আগামী দুই বছরের জন্য সম্প্রচার ফি বাবদ সরাসরি কোনো আয় থাকছে না বিবিসির। ফলে এই ব্রিটিশ সম্প্রচার মাধ্যমটির নিঃসন্দেহে প্রোগ্রাম বাজেটে বড় ধরনের কাটছাঁট করতে হবে। এ ছাড়া ২০২৭ সালের মধ্যে বিবিসির সম্প্রচার ফি সম্পূর্ণ বাতিল করারও পরিকল্পনা করেছে বরিস জনসনের সরকার।
জনসনের সরকার বেশ কিছুদিন ধরেই বলে আসছেন, বিবিসির তহবিল সংস্থান ব্যবস্থায় সংস্কার আনা দরকার। অবশ্য লাইসেন্স ফির টাকায় পরিচালিত ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের (বিবিসি) ভবিষ্যৎ বহু দিন ধরেই ব্রিটেনে রাজনৈতিক বিতর্কের বিষয় হয়ে রয়ে গেছে।
ব্রেক্সিট এবং এরপর দীর্ঘ মহামারির কারণে ব্রিটেনে বাজারের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। আগামী এপ্রিলে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশ বা তারও বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির খপ্পরে পড়তে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য।
এ পরিস্থিতিতে বিবিসির বর্তমান বাৎসরিক লাইসেন্স ফি (১৫৯ পাউন্ড) আগামী দুই বছর স্থগিত করলে গ্রাহকেরা কিছুটা স্বস্তি পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। যেখানে ব্রিটেনে জীবনযাত্রার ব্যয় হু হু করে বাড়ছে।
তবে সংস্কৃতি মন্ত্রী নাডিন ডরিস জানাচ্ছেন, লাইভ টেলিভিশন এবং আইপ্লেয়ার সার্ভিস পেতে চাইলে একটি বাৎসরিক লাইসেন্স ফি দিতেই হবে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত এটি ১৫৯ পাউন্ডই থাকছে। এর পরবর্তী তিন বছর সামান্য বাড়বে।
মন্ত্রী বলেছেন, এই পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে বিবিসির বর্তমান লাইসেন্স ফি ফান্ডিং ব্যবস্থার ইতি ঘটবে। তবে এতে দীর্ঘ মেয়াদে গণমাধ্যমটির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম হিসেবে এই রক্ষণশীল সরকারের অধীনে এটির সম্পাদকীয় স্বাধীনতাও হুমকির মুখে পড়বে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।
তা ছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তহবিলে পরিচালিত সংবাদমাধ্যম এবং সাবস্ক্রিপশন ভিত্তিক অর্থে পরিচালিত নেটফ্লিক্সের মতো বিনোদন স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে হচ্ছে বিবিসিকে। ফলে লাইসেন্স ফি বাবদ বছরে ৩২০ কোটি পাউন্ড পেলেও এরই মধ্যে প্রতিযোগিতা ও মূল্যস্ফীতির কারণে যেভাবে খরচ বেড়ে গেছে তাতে বিবিসিকে বেশ বেগ পেতে হবে। মিলিয়ন মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় সংকোচনের যেতে হতে পারে।
মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিবিসিকে লাইসেন্স ফি বাড়ানোর যদি অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলেও আসছে এপ্রিলের মধ্যে ফি বাড়িয়ে ১৬৭ পাউন্ড করতে হবে। যেখানে বর্তমান মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ১ শতাংশ।
গত বছরের নভেম্বরে টিভি লাইসেন্স ফি নির্ধারণ নিয়ে ব্রিটেন সরকার আলোচনা শুরু করে। যেখানে আগামী এপ্রিলে পাঁচ বছর মেয়াদি তহবিল জোগান চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার কথা রয়েছে।
সংস্কৃতি মন্ত্রী নাডিম ডরিস বলছেন, লাইসেন্স ফি নিয়ে সরকারের এটিই হবে শেষ চুক্তি। এ নিয়ে তিনি একটি টুইট করেছেন।
তবে এ ব্যাপারে সরকার বা বিবিসির পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
সরকারি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, সরকারি টাকায় টেলিভিশন চালানোর দিন শেষ। এ ক্ষেত্রে নেটফ্লিক্স এবং ইউটিউবের মতো মার্কিন বেসরকারি কোম্পানির উন্নতির কথাও উল্লেখ করেছেন সূত্রটি।
বিরোধী লেবার পার্টি বলছে, বিবিসির এই তহবিল কর্তনের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।