গৃহহীন মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনিয়ম তদন্তে মাঠে নেমেছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। গতকাল শুক্রবার পাঁচটি দলে ভাগ হয়ে প্রকল্প পরিদর্শনে গেছেন তাঁরা। অনিয়ম তদন্তে পৃথক কমিটি করেছে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনও।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক মো. মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বে দুটি দল মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় যায়। দলের সদস্যরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়িগুলো পরিদর্শন ও উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। এখানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপ–প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের উপপরিচালক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এ বি এম সরওয়ার-ই-আলম সরকারসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মাঠ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বে আরেকটি দল আজ শনিবার টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা এবং বগুড়া সদর, শেরপুর ও শাজাহানপুর উপজেলায় যাচ্ছে।
হবিগঞ্জ সদর, মৌলভীবাজার সদর, সিলেটের বিশ্বনাথ, ময়মনসিংহ, জামালপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, পাবনা, মানিকগঞ্জ, নাটোরের বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আরও তিনটি দল গেছে।
মুন্সিগঞ্জে একটি এলাকায় কিছু বাড়ির মেঝে ফেটে যাওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাহবুব হোসেন বলেন, ‘এটি নিয়ে আমরা কমিটি গঠন করেছি। প্রাথমিকভাবে আমরা তথ্য পেয়েছি। সেখানে ইটের সলিং দেওয়ার কথা থাকলেও সেটা দেওয়া হয়নি। ঢালাইও মানসম্মত হয়নি। কারণ জানার পর কমিটির পরামর্শে মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। মুন্সিগঞ্জ সদরে এ কাজের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত ছিলেন, তাদের সবাইকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ঘর বরাদ্দে গৃহহীন মানুষকে বাদ দিয়ে সচ্ছল ব্যক্তিদের ঘর দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নাশকতা মামলার আসামিরাও ঘর পেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি তদন্তে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন একটি কমিটি করেছে। সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হোসেন বলেন, ৩১টি ঘর বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখার নির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। পাঁচ সদস্যের এই কমিটি পাঁচ দিনের মধ্যে সমস্যা চিহ্নিত করে তদন্ত প্রতিবেদন দেবে।
শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উজেলার ইদিলপুরে ২১টি ঘরের বেশির ভাগেই ফাটল দেখা দিয়েছে। ঘরের মেঝে, দেয়ালে ফাটল দেখা দেওয়ায় আতঙ্কে আছে বাসিন্দারা। ইতিমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ঘরের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ঘর পাওয়াদের একজন সৈয়দ নেশা বলেন, ‘ঘরের চাল দিয়ে পানি পড়ে, মেঝেতে ফাটল ধরেছে। বেশির ভাগ ঘরের একই অবস্থা। আমরা ভয়ে আছি। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’
গোসাইরহাট উপজেলার ইউএনও তানভির আল নাসিফ বলেন, বৃষ্টির পানি বাড়ায় মাটি সরে কিছু ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। গতকাল থেকেই মেরামত শুরু হয়েছে। দ্রুত শেষ করা হবে।
আশ্রয়ণ প্রকল্প-২–এর আওতায় ২ শতাংশ করে জমির ওপর ১ লাখ ১৮ হাজার ৩৬০টি পরিবারকে ঘর করে দেওয়া হয়েছে। ২ শতাংশ জায়গার ওপর দুটি শোয়ার ঘর, একটি বারান্দা, একটি রান্নাঘর ও একটি বাথরুম রয়েছে।