যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের পরপরই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা করছেন। মার্কিন কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ইসরায়েল হায়োম।
লন্ডনভিত্তিক মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে কাজ করা সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট মনিটরের প্রতিবেদনে ইসরায়েল হায়োম পত্রিকার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন তাঁর শপথ গ্রহণের পরবর্তী দিন অর্থাৎ, ২১ জানুয়ারি অথবা তাঁর শপথ গ্রহণের দিনই এ নিষেধাজ্ঞার কার্যক্রম শুরু করতে পারে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এমন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে তা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের জন্য মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনবে।
সূত্রমতে, এই নিষেধাজ্ঞা আইসিসির ওপর ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলবে। নিষেধাজ্ঞাগুলো কেবল আইসিসির কর্মকর্তা, বিচারক এবং প্রসিকিউটরদের ওপরই আরোপিত হবে না, বরং পুরো সংস্থাটিকেই লক্ষ্যবস্তু করা হবে। ট্রাম্প প্রশাসন আইসিসিকে এমন একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত করতে চায়, যা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে।
এর জন্য, যুক্তরাষ্ট্র এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে, যা সাধারণত সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। এই পদক্ষেপের ফলে আইসিসির কার্যক্রমে যুক্ত প্রতিটি ব্যক্তি, এমনকি আদালতের কর্মকর্তাদের ওপরও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ হবে।
এই নিষেধাজ্ঞার মূল উদ্দেশ্য হলো আইসিসির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির মাধ্যমে ইসরায়েলের শীর্ষ নেতাদের, বিশেষ করে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করা। আইসিসি এই দুই নেতার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। ট্রাম্প প্রশাসন এবং ইসরায়েলের কাছে এ বিষয়টি কাছে বিশেষভাবে উদ্বেগের।
ট্রাম্প প্রশাসন মনে করে যে আইসিসির এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি সৃষ্টি করছে। তারা আশঙ্কা করছে যে এই পদক্ষেপগুলো যদি সফল হয়, তবে আন্তর্জাতিক আদালত অন্য দেশগুলোর বিরুদ্ধেও একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে। যার ফলে যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মিত্র দেশগুলোর সামরিক প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে, তাদের জন্য সামরিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা এবং বৈশ্বিক হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গঠন করা কঠিন হয়ে পড়বে।
এ ছাড়া, ট্রাম্প প্রশাসন আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে। তারা মনে করে যে আইসিসি যদি ইসরায়েলি নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারে, তাহলে তারা ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বিরুদ্ধেও একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে। এ কারণেই, ট্রাম্প প্রশাসন এই আদালতের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নিতে চায়, যা আইসিসির কার্যক্রমকে ব্যাপকভাবে সীমিত করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করবে।