দেশে চলমান কঠোর বিধিনিষেধের প্রভাব পড়েছে জ্বালানি তেলে। সব ধরনের জ্বালানি তেলের বিক্রি গড়ে ৩০ শতাংশ কমেছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। মূলত বিধিনিষেধের কারণে সীমিত যানবাহন চলাচল আর কলকারখানা ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমে যাওয়ায় চাহিদা কমে গেছে।
বিপিসির কর্মকর্তারা বলেন, স্বাভাবিক সময়ে জুলাই মাসে দিনে গড়ে ১৮ হাজার ৫০০ টন জ্বালানি তেলের চাহিদা থাকে, যা এখন নেমে এসেছে ১৩ হাজার টনে। এর মধ্যে দিনে ডিজেলের চাহিদা সাড়ে ১৩ হাজার টন থেকে কমে সাড়ে ৯ হাজার টনে, অকটেনের ৯০০ টন থেকে কমে ৫০০ টনে এবং পেট্রলের ১ হাজার ১৫০ টন থেকে কমে ৭০০ টনে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে ২৫০ টন কেরোসিনের বিক্রি নেমেছে ১৫০ টনে। অন্যদিকে ফার্নেস অয়েলের চাহিদা ২ হাজার ৫০০ টন থাকলেও এখন দিনে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টন। আর উড়োজাহাজের জ্বালানি জেট এ-১-এর বিক্রি ১ হাজার ২০০ টন থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৬৫০ টনে।
বিক্রি কম হওয়ায় লাভ হচ্ছে বিপিসির। তবে লোকসানের মুখে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত তিন বিপণন প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম আর যমুনা অয়েল এবং তাদের কাছ থেকে তেল নিয়ে বিক্রি করা পেট্রলপাম্প মালিকেরা। বিপিসির অর্থ ও বিপণন বিভাগের পরিচালক কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘লাভ-লোকসান বিপিসির মূল লক্ষ্য নয়। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলসহ আরও দু-একটি জ্বালানি তেলের দাম বেশি বলে বিক্রি কম হওয়ায় আমাদের লোকসান কম হচ্ছে।’
যমুনা অয়েল কোম্পানির পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দিন আনচারী বলেন, ‘জ্বালানি তেলের বিক্রি কমে গেলে আমাদের মুনাফা কমে যায়। গত অর্থবছরে করোনার কারণে কয়েক দফায় জ্বালানি তেল বিক্রি ব্যাহত হয়েছিল। তবে ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে আমাদের মোট বিক্রি আগের অর্থবছরের তুলনায় বেশি ছিল। এবারও আমরা আশা করছি, বছর শেষে ক্ষতি পুষিয়ে আসবে।’
মেঘনা পেট্রোলিয়ামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর ছাইফুল্লাহ-আল-খালেদ বলেন, ‘এই ধারা দীর্ঘমেয়াদি হলে আমাদের লোকসান হতে পারে।’
বাংলাদেশ পেট্রলপাম্প মালিক সমিতির একাংশের সভাপতি সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম বলেন, ‘জরুরি সেবাদানকারী হিসেবে আমাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সার্বক্ষণিক চালু রাখতে হয়। অনেক এলাকায় বিক্রি ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। একটি পাম্প চালু রাখতে কর্মী, বিদ্যুৎ ব্যয়সহ নানা খরচ রয়েছে। এ অবস্থায় ক্ষতি কমাতে বিধিনিষেধ চলাকালে বিপণন কোম্পানি থেকে এলাকাভিত্তিক পাম্প বন্ধ বা চালু রাখার ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।’