আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (আইসিসি) ‘মানবতার শত্রু’ বলে আখ্যা দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। নিজের বিরুদ্ধে আইসিসির জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে তিনি ‘অ্যান্টি-সেমিটিক’ বা ইহুদিবিরোধী বলেছেন।
এক ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহু এসব কথা বলেন। লন্ডনভিত্তিক প্যান-আরব সংবাদমাধ্যম আরব নিউজের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
নেতানিয়াহু বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তাকে ‘ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা’ থেকে বিরত রাখতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কারও ইসরায়েলবিরোধী সিদ্ধান্ত আমার দেশের প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। আমরা কারও চাপের কাছে নতি স্বীকার করব না।’
গত বৃহস্পতিবার গাজায় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও দেশটির সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করে আইসিসি। তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোকে ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’ বলে উল্লেখ করেন নেতানিয়াহু।
আদালতের এই সিদ্ধান্তকে ‘জাতির ইতিহাসে অন্ধকার দিন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, ‘মানবতাকে রক্ষা করার জন্য দ্য হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু আজ সেটি মানবতার শত্রুতে পরিণত হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর প্রথম ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল হামাস। এতে অন্তত ১,২০৬ জন ইসরায়েলি নিহত হন। তখন থেকেই গাজায় হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। এর ফলে গাজা অঞ্চল ভয়াবহ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৪৪ হাজার ৫৬ জন মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। খাদ্য ও ওষুধের অভাবে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করে গাজায় গুরুতর মানবিক সংকটের বিষয়ে সতর্কতা দিয়েছে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা।
আইসিসি থেকে বলা হয়, ‘নেতানিয়াহু ও গ্যালান্তের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে, তাঁরা গাজায় গণহত্যা সৃষ্টির জন্য অপরাধমূলক দায়িত্ব পালন করেছেন, যা যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের সমতুল্য।’
এর বিপরীতে নেতানিয়াহু আইসিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ‘ইসরায়েলকে একটি কল্পিত অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অথচ ইসরায়েল এবং বিশ্বের অনেক দেশে যে বাস্তবিক অর্থেই ভয়াবহ যুদ্ধাপরাধ হচ্ছে, সেটাকে তাঁরা উপেক্ষা করছে।’
নেতানিয়াহু এবং গ্যালান্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার পাশাপাশি, আইসিসি হামাসের সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ দেইফের বিরুদ্ধেও একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, গত জুলাইয়ে একটি বিমান হামলায় দেইফকে হত্যা করা হয়েছে। তবে হামাস দেইফের মৃত্যুর বিষয়টি এখনও নিশ্চিত করেনি।
‘মোহাম্মদ দেইফের লাশের জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি!’, আদালতের সিদ্ধান্তকে এভাবেই উপহাস করেন নেতানিয়াহু।