ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পাশের দেয়ালে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সর্বহারা পার্টির নেতা সিরাজ সিকদারের গ্ৰাফিতি মুছে ফেলেছে একদল শিক্ষার্থী। গতকাল শুক্রবার মধ্যরাতে বিভিন্ন হল থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশের পর তাঁরা ঘটনাস্থলে যায়। পরে গ্রাফিতিতে জুতা নিক্ষেপ করে এবং ছবিতে কালি লাগিয়ে দেয়। এর আগে বিক্ষোভ মিছিলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের নেতা মেঘমল্লার বসুকে গ্রেপ্তারের দাবি জানায় তাঁরা।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে সমাবেশে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ বলেন, ‘কুখ্যাত লাল সন্ত্রাসীরা সহিংসতার ঘোষণা দিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ডাকসু নির্বাচন বানচাল করতে চায়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কুখ্যাত লাল সন্ত্রাসী মেঘমল্লার বসুকে গ্ৰেপ্তার করতে হবে। গত ১৫ জানুয়ারি এনসিটিবির সামনে হামলার ঘটনার সঙ্গে মেঘমল্লার বসুর সম্পৃক্ততা আছে কি না সেটা খতিয়ে দেখে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।’
‘লাল সন্ত্রাস ও সহিংসতার’ হুমকিতে জীবন নিয়ে শঙ্কিত হয়ে জীবনের নিরাপত্তা প্রার্থনা এবং হুমকিদাতাকে অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবিতে আজ শনিবার বিকেল ৪টায় মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দিয়েছেন মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ। সংবাদ সম্মেলন শেষে ‘শঙ্কিত’ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে হুমকিদাতার বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় জিডি করা হবে বলে জানায় মুসাদ্দিক।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহিন সরকার বলেন, ‘২৪ এর অভ্যুত্থানকে আমরা যারা ধারণ করি, তাদের সঙ্গে লাল সন্ত্রাসীদের আদর্শিক সংঘাত রয়েছে। ৯২ সালের ডাকসু নির্বাচন বন্ধেও লাল সন্ত্রাসের অবদান রয়েছে। লাল সন্ত্রাসের ঘোষণাকারী মেঘমল্লার বসুকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনাতে হবে।’
গতকাল রাতে মেঘমল্লার বসু ‘একমাত্র পথ হলো লাল সন্ত্রাস’ এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইংরেজিতে একটা পোস্ট করেন। পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, ‘একমাত্র পথ হলো লাল সন্ত্রাস, প্রান্তিকদের সুবিধার জন্য আত্মরক্ষামূলক সহিংসতা। যত দিন আমরা শুধু প্রার্থনা সভা এবং মিছিল করে যাব- যা কখনো সহিংসতায় পরিণত হওয়ার সক্ষমতা রাখে না, তত দিন তুমি তোমার কমরেডদের সুরক্ষিত করতে পারবে না। মানুষ তোমাকে পছন্দ করবে, কিন্তু কেউ অনুপ্রাণিত হবে না। আরেকটি “উদারপন্থী” দলের প্রয়োজন কারও নেই। কেউ ইচ্ছাকৃত শহীদদের গ্রাহ্য করে না। একমাত্র ভালো ফ্যাসিস্ট হলো মৃত ফ্যাসিস্ট।’
তাঁর পোস্টে আরও উল্লেখ করেন, ‘এই ডানপন্থী উন্মাদনার মধ্যে তোমাকে সার্বভৌমত্বের নামে হত্যা করা হবে এবং তারপর তোমার চরিত্র হনন করা হবে। উন্মাদ উদারপন্থী ও কেন্দ্রপন্থীরা, যারা ইতিমধ্যেই তাদের মন-প্রাণ ডানপন্থার কাছে বিক্রি করে দিয়েছে, তারা দাবি করবে এটি ছিল একটি সাংস্কৃতিক যুদ্ধ এবং উভয়পক্ষই খারাপ। তোমার কমরেড খুবই কম। তুমি একটিকেও হারানোর মতো অবস্থায় নেই। আর মানুষ ভেড়ার মতো। তুমি কি সারা জীবনের জন্য একজন রাখাল হওয়ার জন্য প্রস্তুত?’
মেঘমল্লারর আরও উল্লেখ করেন, ‘পাবলিক ডেমোনস্ট্রেশন করা বন্ধ করো। কমিটির কার্যক্রম প্রকাশ্যে প্রচার করা বন্ধ করো। আমরা যদি সতর্ক না হই, তাহলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাব। দাঁত আর নখ বেরিয়ে আসছে। ট্রল আর মিম করে এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব না। এবার এটি গোপনে নিয়ে যাও, কমরেড। সমন্বয় করুন। এর বেশি প্রকাশ্যে বলার প্রয়োজন নেই।’
এ দিকে আজ শনিবার দুপুরে আরেক পোস্টে মেঘমল্লার বসু উল্লেখ করেন, ‘আমি ঐকান্তিকভাবে আমার কমরেডদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আপনারা মাঠে লড়তেছেন আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির জন্য। এমতাবস্থায় আমার “অক্ষম আস্ফালন” শুধুই একটা ডাইভার্শনের সুযোগ তৈরি করল। এর বাইরে যা বলছি তা কোর্টে, পাবলিকে, আখেরাতে সর্বত্র ডিফেন্ড করতে প্রস্তুত। কিন্তু ফেসবুকে আর না। মামলা দিলে মামলা দেন, নাটক কইরেন না। পরবর্তীতে আমারে বোমা মারলেও আর ফেসবুক প্রতিক্রিয়া পাবেন না, ধন্যবাদ।’