জুলাই আন্দোলনে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সম্মেলনের মাধ্যমে দল পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। বরিশাল বিভাগে এই কাজ থমকে আছে। কারণ হিসেবে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, স্থানীয় নেতাদের চাপ, বাধা এবং প্রভাব খাটানোকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত ২৫ নভেম্বর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে সাত সাংগঠনিক জেলার (ছয় জেলা ও এক মহানগর) কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে শেষ করার তাগিদ দেওয়া হয়। এ জন্য বিভিন্ন কমিটিও করে দেওয়া হয়েছে। বরিশালের সাত সাংগঠনিক জেলা কমিটি পুনর্গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে (টিম লিডার) দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুকে। তিনি আহ্বায়ক কমিটি করে দিয়েছেন সম্মেলন আয়োজনের জন্য। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা হলেন বরিশাল মহানগরের আহ্বায়ক ছাত্রনেতা হাসান মামুন, বরিশাল জেলা দক্ষিণ ও ঝালকাঠির আহ্বায়ক হায়দার আলী লেলিন, বরিশাল জেলা উত্তরের আহ্বায়ক মো. দুলাল হোসেন, ভোলা জেলার আহ্বায়ক আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ, পিরোজপুর ও বরগুনার আহ্বায়ক কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহানগর বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক হাসান মামুন গত ২২ ফেব্রুয়ারি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই দিন হাসান মামুন বলেন, আটজন যুগ্ম আহ্বায়কের নেতৃত্বে নগরের ৩০টি ওয়ার্ডে আটটি সাংগঠনিক টিম করা হবে। তারা প্রাথমিক পর্যায়ে নতুন ও পুরোনো সদস্য নবায়ন করবে। কিন্তু এরপর হাসান মামুন নগর কমিটি নিয়ে এগোননি। ১৬ মার্চ অনুষ্ঠিত বিভাগীয় মতবিনিময় সভায়ও হাসান মামুনকে দেখা যায়নি।
নগর বিএনপির একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হাসান মামুনকে পূর্ণাঙ্গভাবে দায়িত্ব না দেওয়ায় তিনি নগর কমিটি নিয়ে এগোচ্ছেন না। তার ওপর কোন্দলও নগরে প্রকট।
নগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন বলেন, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির মহানগরের আহ্বায়ক হাসান মামুনের সঙ্গে একটি সভা হয়েছে। এ নিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে কাজ শুরু হয়েছে। কাজ চলমান। এ বিষয়ে জানতে হাসান মামুনকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি তা ধরেননি।
এদিকে বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সম্মেলনের কোনো অগ্রগতি নেই। একই অবস্থা উত্তর জেলা বিএনপিরও। দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আবুল কালাম শাহিন জানান, দল পুনর্গঠনে সম্মেলনের কোন পর্যায়ে আছে, তা তাঁরাও জানেন না। কীভাবে কাজ করবেন, এ জন্য আহ্বায়কের কাছে একটি চিঠি চেয়েছিলেন। কিন্তু তা-ও পাননি। আহ্বায়ক এখন পর্যন্ত দিকনির্দেশনাই দেননি তাঁদের।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক হায়দার আলী লেলিনকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলে তিনিও তা ধরেননি।
এদিকে ভোলা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম নবী আলমগীর বলেন, ‘সম্মেলন করার জন্য যে কমিটি করে দেওয়া হয়েছিল, তা কোনো পর্যায়েই এগোয়নি। ভোলায় আনুষ্ঠানিক সভাও হয়নি। যিনি আহ্বায়কের দায়িত্বে তিনি এখনো ভোলায় আসেননি।’
বিষয়টি স্বীকার করেন ভোলার সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক আবু নাসের। তিনি বলেন, ‘রমজানের ব্যস্ততায় এখনো ভোলায় গিয়ে নেতাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বসা হয়নি। যে কারণে সেভাবে সমন্বয় করে সম্মেলন প্রস্তুত করাও যায়নি।’
বিভাগের সাতটি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে একমাত্র পিরোজপুরেই দৃশ্যমান কাজ হয়েছে। পিরোজপুর ও বরগুনার দায়িত্বপ্রাপ্ত আহ্বায়ক কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু বলেন, ‘ঈদের পরে ৫ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে বরগুনার ওয়ার্ড পর্যায়ে কাজ শেষ করা হবে। তবে পিরোজপুরের আটটি ইউনিটের কাজ শেষ হয়েছে। দল সম্মেলনের জন্য ৯০ দিন সময় দিলেও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিলম্বে হয়েছে।’
সার্বিক বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসর রহমান বলেন, ‘যেসব স্থানে দলীয় প্রভাব এবং বাধা রয়েছে সেখানে অভ্যন্তরীণ কাজ করা হচ্ছে। যেমন ভোলায় মাঠপর্যায়ে নেতাদের মধ্যে সমস্যা আছে। মহানগর কমিটির সম্মেলন করার অগ্রগতি খুব যে একটা হয়েছে, তা-ও নয়। তবে কাজ শুরু করা গেছে।’ দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে সম্মেলন না করতে পারা প্রসঙ্গে কুদ্দুস বলেন, ‘আমরা কি শুধু ওই কাজ করার জন্য বসে থাকি। দল তো নানা কর্মসূচিও দিচ্ছে।’