নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘গণতন্ত্র মানেই সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন। কিন্তু সংখ্যালঘুর কথা শুনতে হবে, পছন্দ না হলেও। সংবিধানকে সংস্কার করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ১০–এর মধ্যে ৪ দিতে চাই। এখন যারা সরকারে রয়েছে, তারা যার যার জায়গায় সেরা। কিন্তু এখন তো অন্য জায়গায় তাঁরা। আমাদের দেশে নির্বাচনে যেসব অপসংস্কৃতি রয়েছে, সেগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’
আজ শুক্রবার খামারবাড়ী কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘“এ”-এর জায়গা “বি” দখল করবে এবং সে জায়গায় গিয়ে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবার সময় এখন নয়। এখন সময় হচ্ছে, “এ” গেছে, তারপর সমস্ত জনগোষ্ঠীর সম্মিলিত মতের ভিত্তিতে একটা উন্নত জ্ঞানের চর্চার মধ্য দিয়ে সে রকম একটি সংস্কৃতি—দল ও দেশের জন্য গড়ে তুলব। সাধারণ মানুষ জীবন দিয়েছে। তাদের লড়াইয়ে স্লোগান উঠে এসেছে, আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ চাই। অর্থাৎ গুম, খুন, লুটতরাজ, ধর্ষণ, আয়নাঘর—এসব চলবে না। আমরা তার বদলে উৎকর্ষ কোনো জিনিস সেখানে প্রতিষ্ঠিত করব।’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, ‘স্বাধীনতার পর দেশটিকে নতুনভাবে গড়ার সুযোগ এসেছিল, আমরা সেটা করতে পারিনি। কিন্তু আমাদের সামনে আবার সুযোগ এসেছে, আমাদের পারতে হবে। বাংলাদেশে আর কোনো ফ্যাসিজম আমরা কায়েম করতে দিতে পারি না। ফ্যাসিজম ফিরে আসে যখন জাতি ফ্যাসিজমের ইতিহাস ভুলে যায়। যে দেশ ঐক্যবদ্ধ থেকেছে, সেখানে ফ্যাসিজম প্রতিরোধ করতে পেরেছে। ফ্যাসিজমবিরোধী আমরা যে ঐক্য গড়েছি, সেটা সাস্টেইনেবল করতে হবে। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে জাতীয় ঐক্য থাকতে হবে। মানবাধিকার, গণতন্ত্র, ভোটাধিকারের প্রশ্নেও ঐক্য থাকতে হবে।’
সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহসানুল হক মিলন বলেন, ‘আমরা শুরুতেই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সবার আগে শিক্ষা কমিশন আশা করেছিলাম, তবে সেটা সংস্কার কমিশন নয়। বাংলাদেশকে উন্নত জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে স্থায়ী শিক্ষা কমিশন করতে হবে। বিগত সরকার শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে।’
তিনি বলেন, দলগুলোতে গণতান্ত্রিক প্র্যাকটিস থাকলে মনোনয়ন–বাণিজ্য হবে না। বিএনপিতে গণতন্ত্র রয়েছে। এ কারণে বিএনপিতে মনোনয়ন–বাণিজ্য হবে না।
এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘’৫২, ’৬২, ’৬৯, ’৭১, ’৯০ প্রত্যেকটা আন্দোলনে তরুণেরা নেতৃত্ব দিয়েছিল। এবার ১৫ বছরের সংগ্রামের চূড়ান্ত রূপ দিয়েছে ছাত্ররা। তরুণদের নিয়েই আগামীর পরিবর্তন আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমরা চাই তারুণ্যনির্ভর আগামীর বাংলাদেশ গড়তে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন বলেন, ‘যে সংস্কারটুকু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করবে, আমরা সেই সংস্কার চাই। সংস্কার প্রস্তাবনা যুগপৎ আন্দোলনের দলগুলো অনেক আগে থেকেই দিচ্ছে। ২০১৬ সালে বিএনপি সংস্কার প্রস্তাবনা দিয়েছিল। ২০১৩ সালে তারেক রহমান কোটার সংস্কার চেয়ে কথা বলেছিলেন। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ এবং পরপর দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়া—এসব বিষয়ে অনেক আগেই কথা বলেছেন। আমরা ক্ষমতায় আসলে ক্ষমতাসীন দল বলব না, আমরা বলব দেশ গড়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত দল।’
তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসলে শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত ভাতার ব্যবস্থা করবেন।’
প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশের (পিইউএসএবি) প্রতিনিধি তানজিল মাহমুদ বলেন, ‘বিগত ৯ বছর ধরে দেশের জন্য প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা যখনই প্রয়োজন হয়েছে আন্দোলন করেছে। এবারের আন্দোলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটার জন্য নামেনি। কারণ, তাদের কোটা প্রয়োজন হয় না। আমরা নেমেছি শিক্ষার্থীদের হত্যার বিচারের দাবিতে। দাবি থাকবে, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সুযোগ দিন। তাদের জাতীয় রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ দিন।’
আদিবাসী প্রতিনিধি ইলিরা দেওয়ান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে যেভাবে নিজেদের মতো করে রাখত, সংখ্যালঘুদের রক্ষাকারী দাবি করত। তাহলে গত ১৫ বছর কেন মন্দির রক্ষা করতে পারেনি, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি? সুতরাং, তারা মিষ্টি মিষ্টি কথা বললেও কাজ করেনি। জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গড়তে আমরা সবাই মিলে কাজ করতে চাই।’
ইউনিভার্সিটি অব বাফেলোর সহযোগী অধ্যাপক অধ্যাপক নাদিন শান্তা মুরশিদ বলেন, ‘হাসিনা খুনি না হলে হয়তো আমরা তাঁর পতন দেখতে পারতাম না। কিছু মানুষ মারা গেলে মর্যাদা বাড়ে। আবু সাঈদ, মুগ্ধ তেমনই।’
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘‘২৪-এর আন্দোলনে ছাত্র-জনতা যে ধরনের সংস্কার চায়, ছাত্রশিবিরও তা চায়। আমাদের ছাত্ররাজনীতিতে ছাত্রদের অধিকার নিয়ে রাজনীতি হয় না। ছাত্ররাজনীতি সংস্কারের প্রথম উদ্যোগ হতে পারে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। প্রতিবছর এ নির্বাচন হবে, যার মাধ্যমে ছাত্ররা নিজেদের নেতৃত্ব নির্বাচন করব, যারা তাদের কথা বলবে।’
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ আহমেদ বলেন, ‘শহীদের তালিকা এখনো পুরোপুরি হয়নি। তাদের পরিবারগুলো সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়নি। চার মসে সরকারের অর্জন কতটুকু? এখনো সরকার তাদের নির্বাচনের রোডম্যাপ স্পষ্ট করেনি। এটি বিভাজন তৈরি করছে। এখন যে অনৈক্য সৃষ্টি হয়েছে, তার দায় সরকার এড়াতে পারবে না।’
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ‘বিএনপির সহযোগী সংগঠন হলেও ছাত্রদল স্বতন্ত্রভাবে পরিচালিত হয়। আমরা বিএনপির কোনো সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দিই না। খুনি সংগঠন ছাত্রলীগ লেজুড়বৃত্তিক শব্দকে গত ১৫ বছর ধরে এত কলুষিত করেছে যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এটা নিয়ে ভীতি তৈরি হয়েছে। ছাত্ররাজনীতির নামে নিকৃষ্ট সব নজির তারা স্থাপন করেছিল। বাংলাদেশের সব ছাত্রসংগঠনেরই মূল দল রয়েছে। বামধারার রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনগুলোরও মূল দল রয়েছে। আমরা গত কয়েক মাসে ৩০০ জনকে বহিষ্কার করেছি।’