হোম > রাজনীতি

পাঁচ মাসে গ্রেপ্তার ১৫ হাজার, বেশির ভাগ রাজনীতিক

রাসেল মাহমুদ, ঢাকা

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯: ৩০
আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮: ৫২
প্রতীকী ছবি

জুলাই-আগস্টের গণহত্যা, হত্যা ও অতীতের গুম-খুন, অনিয়ম-দুর্নীতিসহ বিভিন্ন মামলায় গত পাঁচ মাসে সারা দেশে প্রায় ১৫ হাজার জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রাজনীতিক। এরপরই আছেন পুলিশের কর্মকর্তা। রয়েছেন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী আমলা, ব্যবসায়ী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি ও সাংবাদিক।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে হত্যা এবং তাঁদের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৫ আগস্টের পর থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় ২ হাজার ৩৮৫টি মামলা হয়েছে। এর পাশাপাশি অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগেও অনেক মামলা হয়েছে। হত্যা, হামলাসহ বিভিন্ন মামলায় গতকাল পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে শুধু অক্টোবরেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৬ হাজার জনকে। গত পাঁচ মাসে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে সংখ্যার দিক থেকে শীর্ষে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মী।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের বেশির ভাগ নেতা-কর্মীই আত্মগোপনে চলে যান। তাঁদের কেউ কেউ পরে গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং কেউ কেউ বিদেশে চলে যান।

৫ আগস্টের পর বিগত সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের মধ্যে প্রথম গ্রেপ্তার হন দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনের আওয়ামী লীগদলীয় এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী। গ্রেপ্তার ও মামলার তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তিন উপদেষ্টাসহ সাবেক ৩৫ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রী, সাবেক ৩৮ সংসদ সদস্য, সাবেক ১১ সচিব, সাবেক দুই আইজিপিসহ ২৮ পুলিশ কর্মকর্তা, সাবেক বিচারপতি, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও আনসার সদস্য মিলিয়ে ৮ জন, ৫ জন সাংবাদিক এবং ব্যবসায়ী, সাংস্কৃতিক কর্মী, আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মী রয়েছেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, যৌথ বাহিনী, পুলিশ, র‍্যাবের অভিযানে হত্যাসহ বিভিন্ন মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামি যে-ই হোন না কেন, তাঁদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক উপদেষ্টাসহ ৩৫ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী

এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রভাবশালী ৩ উপদেষ্টা, সাবেক ২৪ মন্ত্রী, ৫ প্রতিমন্ত্রী ও ৩ উপমন্ত্রী। তাঁরা হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী; শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী; সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক; সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি; সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু; সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান; সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান; সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক; সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন; সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু; সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম; সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ; সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস। লতিফ বিশ্বাসকে গত রোববার গ্রেপ্তার করা হয়।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তাঁর সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী, পুলিশের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গুমের অভিযোগও রয়েছে।

সাবেক ৩৮ এমপিসহ আ.লীগ ও ১৪ দলের অনেক নেতা গ্রেপ্তার

গত পাঁচ মাসে গ্রেপ্তার হয়েছেন মোহাম্মদ আলীসহ সাবেক ৩৮ এমপি। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দ্বাদশ সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, কাজী জাফর উল্যাহ, আহমদ হোসেন, আবদুস সোবহান গোলাপ, হাজি মো. সেলিম, সোলায়মান সেলিম, আবদুর রহমান বদি, ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

গ্রেপ্তার নেতাদের মধ্যে রয়েছেন মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ, কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ, যুবলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. আনোয়ারুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক তরীকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব ও সাবেক এমপি এম এ আউয়াল, ডাকসুর সাবেক ভিপি ও সাবেক এমপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, তৃণমূল বিএনপির আহ্বায়ক শমশের মুবিন চৌধুরী। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামও গ্রেপ্তার হয়েছেন।

সাবেক দুই আইজিপিসহ ২৮ পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার

জুলাই-আগস্টে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, হামলার মামলায় গ্রেপ্তারে সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে পুলিশ কর্মকর্তারা। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন মামলায় ৯৫২ জন পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে সাবেক দুই আইজিপিসহ ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে রয়েছেন সাবেক দুই আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মশিউর রহমান, ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, অতিরিক্ত উপকমিশনার (সুপারনিউমারারি উপকমিশনার হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) শাহেন শাহ, জুয়েল রানা, রংপুরে শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলায় এএসআই মো. আমির হোসেন, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান, পুলিশ পরিদর্শক আরাফাত হোসেন।

হত্যা, গুমসহ বিভিন্ন অভিযোগে এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক ও চাকরিচ্যুত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোহাম্মদ সোহায়েল এবং আনসার বাহিনীর ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কারাগারে আছেন প্রভাবশালী সাবেক ১১ আমলা

সাবেক ১১ আমলাকেও গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ ও নজিবুর রহমান, নির্বাচন কমিশনের ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. জাহাংগীর আলম, হেলালুদ্দীন আহমদ।

এ ছাড়া আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি শাহরিয়ার কবির, গানবাংলা টিভির এমডি ও সিইও কৌশিক হোসেন তাপস, অভিনেত্রী শমী কায়সারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

হত্যাসহ বিভিন্ন মামলায় সারা দেশে এ পর্যন্ত প্রায় ৭০ সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে বেসরকারি চ্যানেল একাত্তর টেলিভিশনের সিইও মোজাম্মেল হক বাবু, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তসহ পাঁচ সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের এমডি দিলীপ কুমার আগারওয়াল, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম আশরাফুল ইসলাম, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলামও গ্রেপ্তার হয়েছেন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, পৌরসভার সাবেক মেয়র, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা রয়েছেন।

অধিকাংশ মামলার তদন্ত শুরু হয়নি

জুলাই-আগস্টের গণহত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে করা প্রায় ২ হাজার ৪০০ মামলা হলেও বেশির ভাগের তদন্ত এখনো শুরু হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, এই সুযোগে স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিরা ‘বাণিজ্য’ করতে নিরীহ মানুষকেও মামলায় আসামি করেছে।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে হত্যা ও নাশকতার অভিযোগে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের করা ২৬৫টি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক ইনামুল হক সাগর বলেন, মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত যাঁরা রয়েছেন, তাঁদেরকেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না। গণহত্যা, হত্যা, নির্যাতন ও অতীতের গুম, খুনের মামলার তদন্ত চলছে।

সাড়ে ৭ বছর পরে দেখা হলো মা-ছেলের

লন্ডনে পৌঁছেছেন খালেদা জিয়া

খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়ির চাকায় সোহেলের পায়ে চোট

দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন খালেদা জিয়া: বিমানবন্দরে মির্জা ফখরুল