ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে আজ শুক্রবার গ্রেপ্তার তিনজনকে আট দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন শিলাস্তি রহমান। শুনানি সময় তিনি বলেন, ‘আমি এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমাকে কেন গ্রেপ্তার করা হলো।’
আদালতে তোলার সময় ক্যামেরা দেখে মুখ লুকাতে থাকেন শিলাস্তি। পরে তাঁকে আদালতের কাঠগড়ায় তোলা হলে তিনি অঝোরে কাঁদতে থাকেন।
রাষ্ট্রপক্ষে রিমান্ড আবেদনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে শুনানি করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি আব্দুস সাত্তার দুলাল। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, এই মামলার মহিলা আসামি শিলাস্তি শুধু বলেছেন, তিনি কিছুই জানেন না। অন্য দুই আসামি আদালতে কিছুই বলেননি। আসামি আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল একজন পেশাদার খুনি। একটি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই খুনটি সংঘটিত হয়েছে। এমপিকে খুন করার জন্য শিমুলের সঙ্গেই মূল পরিকল্পনাকারী শাহীনের সঙ্গে যোগাযোগ হয় বলে রিমান্ড আবেদনে বলা হয়েছে।
এদিকে তিন আসামিকে আদালতের কাঠগড়ায় হাজির করার পর তাঁদের রিমান্ডের আবেদন শুনানি হয়। শুনানির সময় তাঁদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। তবে শিলাস্তির পক্ষে একজন আইনজীবী মামলা পরিচালনা করার জন্য ওকালতনামায় তাঁর স্বাক্ষর নিতে গেলে শিলাস্তি প্রশ্ন করেন, ‘আমি স্বাক্ষর দেব কেন? আমি কি এই মামলার আসামি নাকি?’ পরে তিনি স্বাক্ষর দেননি।
যাঁদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া ওরফে মাহমুদ হাসান শিমুল, শিলাস্তি রহমান ও তানভির ভূঁইয়া ওরফে ফয়সাল আলী ওরফে সাজি। গত বুধবার তাঁদের আটক করা হলেও গতকাল বৃহস্পতিবার এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আনোয়ারুল আজীম ভারতে খুন হওয়ার ঘটনায় বুধবার ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় অপহরণের পর বাবাকে গুম করার অভিযোগে মামলা করেন তাঁর মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।
মামলার এজাহারে এমপির মেয়ে উল্লেখ করেন, ৯ মে রাত ৮টার দিকে তাঁর বাবা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর সংসদ সদস্য ভবনের বাসা থেকে গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে যাওয়ার উদ্দেশে রওনা হন। ১১ মে ৪টা ৪৫ মিনিটে তাঁর বাবার সঙ্গে মোবাইলে ভিডিও কলে কথা বললে বাবার কথাবার্তা কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়। এরপর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
১৩ মে আনারের ভারতীয় নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ আসে। মেসেজে লেখা ছিল, ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি আছে। আমি অমিত শাহের কাছে যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নেই। পরে ফোন দেব।’
এ ছাড়া আরও কয়েকটি মেসেজ আসে। মেসেজগুলো মুমতারিনের বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারে বলে এজাহারে বলা হয়েছে।
এজাহারে আরও বলা হয়, বাদীর বাবা ভারতে খুন হয়েছেন বলে তিনি জানতে পেরেছেন। তবে এখনো বাবার লাশ পাননি তাঁর পরিবার। তাঁর বাবাকে অপহরণ করে খুন করা হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।
এমপি আনার ১২ মে দর্শনা–গেদে সীমান্ত দিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। বরাহনগরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু ১৬ মে থেকে তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে না পারায় নিখোঁজ জানিয়ে ১৮ মে বরাহনগর থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস।
বুধবার সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে আনারের খুন হওয়ার খবর আসে। এরপর তাঁর মেয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় অপহরণের পর গুম করার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।
আরও পড়ুন: