নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
দেশের বামপন্থীরা কী চায়, তা সাধারণ মানুষের কাছে পরিষ্কার হয় না বলে মন্তব্য করেছেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে বাম ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত ‘এই সময়ের রাজনীতি ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশের বামপন্থীরা নির্বাচনের মাধ্যমে কী চায় তা সাধারণ মানুষর কাছে পরিষ্কার ধারণা দিতে হবে জানিয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘বামপন্থীরা অনেক নির্বাচন বয়কট করেছে, বুর্জোয়ারাও করেছে। কিন্তু বুর্জোয়ারা কেন বয়কট করেছে তা মানুষ বুঝতে পারে। বামপন্থীরা কেন করে তা মানুষ বোঝে না। বামরা কী চায় তা সাধারণ মানুষের কাছে পরিষ্কার হয় না। এটা পরিষ্কার করতে হবে।’
উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের সময় সারা বিশ্বে সমাজতন্ত্রের বিপুল সম্ভাবনা ছিল জানিয়ে বামপন্থীদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘কিন্তু তখনই বামপন্থী নেতারা কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র গণসংগঠন ছেড়ে বিপ্লবী পার্টি করার সিদ্ধান্ত নিলেন। আমি মনে করি এটা সবচেয়ে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ছিল। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময়ও বামপন্থীরাই আন্দোলন করেছে, কিন্তু নেতৃত্ব তুলে দিয়েছিল শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়ার হাতে। বামপন্থীরা কোনোভাবেই নিজেদের মেরুদণ্ডের ওপর দাঁড়াতে পারছে না। তারা সব সময় মনে করে একটা বড় দল দরকার।
বাংলাদেশ সম্পূর্ণরূপে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে জানিয়ে আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতা মূলত পুঁজিবাদ বিকাশের স্বাধীনতা। পাকিস্তানের লক্ষ্য ছিল একটা পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হওয়া। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে পুঁজিবাদের বিকাশ ঘটিয়েছে।’
করোনার মধ্য দিয়ে বৈষম্য কয়েক গুণ বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাদী ব্যবস্থা চলতে থাকলে পৃথিবীতে মানুষ, জীববৈচিত্র্য টিকতে পারবে না। সারা পৃথিবীতেই এখন মানুষ বলছে, পুঁজিবাদ চলবে না। সামাজিক বিপ্লব প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে মওলানা ভাসানী প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন। সামনে সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক বিপ্লব হবে। সে জন্য দেশের বামপন্থীদের আরও কাছাকাছি এসে প্রস্তুত থাকতে হবে।’
বাম ঐক্য ফ্রন্টের সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন আহমেদ নাসুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, ৯ সংগঠনের সমন্বয়ক জাফর হোসেন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক সারওয়ার মোর্শেদ প্রমুখ।