ক্রীড়া প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রস্তুতি ম্যাচের ব্যর্থতাগুলো মাথাব্যথার কারণ হবে জেনেও সেটিকে পাত্তা দিচ্ছিলেন না কেউ। সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আমলে নেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও।
কিন্তু সকালের সূর্যটা দেখে নাকি বোঝা যায় দিনটি কেমন যাবে, বাংলাদেশও তেমন প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে আভাস পেয়েছিল সামনে বিপদ আসছে। সাকিব আল হাসান-মুশফিকুর রহিমদের জন্য সেই বিপদই বয়ে এনেছে স্কটল্যান্ড। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অভিযান শুরুর দিনেই বাংলাদেশকে ভড়কে দিয়ে বিশ্বকে চমকে দিয়েছে তারা।
মাসকাটের আল আমেরাত স্টেডিয়ামে আজ মাহমুদউল্লাহর দলকে ৬ রানে হারিয়ে দিয়েছে স্কটিশরা। স্কটল্যান্ডের ১৪০ রানের জবাবে বাংলাদেশ থামে ১৩৪ রানে। মূলত ব্যাটিং ব্যর্থতাতেই ডুবেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
যদিও দুর্দান্ত বোলিংয়ে স্কটল্যান্ডকে একটা সময় দিশেহারা করে তুলেছিল বাংলাদেশ। সেই স্কটিশদের ম্যাচে ফেরান ক্রিস গ্রিভস। প্রথমে ব্যাট হাতে ২৮ বলে ৪৫ রান করে দলকে লড়াকু পুঁজি এনে দিয়েছিলেন গ্রিভস। পরে লেগ স্পিন ভেলকিতে ২ উইকেট নিয়ে স্কটল্যান্ডের জয়ে বড় অবদান রাখেন তিনি। ম্যাচসেরার পুরস্কারটাও উঠেছে ৩১ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডারের হাতে।
শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ডেথ ওভারে ছন্নছাড়া বোলিং ভাবিয়ে তুলেছিল বাংলাদেশ সমর্থকদের। আজ স্কটল্যান্ডের বিপক্ষেও একই দশা বোলারদের। ১২ ওভার শেষে ৬ উইকেট খুইয়ে মাত্র ৫৫ রান করা স্কটিশরা শেষ ৮ ওভারে মোস্তাফিজুর রহমান-তাসকিন আহমেদদের ‘বেদম পিটিয়ে’ তুলেছে ৮৫ রান!
তবু লক্ষ্যটা নাগালেই ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু ব্যাটারদের কাণ্ডজ্ঞানহীন ব্যাটিং আর দায়িত্বশীলতার অভাবে হারতে হলো ম্যাচ।
বাংলাদেশের ওপেনাররা উইকেটে দাঁড়াবেন, বাজে শট খেলে আউট হবেন আর মাথা নিচু করে ডাগআউটের পথে হাঁটা দেবেন—দেশবাসীর কাছে এটি এখন পরিচিত দৃশ্য। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শুরুতেও দৃশ্যটার ব্যত্যয় ঘটেনি।
ধারাবাহিকভাবে অধারাবাহিকতার রেশ জারি রেখে সৌম্য সরকার ও লিটন দাস ফিরেছেন মিডল ও লোয়ার অর্ডারের ব্যাটারদের ওপর সব দায়িত্ব বর্তিয়ে। দুজনের আউটের ধরন আর স্কোরেও কী মিল! ৫ রান করে এক জর্জ মানসিকেই ক্যাচ দিয়েছেন তাঁরা।
শুরুর বিপর্যয় অবশ্য কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছিলেন দুই অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। তৃতীয় উইকেট ৪৭ রানের দারুণ এক জুটিও গড়ে তুলেছিলেন তাঁরা। তবে দুই তারকার মন্থর গতির ইনিংস আস্কিং রেটও বাড়াচ্ছিল তর তর করে।
নবম ওভারে প্রিয় শট স্লগ সুইপে টানা দুই ছক্কা হাঁকিয়ে চাপ কমান মুশফিক। ওই দুই ছক্কায় নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে বয়ে বেড়ানো বাজে সময়টাও ঝেড়ে ফেলেন তিনি।
আরেক প্রান্তে রয়ে-সয়ে খেলতে থাকা সাকিব একটু পর ধৈর্য হারান। দ্রুত রান তোলার চাহিদা মেটাতে গিয়ে লেগ স্পিনার গ্রিভসের প্রথম বলেই চালিয়ে খেলতে যান। কিন্তু গ্রিভসের সবচেয়ে বাজে ডেলিভারিটিকে বাউন্ডারির বাইরে আছড়ে ফেলতে পারেননি। ধরা পড়ছেন ম্যাকলিওডের হাতে। একটু পর মুশফিককেও বিদায় করেছেন গ্রিভস। বোল্ড হয়েছেন সেই ‘বিদঘুটে’ স্কুপ করতে গিয়ে।
এরপর আফিফ হোসেনই যা একটু ম্যাচে রেখেছিল বাংলাদেশকে। ১৮ তম ওভারে তিনি ফিরতেই ম্যাচ পুরোপুরি হেলে পড়ে স্কটল্যান্ডের দিকে। ২ রান করে আউট হয়েছেন নুরুল হাসান সোহান। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ২৩ রান করলেও ‘গিলেছেন’ ২২ বল।
একজন পাওয়ার হিটারের অভাব আরও একবার উচিত শিক্ষা দিয়ে গেছে বাংলাদেশকে। এ হারে সুপার টুয়েলভে ওঠার পথটাও দুর্গম করে ফেলল রাসেল ডমিঙ্গোর দল। সহ-আয়োজক ওমান ও নবাগত পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে বড় জয় ছাড়া বিকল্প নেই তাদের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
স্কটল্যান্ড: ১৪০/৯, ২০ ওভার
বাংলাদেশ: ১৩৪/৭, ২০ ওভার
ফল: স্কটল্যান্ড ৬ রানে জয়ী