দেশের ক্রিকেটের অনেক ইতিহাস বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। বর্তমান প্রজন্মের ক্রিকেটাররা এই মাঠে খেলার সুযোগ না পেলেও বাংলাদেশর ক্রিকেটের অনেক স্মৃতিময় মুহূর্তের জন্ম হয়েছে এখানেই। আজ সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে যেন ওই মাঠে ফিরল কিছু অতীতও। জাতীয় দল ও আশপাশে থাকা ৩৪ ক্রিকেটার আজ ফিটনেস টেস্ট দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিসিবিতে কাজ করা অনেকেই, যাঁরা একসময় এই মাঠে ক্রিকেট খেলেছেন। তীর্থভূমিতে ফিরে পুরোনো স্মৃতি সতেজ হয়ে ওঠে তাঁদের।
খেলোয়াড়দের ফিটনেস টেস্ট এবার একটু ব্যতিক্রম ছিল। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকে মুশফিকুর রহিম-মাহমুদউল্লাহরা দৌড়ালেন টানা চার চক্করে ১৬০০ মিটার। ১৭ জন করে দুই দলে রানিং পরীক্ষা দিয়েছেন ৩৪ ক্রিকেটার। পুরো প্রক্রিয়াটি তদারকি করছেন বিসিবির নতুন কন্ডিশনিং কোচ ও ট্রেইনার নাথান কেইলি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন অন্য ট্রেইনাররাও।
দুই ধাপের রানিং টেস্টে প্রথম হয়েছেন দুই পেসার। প্রথম ধাপে ১৬০০ মিটার দৌড়ে সবচেয়ে কম সময় নিয়েছেন তানজিম হাসান সাকিব। আর বেশি সময় নেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দ্বিতীয় ধাপের দৌড়ে আরেক পেসার নাহিদ রানা হয়েছেন প্রথম। সবার শেষে ছিলেন শামীম হোসেন। দুই দল মিলিয়ে ১৬০০ মিটার দৌড়ে সবচেয়ে বেশি সময় নিয়েছেন শামীমই। এই দৌড়কে বলা হচ্ছে ফিজিক্যাল পারফরম্যান্স অ্যাসেসমেন্ট।
ট্রেইনার ন্যাথান কেইলি চেয়েছেন এ রকম একটা জায়গায় ক্রিকেটারদের স্প্রিন্ট দেখে কার ফিটনেসের অবস্থা কেমন তা পরখ করতে। ভোর ৬টায় শুরু হয়ে রানিং সেশন চলে সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। ৩৯ ক্রিকেটার টেস্ট দেওয়ার কথা থাকলেও সাকিব আল হাসান দেশের বাইরে, মোস্তাফিজুর রহমান আইপিএল খেলছেন ভারতে, চোটের কারণে সৌম্য সরকার-তাইজুল ইসলাম ছিলেন না। আর ব্যক্তিগত কারণে ছুটি নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে প্রথম ধাপের পরীক্ষা শেষে খেলোয়াড়েরা ফেরেন মিরপুরে। সেখানে দিয়েছেন জিমসহ অন্যান্য পরীক্ষা।
রানিং টেস্ট প্রসঙ্গে বিসিবির ট্রেইনার মীর ইফতি খায়রুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘অনেক দিন আমরা ফিটনেস পরীক্ষা নিইনি ক্রিকেটারদের। এটাতে আসলে পাস-ফেলের কিছু নেই। খেলোয়াড়দের বর্তমান অবস্থা কী, তা জানা। বেশ কয়েকটা সিরিজ গেছে, বিপিএল গেছে, ডিপিএল যাচ্ছে, এরপর ওদের ফিটনেসের অবস্থা কী, সেটা জানার জন্য। এটা জানার পরে খেলোয়াড়দের আলাদা আলাদা কাকে কোন ফিটনেস ট্রেনিং করাতে হবে, এগুলো আমরা বের করব। তারপর ওদের জানিয়ে দেব, সেভাবে আমরা বাস্তবায়ন করব সেটি। ১৬০০ মিটার নিয়েছি তাদের কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমটা কীভাবে কাজ করে বা ওদের সামর্থ্য কেমন সব মিলিয়ে ফিটনেসের জানার জন্য।’
দৌড় পরীক্ষা শেষে সাবেক ক্রিকেটার ও বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার শাহরিয়ার নাফীসের স্মৃতি ভাগাভাগি, ‘বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আবারও ফেরা সত্যি দারুণ। আমাদের জীবনে খেলার প্রতি আগ্রহ তৈরি হওয়া, খেলা দেখে শেখা—সব এই স্টেডিয়ামকে কেন্দ্র করেই।’
এই প্রজন্মের ক্রিকেটাররা এই মাঠে না খেললেও নাফীসের ভাষায় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম সবার কাছেই আলাদা মাহাত্ম্য নিয়ে থাকবে ‘যারা একদম নতুন প্রজন্ম, তারা হয়তো এখানে খেলেনি। কিন্তু এই স্টেডিয়ামের কথা নিশ্চয়ই শুনেছে। অনেকের জন্ম ২০০০ সালের আশপাশে। তাদের খেলার কথাও নয়। তবে আইকনিক স্টেডিয়াম যেহেতু, এটার গল্প নিশ্চয়ই শুনেছে। দেখুন, সাধারণত সকাল ৬টায় ফিটনেস টেস্ট দেখতে এত মানুষের আশার কথা নয়। যেহেতু বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম, তাই এসেছে। সবার জন্যই দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল।’