কিউবায় আবারও বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। দেশটি জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিড ব্যবস্থা গতকাল শুক্রবার রাতে ভেঙে পড়ে, যার ফলে দেশজুড়ে ব্যাপক বিদ্যুৎ-বিভ্রাট দেখা দেয় এবং দেশটির ১ কোটি ১০ লক্ষাধিক মানুষ সম্পূর্ণ অন্ধকারে ডুবে যায়। মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
কিউবার জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয় গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আজ রাত ৮টা ১৫ মিনিটের দিকে দিয়েসমেরো সাবস্টেশনে ত্রুটির কারণে কিউবার পশ্চিমাঞ্চলে বড় ধরনের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং এর ফলে জাতীয় বিদ্যুৎ-ব্যবস্থায় ব্যর্থতা দেখা দেয়।’
মন্ত্রণালয় আরও জানায়, বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলছে এবং দ্রুত স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন। তবে ঠিক কত সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে, সে সম্পর্কে তারা কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ করেনি।
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলে রাজধানী হাভানাসহ গোটা দেশ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। সিএনএনের ধারণ করা এক ভিডিওতে দেখা যায়, রাস্তাঘাট ও ভবন সম্পূর্ণ অন্ধকারে ঢেকে গেছে, আর মানুষজন রাস্তা পারাপারের জন্য বৈদ্যুতিক টর্চ ব্যবহার করছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতেও কোনো ধরনের আলো নেই, যা জনজীবনে ব্যাপক দুর্ভোগ তৈরি করেছে।
এটি কিউবার সাম্প্রতিক বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের সর্বশেষ ঘটনা। জরাজীর্ণ অবকাঠামো, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে দেশটির বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। কিউবার বিদ্যুৎ খাতের সংকট নতুন নয়। এর আগেও সরকার মার্কিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করেছে। বিশেষ করে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সময় নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর হওয়ায় দেশটির বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহব্যবস্থা আরও দুর্বল হয়ে পড়ে।
সরকারি ভাষ্যে বলা হয়েছে, ‘মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ও জ্বালানি আমদানি করতে পারছি না, ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।’ তবে সমালোচকেরা সরকারের ব্যর্থতাকেও দায়ী করছেন। তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের অভাব, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণেও বিদ্যুৎ খাতে এমন সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে, গত বছরের অক্টোবরে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে কিউবার বেশির ভাগ অংশে ব্যাপক বিদ্যুৎ-বিভ্রাট দেখা দেয়, যা দেশটির সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বিদ্যুৎ-সংকট বলে মনে করা হয়।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, কিউবার বিদ্যুৎ অবকাঠামো বহু পুরোনো এবং সংস্কারের অভাবে এটি বারবার ভেঙে পড়ছে। তাঁরা সতর্ক করে দিচ্ছেন যে, এমন ঘটনা ভবিষ্যতে আরও ঘন ঘন ঘটতে পারে, যদি না সরকার বিদ্যুৎ খাতে জরুরি সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
বর্তমানে কিউবার সাধারণ জনগণ চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের কারণে হাসপাতাল, পানি সরবরাহব্যবস্থা, মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং অন্যান্য জরুরি সেবাও ব্যাহত হচ্ছে। জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে এবং সরকার কীভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করবে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।