হোম > রাজনীতি

ছাত্ররাজনীতিতে ঐক্যের পর অনৈক্যের সুর

সাখাওয়াত ফাহাদ ও সিদ্দিক ফারুক, ঢাকা

ফাইল ছবি

আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও তাঁর আমলে গড়ে ওঠা ‘ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার’ বিলোপ প্রশ্নে দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের মধ্যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ৪ মাসের মাথায় তাদের মধ্যে বাজছে অনৈক্যের সুর। জুলাই-আগস্ট গণ-আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর অধিকাংশ ছাত্রসংগঠন বিষয়টি দৃশ্যত নেতিবাচকভাবে দেখছে। তাঁরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে অগ্রাধিকার পাওয়া ও অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী নেতাদের সমন্বয়হীনতার অভিযোগ তুলেছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্র রাজনীতির প্রশ্নে ছাত্রসংগঠনগুলো কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতৃত্বাধীন অংশ জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পর থেকে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক দলের ‘লেজুড়বৃত্তিক’ ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে আসছে। ‘অঙ্গ’, ‘সহযোগী’, ‘ভ্রাতৃপ্রতিম’ ইত্যাদি বিভিন্ন প্রত্যয়ে চিহ্নিত হলেও দেশের মূলধারার সব ছাত্র, শ্রমিক, পেশাজীবী সংগঠনই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। রাজনৈতিক দলগুলোর মূল রাজনৈতিক আদর্শ, কর্মসূচি ও কার্যকলাপ বিনা প্রশ্নে অনুসরণের কারণে ছাত্রসংগঠনগুলোর এ রাজনীতি বেশ কিছুদিন ধরেই ‘লেজুড়বৃত্তি’ হিসেবে সমালোচিত হয়ে আসছে। তবে ছাত্রসংগঠনগুলো এই বিশেষ রাজনৈতিক আবহে কথিত ‘লেজুড়বৃত্তি’ কার্যকলাপ বন্ধের সাম্প্রতিক প্রচারণাকে পছন্দ করছে না। কারণ তারা একে বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়ার অংশ মনে করছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ সংগঠনগুলোর মতে, এ প্রক্রিয়া ছাত্ররাজনীতিসহ দেশের সামগ্রিক রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।

গত মাসের শেষে সব ছাত্রসংগঠনের সমন্বয়ে ‘জাতীয় ছাত্র কাউন্সিল’ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তাতে সাড়া দেয়নি ছাত্রদলসহ উল্লেখযোগ্য ছাত্রসংগঠনগুলো। তাদের নেতারা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করার কথা থাকলেও শুধু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও তাঁদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদেরই এতে নেওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছাত্র প্রতিনিধিদের সভায়ও ডাক পাননি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছাত্র সংগঠনের নেতারা। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, বৈষম্যবিরোধী ও সংশ্লিষ্টরা নিজেদের মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে, তা সব ছাত্রসংগঠনের সিদ্ধান্ত বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

এ বিষয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ছাত্রনেতাদের সঙ্গে আলোচনার নামে কেবল কয়েকজন সমন্বয়কের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এতে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে যে অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় ঐক্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা এখন একটি পক্ষের সংকীর্ণ গণ্ডিতে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি সালমান সিদ্দিকী আজকের পত্রিকাকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সব সংগঠনকে বাদ দিয়ে অগণতান্ত্রিক উপায়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐক্য নষ্ট হচ্ছে।

ছাত্র ফেডারেশনের (গণসংহতি) সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ বলেন, সব ক্ষেত্রে নিজেদের গোষ্ঠীগত স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অন্যান্য ছাত্রসংগঠনকে দূরে ঠেলে দিয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে বৈষম্যবিরোধীদের বাদ দিয়েই পাল্টা ঐক্য গড়তে আলোচনা চালাচ্ছে রাজনৈতিক দলকেন্দ্রিক ছাত্রসংগঠনগুলো। গত বুধবার অনলাইনে এবং বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাঁটাবনের একটি রেস্তোরাঁয় বৈঠক করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ফেডারেশন (গণসংহতি), ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনসহ ২৮টি ছাত্রসংগঠন। এ বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। উপস্থিত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে বাদ দিয়ে অন্য ছাত্রসংগঠনগুলোর ঐক্য সৃষ্টি চেষ্টা চলছে। আগামীতে বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে ‘যুগপৎ’ অথবা ‘ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্মের’ মাধ্যমে এ সংগঠনগুলো কর্মসূচি চালিয়ে যেতে পারে। চলতি সপ্তাহেই ছাত্রসংগঠনগুলোর আবারও বৈঠকে বসার কথা রয়েছে।

