আন্দোলনকারীকে ‘লেস ম্যাজেস্তে’ আইনের আওতায় দণ্ড দেওয়া হয়েছে।