Ajker Patrika

ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধে মার্কিন কৃষকদের ক্ষতি বেশি

অনলাইন ডেস্ক
প্রতীকী ছবি। ছবি: সিএনএনের সৌজন্যে
প্রতীকী ছবি। ছবি: সিএনএনের সৌজন্যে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীন থেকে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। এর জবাবে চীন মার্কিন পণ্য আমদানির ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।

চলমান এই বাণিজ্যযুদ্ধে কোন দেশ প্রথম পিছু হটবে, তা বিশ্লেষণ করার জন্য মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীন কী কী আমদানি করে, তা নিয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সিএনএন দেখেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প হিসেবে চীন কীভাবে অন্য দেশ থেকে এসব পণ্য আমদানি করে তাদের চাহিদা পূরণ করতে পারে। অন্যদিকে এর ফলে ভয়াবহ বিপদে পড়তে পারেন মার্কিন কৃষকেরা।

চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রধানত কৃষিপণ্য যেমন—সয়াবিন, তৈলবীজ ও শস্য আমদানি করে। সয়াবিন মূলত পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে বাণিজ্যযুদ্ধের সময় এই সয়াবিন খাত ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বর্তমানে চীন মার্কিন সয়াবিনের ওপর মোট ১৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই শুল্কের কারণে চীনে সয়াবিন রপ্তানি প্রায় শূন্যের কাছাকাছি নেমে যেতে পারে।

২০১৮ সালের বাণিজ্যযুদ্ধে মার্কিন কৃষি খাত প্রায় ২৭ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। এর ৭১ শতাংশই ছিল সয়াবিন সম্পর্কিত। আমেরিকান সয়াবিন অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, এই ক্ষতি এখনো কৃষকদের ওপর প্রভাব ফেলছে। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কৃষক, যাঁদের অধিকাংশ ২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পকে সমর্থন করেছিলেন, তাঁরা এখন আর্থিক সংকটের মুখে। শুধু ইলিনয় ও মিনেসোটা এই দুই রাজ্যের কৃষকেরা গত নির্বাচনে কমলা হ্যারিসের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন।

চীন ইতিমধ্যে ব্রাজিল থেকে সয়াবিন আমদানি বাড়িয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশ বিশ্বের শীর্ষ সয়াবিন রপ্তানিকারক। ২০১০ সাল থেকে ব্রাজিলের সয়াবিন রপ্তানি চীনে ২৮০ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে মার্কিন রপ্তানি রয়েছে স্থবির।

গত নভেম্বরে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ব্রাজিল সফর করেন, যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও জোরদার করেছে। ২০২৪ সালে ব্রাজিলের মোট সয়াবিন রপ্তানির ৭৩ শতাংশ চীনে গিয়েছে। এ বছর ব্রাজিলের সয়াবিন উৎপাদন রেকর্ড পরিমাণে পৌঁছানোর পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে এবং আশা করা হচ্ছে, চীন ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার মতো দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো থেকে আমদানি বাড়াতে পারে।

তবে চীন শুধু ব্রাজিলের দিকে তাকিয়ে নেই। গত বৃহস্পতিবার তারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গেও বাণিজ্য সহযোগিতা জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়া চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাণিজ্যিক ত্রাণ ও বৈদ্যুতিক গাড়ি নিয়ে আলোচনা পুনরায় শুরু করার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এই পদক্ষেপগুলো মার্কিন শুল্কের প্রভাব মোকাবিলায় চীনের কৌশলগত প্রস্তুতির নির্দেশ দেয়।

সিএনএনের প্রতিবেদন থেকে বোঝা যায়, মার্কিন কৃষকদের জন্য এই বাণিজ্যযুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হতে পারে। প্রথম বাণিজ্যযুদ্ধে চীন ব্রাজিলের সয়াবিনের ওপর নির্ভরতা বাড়িয়েছিল এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে এই প্রবণতা আরও তীব্র হতে পারে। মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্যগুলো যেমন—আইওয়া, ইলিনয় ও মিনেসোটা যুক্তরাষ্ট্রে সয়াবিন উৎপাদনে শীর্ষে। ২০২৪ সালে এসব রাজ্য থেকে চীনে ১২.৮ বিলিয়ন ডলারের সয়াবিন রপ্তানি করা হয়েছিল। তাই এই বাজার হারানোর ফলে কৃষকদের আয় কমবে এবং অনেকে দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।

ট্রাম্প সরকার তাঁর প্রথম মেয়াদে কৃষকদের জন্য ২৮ বিলিয়ন ডলারের বেলআউট দিয়েছিল। তবে বিশ্লেষকেরা সতর্ক করেছেন, বারবার বেলআউট দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয় এবং এটি বাজারের স্থায়ী ক্ষতিরোধ করতে পারবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত