ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার বানোয়াট গল্পকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে অস্ত্রোপচার করে শরীরে গুলি ঢুকিয়েছেন এক নারী! ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের বেরেলিতে ঘটেছে এই বিচিত্র ঘটনা। উত্তর প্রদেশ পুলিশের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রাদেশিক পুলিশপ্রধান মানস পারিখের বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানিয়েছে, গত ২৯ মার্চ রাতে বেরেলির গান্ধী উদ্যানে এক নারী গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পায় পুলিশ। পরদিন ওই নারীর ভাগনি থানায় ধর্ষণের অভিযোগ দেন। ভাগনির দেওয়া তথ্যমতে, তাঁর মাসি শামৌলি বেরেলির ৩০০ শয্যা হাসপাতালের কাছের একটি ওষুধের দোকান থেকে বের হচ্ছিলেন। এ সময় একটা কালো গাড়িতে করে পাঁচ ব্যক্তি এসে তাঁকে অপহরণ করে। তাঁকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গান্ধী উদ্যানে ফেলে যায় তারা।
ভয়ংকর এই ঘটনা শুনে অভিযুক্তদের ধরতে তৎপর হয় বেরেলি পুলিশ। তবে, অভিযোগ দায়েরের এক দিন পরই সামনে আসে আসল ঘটনা, যা শুনে পুলিশের ভিরমি খাওয়ার জোগাড়।
মেডিকেল রিপোর্টে দেখা যায়, শামৌলি নামের ওই নারীকে কেউ ধর্ষণ করেনি। এমনকি তাঁর শরীরের গুলিটিও কোনো আগ্নেয়াস্ত্র থেকে আসেনি। বরং, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সেটিকে শরীরে প্রবেশ করানো হয়েছে। পরে, একটি কয়েন গরম করে সেখানে ছ্যাঁকা দিয়ে গুলির দাগের মতো দাগ বানানো হয়েছে। ক্ষতস্থানে অস্ত্রোপচারের চিহ্ন স্পষ্ট।
মেডিকেল রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করে দেখে, শামৌলির ভাগনি যে বিবরণ দিয়েছেন, তেমন কিছুই ঘটেনি। ঘটনার বর্ণনায় অপহরণের যে সময় উল্লেখ করা হয়েছে, ওই সময় শামৌলিকে একটি অটোরিকশায় দেখা গেছে।
পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ওই নারী গল্প সাজানোর কথা স্বীকারও করেছেন।
ওই নারীর ভাষ্যমতে—তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলা চলছে, কিছুদিনের মধ্যেই রায় হওয়ার কথা। রায় প্রভাবিত করতে তিনি এমন গল্প সাজিয়েছেন। এর আগে তিনি এক জনপ্রতিনিধি ও তাঁর ছেলেকেও ব্ল্যাকমেইল করেছিলেন। সেই মামলা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। ওই জনপ্রতিনিধি এবং তাঁর ছেলেকে ফাঁসাতেই এই নাটক সাজিয়েছিলেন শামৌলি।
পুলিশ জানায়, ওই নারী জেলা হাসপাতালের এক কর্মী ও সঞ্জয়নগরের এক ভুয়া চিকিৎসককে দিয়ে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে গুলি প্রবেশ করান। এ ঘটনায় অন্তত তিনজন জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এরই মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আরও বিশদ তদন্ত চলছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।