কম্বোডিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের ছেলে হুন মানেত। আজ মঙ্গলবার দেশটির পার্লামেন্টের সদস্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে হুন মানেতকে স্বীকৃতি দেন। এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে পরিবারতান্ত্রিক শাসনের ইতিহাস আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার পথ পেল। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র থাকলেও দেশটি পরিচালিত হয় গণতান্ত্রিক উপায়ে। কিন্তু বিগত ৩৮ বছর ধরের একা ক্ষমতা দখল করে রেখেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেন। সর্বশেষ দুই জাতীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রধান দুই বিরোধী দলকে নিষিদ্ধ করে নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। সেই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় হুন সেনের দল কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টি (সিপিপি)।
হুন মানেত (৪৫) কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনী প্রধান এবং একই সঙ্গে তিনি এখন দেশটির প্রধানমন্ত্রীও। মঙ্গলবার দেশটির পার্লামেন্টের ১২৩ জন সদস্যের সম্মতিক্রমেই হুন মানেত প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর হুন মানেত বলেন, ‘আজ কম্বোডিয়ার জন্য এক ঐতিহাসিক দিন।’
এর আগে, গত ২৬ জুলাই ৩৮ বছর পর কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন হুন সেন। তিনি জানান, তাঁর বড় ছেলে হুন মানেত হবেন দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। বিশ্লেষকদের মত, যদিও প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করছেন হুন সেন, তবে তারপরও দেশ পরিচালনায় তাঁর অংশগ্রহণ থেকে যাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়লেও দেশের সিনেটের প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরবেন না।
উল্লেখ্য, টানা ৩৮ বছর ধরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ দেশটি শাসন করছেন কম্বোডিয়ার ‘গণতান্ত্রিক মডেলের স্বৈরশাসক’ প্রধানমন্ত্রী ৭০ বছর বয়সী হুন সেন। গতকাল রোববার (২৩ জুলাই) সাধারণ নির্বাচনে আবারও জয়ী হয়েছে তার দল কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টি (সিপিপি)। একতরফা এই নির্বাচনে কোনো শক্তিশালী বিরোধী দল ছিল না। জেল-জুলুম ও মামলা দিয়ে বিরোধী দলগুলোকে বাইরে রাখা হয়েছিল।
হুন সেন এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি শাসক। গণতন্ত্রের নামে স্বৈরশাসনের মাধ্যমে ১৯৮৫ সাল থেকে তিনি ক্ষমতা ধরে রেখেছেন। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে কঠোরভাবে দমন করেছেন তিনি। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে দেশের আদালতকেও ব্যবহার করেছেন।
এ ছাড়া সামরিক বাহিনী, পুলিশসহ গোয়েন্দা গোষ্ঠীকে রেখেছেন হাতের মুঠোয়। সংসদ-সদস্যদের তাদের পদমর্যাদা থেকে সরিয়ে দেওয়াসহ নেতাদের বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে গ্রেপ্তার করেছেন; পাঠিয়েছেন নির্বাসনে।
রোববারের নির্বাচনে হুন সেনের সিপিপি জিতেছে ১২০টি আসনে। আর তার অনুগত বিরোধী দল ফানসিনপেক পার্টি পেয়েছে ৫টি আসন।