ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে আগের দিনই জানিয়ে দিয়েছিল, সিডনি টেস্টে খেলছেন না রোহিত শর্মা। স্বেচ্ছায় সিডনি টেস্টের একাদশ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত সেটাই হয়েছে। তাঁকে ছাড়াই সিডনি টেস্ট খেলছে ভারত। রাখা হয়নি টিম শিটের ১৬ জনের তালিকায়ও। সব মিলিয়ে ভারতীয় অধিনায়কের টেস্ট ক্যারিয়ারে দাঁড়ি পড়ে গেল কি না সে প্রশ্নও উঠে গেছে।
তা-ই নয়, আসন্ন আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারতীয় দলে রোহিতের জায়গা হবে কি না, এসব নিয়েও ইতিমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যমে। সীমিত ওভারের নতুন অধিনায়কের ব্যাপারে হার্দিক পান্ডিয়া ও সূর্যকুমার যাদব আছেন আলোচনায়। বিসিসিআইয়ের এক কর্তা বলেছেন, ‘চাপের পরিস্থিতিতে নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা রয়েছে হার্দিকের। অধিনায়ক হিসাবে অভিজ্ঞ এবং দক্ষ অলরাউন্ডার। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মতো বড় প্রতিযোগিতায় হার্দিককে অধিনায়ক করা যেতেই পারে। শুবমানও (গিল) অধিনায়ক হতে পারে। তবে ওকে আরও পরিণত এবং অভিজ্ঞ হতে হবে। সূর্যকুমারও ভাবনায় রয়েছে। কিন্তু এক দিনের ক্রিকেটে ওর পারফরম্যান্স খুব ভালো নয়। রোহিতকে না পাওয়া গেলে ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে হার্দিকই যথাযথ বিকল্প হতে পারে। তাতে দলের ভারসাম্যও ভালো হবে।’
কুড়ি ওভারের সংস্করণ থেকে সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালের দিন বিদায় নিয়েছে রোহিত। প্রশ্ন উঠে গেছে কি, সুনীল গাভাস্কার ও রবি শাস্ত্রীও তো বলেই ফেললেন, রোহিতের টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ! ভারতের সাবেক অধিনায়ক গাভাস্কার ও সাবেক অলরাউন্ডার শাস্ত্রী দুজনেই বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজের ধারাভাষ্যে আছেন। সিডনিতে গতকাল ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় শাস্ত্রী বললেন, ‘সামনে যদি কোনো হোম সিরিজ থাকত, তাহলে সে হয়তো চালিয়ে যাওয়ার কথা ভাবতে পারত। আমার মনে হয়, এই টেস্ট শেষেই সে থেমে যাওয়ার ঘোষণা দেবে। তার বয়স তো কমছে না...এমন নয় যে, ভারতের তরুণ ক্রিকেটার নেই। অনেক ভালো ক্রিকেটার উঠে আসছে এবং গড়ে তোলার সময় এখনই। কঠিন সিদ্ধান্ত কিন্তু সবকিছুরই একটা সময় থাকে।’
আর গাভাস্কার বলছেন, রোহিত তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টটি খেলে ফেলেছেন মেলবোর্নেই। তাঁর ভাষায়, ‘ভারত যদি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলতে না পারে, আমার মনে হয় মেলবোর্ন টেস্টই হয়ে থাকবে রোহিত শর্মার শেষ ম্যাচ। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পরের চক্র শুরু হবে ইংল্যান্ড সিরিজ দিয়ে এবং নির্বাচকেরা এমন কাউকেই নিতে চাইবে, ২০২৭ ফাইনাল পর্যন্ত যাকে পাওয়া যাবে।’
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতের খেলার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। ফাইনালের আশা জিইয়ে রাখতে হলে চলতি সিডনি টেস্ট তো জিততে হবেই, এরপর আশায় থাকতে হবে অস্ট্রেলিয়ার শ্রীলঙ্কা সফরে দুই ম্যাচের টেস্টে সিরিজে সফরকারীদের ধবলধোলাই হওয়ায়। ভারতের সে আশা পূরণ হোক বা না হোক, বিসিসিআইর নির্বাচকেরা তারুণ্যের দিকে ঝুঁকবে বলেই মনে করে গাভাস্কার, ‘ভারত ফাইনালে খেলবে কী খেলবে না, সেটা আলাদা ব্যাপার। তবে নির্বাচক কমিটি হয়তো এমনটিই করবে। টেস্ট ক্রিকেটে সম্ভবত রোহিতকে শেষবারের মতো দেখে ফেলেছি আমরা।’
৩৭ ছাড়িয়ে আসছে এপ্রিলে ৩৮ বছরে পা রাখবেন রোহিত। বয়স কোনো ব্যাপার ছিল না, যদি ছন্দে থাকতেন তিনি। শেষ ১৫ ইনিংসে তাঁর রান ৬,৫, ২৩,৮, ২,৫২, ০,৮, ১৮,১১, ৩,৬, ১০,৩ ও ৯। একজন অধিনায়কের যেখানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা, এখন এমন রানখরা কি তাঁকে মানায়!
চলতি বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজের আগে দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের কাছে ধবলধোলাই হয়েছে ভারত। তখন থেকেই তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠার শুরু। সেটি আরও জোরালো হয়েছে অস্ট্রেলিয়া সফরে। সন্তান সম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকার জন্য প্রথম টেস্টে খেলেননি তিনি। পার্থে হওয়া সে টেস্ট কিন্তু বুমরার নেতৃত্বে জিতেছিল ভারতই। কিন্তু তিনি দলে যোগ দেওয়ার পর দলের স্কোরে অবদান রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় উল্টো ‘বোঝা’ হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
কারণ সেটাই কি না, মেলবোর্ন টেস্টের সময় থেকেই ভারতীয় দলে ‘অধিনায়ক রোহিত বনাম কোচ গম্ভীর’ গৃহবিবাদ নিয়ে জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে। দলের ড্রেসিংরুমে দুজনের বাদানুবাদের ভিডিওও ভাইরাল হয়েছে। মেলবোর্ন টেস্টের পরই নাকি সিডনিতে রোহিতকে বিশ্রামে রাখার পরিকল্পনা করেন রোহিত।
তা গম্ভীরের পরিকল্পনা থেকেই হোক কিংবা রোহিতের ইচ্ছাতেই, সিডনিতে তাঁর না খেলার সিদ্ধান্তটা প্রসংশাই কুড়োচ্ছে সবার। ভারতের সাবেক ক্রিকেটার সঞ্জয় মাঞ্জরেকার তো বলেই দিলেন, ‘দলের জন্য যেটা সঠিক, সেটাই করেছেন রোহিত।’
সিডনি টেস্টের এই বিশ্রামটা যদি পাকাপোক্তই হয়ে যায় ৬৭ টেস্টেই ক্যারিয়ার শেষ রোহিতের। ৪০.৫৭ গড়ে রান ৪৩০১।