এদিকে এমন প্রেক্ষাপটে আগামী জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকেই শিক্ষায়তনগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বুধবার কিছু সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর এ দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। এ সময় তিনি জানান, মতবিনিময়ে উপস্থিত ছাত্রসংগঠনগুলো চায় আগামী জানুয়ারির শেষে অথবা ফেব্রুয়ারির শুরুতে ডাকসুসহ সব ছাত্র সংসদ নির্বাচন শুরু হোক।

মূলধারার ছাত্রসংগঠনগুলো বলছে, বুধবারের ওই মতবিনিময়ে তাদের কোনো প্রতিনিধি ছিল না। উপস্থিত কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রশিবির ছাড়া আর কোনো মূলধারার ছাত্রসংগঠন সেখানে ছিল না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ সভায় ৩০টি সংগঠনের উপস্থিত থাকার কথা বলেছেন। তবে অন্যদের দাবি, মতবিনিময়ে এতগুলো সংগঠনের প্রতিনিধি ছিলেন না। যেসব সংগঠনের প্রতিনিধি ছিলেন, সেগুলোর অধিকাংশই অভ্যুত্থানের পর গঠিত হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসনাত আবদুল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা ছাত্র সংসদকেন্দ্রিক ছাত্ররাজনীতি চাই। আমরা “মাদার পার্টির” (মূল রাজনৈতিক দল) কোনো লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি চাই না। কারণ তা হলে ক্ষমতা কাঠামোকে প্রশ্ন করা যায় না। ছাত্ররাজনীতি এমন হতে হবে, যেটা ক্ষমতা কাঠামোকে প্রশ্ন করতে পারে। মাদার পার্টির অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের রাজনীতি হলে গেস্টরুম-গণরুমভিত্তিক রাজনীতি চালু হবে।’

ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাহিত্য সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি ছিবগাতুল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আগামী দিনে ছাত্ররাজনীতি দলীয় অ্যাজেন্ডার ভিত্তিতে নয়; বরং ছাত্রদের অধিকারের ভিত্তিতে পরিচালিত হতে হবে। ছাত্ররাজনীতি হবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কল্যাণে। তাঁদের একাডেমিক বিষয়ের যেন ক্ষতি না হয়, সে রকম কাজই হবে ছাত্ররাজনীতি।’

ছাত্রনেতাদের মধ্যে এ বিভক্তি প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা ঐক্যের তাগিদ দিয়ে বলেছেন, জাতির ক্রান্তিলগ্নে নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো এড়িয়ে ভারত, আওয়ামী লীগ, সংস্কারসহ জনগুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে ছাত্রসংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। রাজনীতি বিশ্লেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শামসুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ছাত্রদের মধ্যে ঐক্য বজায় না থাকলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব। নানা পক্ষ সুযোগ নেবে। নানা বিষয়ে মতপার্থক্য থাকবে, তবে তা বড় করে না দেখে এখন প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ থাকা।’

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতি’ চলছে, একাত্তরের মতো ষড়যন্ত্র হচ্ছে: ছাত্রদল

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নেতাদের সঙ্গে বিএনপির মতবিনিময়

মধ্যরাতে ঢাবিতে বঙ্গবন্ধু ও সিরাজ সিকদারের ছবি মুছল কারা

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

দু-এক দিনের মধ্যেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সিদ্ধান্ত

শনিবার ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ করবে ছাত্রদল

সংসদে কোনো নারী কোটা থাকা যাবে না: মুফতি ফয়জুল করীম

আ.লীগ উন্নয়নের নামে টাকা পাচার করেছে: রিজভী

তরুণ প্রজন্মের শক্তিতে বাংলাদেশের চিত্র পাল্টে যাবে: মির্জা ফখরুল

এক–দুই দিনের মধ্যেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত

সেকশন