ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানলে জ্বলছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস। এর ভয়াবহতা এতটাই যে, সেখানকার জনমনে ভীষণ আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির শেরিফ রবার্ট লুনা দাবানলের ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘দেখে মনে হচ্ছে যেন এখানে পারমাণবিক বোমা হামলা চালানো হয়েছে।’
আজ শুক্রবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানা যায়, প্যালিসেডস ও ইটন দাবানলে প্রায় ১৩ হাজার একর এলাকা পুড়ে ছাই হয়েছে। পানির তীব্র সংকটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছেন অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা। পুরো ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি বাড়িঘর।
এ পর্যন্ত সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও এই সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করলেন তিনি। লুনা বলেন, অনেক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যাওয়া এখনো নিরাপদ নয়। তবে মৃত্যুর সংখ্যা ‘অবশ্যই বাড়বে’।
অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা ধারণা করছেন, প্যালিসেডসে এরই মধ্যে ৫ হাজার ৩০০-এর বেশি স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। ইটনে আনুমানিক ৪ থেকে ৫ হাজার স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে।
লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের প্রতিবেদনে জানা যায়, দাবানলের কারণে বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে ২ লাখেরও বেশি বাসিন্দা। এ অবস্থায় পরিত্যক্ত বাড়িগুলোতে লুটপাটের খবর পাওয়া গেছে। লুটের অভিযোগে ২০ জনকে গ্রেপ্তারের পর কিছু এলাকায় কারফিউ ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
গত মঙ্গলবার থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত লস অ্যাঞ্জেলেসে ছয়টি দাবানল দেখা গেছে। ফায়ার সার্ভিস জানায়, এর মধ্যে তিনটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম এক্সে এক পোস্টে বলেন, প্যালিসেডস দাবানলের ৬ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এলাকার বাসিন্দাদের স্থানীয় কর্মকর্তা ও জরুরি সেবাদানকারী দলের নির্দেশ মেনে চলার অনুরোধ করেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানা যায়, বাতাসের তীব্রতা কমে আসায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা কমেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, লস অ্যাঞ্জেলেস এখনো বিপদমুক্ত নয়। এই দাবানল আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দাবানল বিপর্যয়ে রূপ নিতে পারে।
লস অ্যাঞ্জেলেস শহরকে পুনর্নির্মাণের জন্য দৃঢ় পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র ক্যারেন ব্যাস। তবে বেসরকারি আবহাওয়া পূর্বাভাসদাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাকুওয়েদার ধারণা করছে, দাবানলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৩৫ বিলিয়ন থেকে ১৫০ বিলিয়ন ডলার হতে পারে। শহরটির পুনর্বাসন বেশ কঠিন হয়ে যাবে। বাড়ির মালিকদের বিমার খরচ অনেক বেড়ে যাবে।
এদিকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা করেছেন, দাবানলে ক্ষতিগ্রস্তদের জানমালের নিরাপত্তায় শতভাগ ব্যবস্থা করবে সরকার। আগামী ছয় মাস তাঁদের সহায়তা দেওয়া হবে।