ক্রীড়া ডেস্ক
সার্চ ইঞ্জিন গুগল বলছে, বাংলাদেশ থেকে জোহানেসবার্গের দূরত্ব ৮ হাজার ৬৯২ কিলোমিটার। কাগিসো রাবাদার সঙ্গে ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্ক থাকার উপায় নেই মোস্তাফিজুর রহমানের। কিন্তু কিছু জায়গায় তাঁদের মিল-অমিল করেছে ক্রিকেট।
জোহানেসবার্গের রাবাদা অবশ্য ১০৪ দিনের বড় সাতক্ষীরার ক্রিকেটার মোস্তাফিজের চেয়ে। ক্রিকেটের বাইরে তাঁদের একটা মিল রয়েছে—দুই পেসারের জন্ম সালটা ১৯৯৫। বড়-ছোটর ধারা বজায় রেখেই যেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তাঁদের। ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ক্রিকেট শুরু করেন রাবাদা। অভিষেক ততটা সন্তোষজনক ছিল না,৩ ওভারে ২৭ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য।
মোস্তাফিজের অভিষেকও হয় টি-টোয়েন্টি দিয়ে। ২০১৫ সালের ২৪ এপ্রিল মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচেই ৪ ওভারে মাত্র ২০ রান দিয়ে শিকার করেছিলেন ২ উইকেট। ক্যারিয়ারের প্রথম দুটি উইকেটও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সেই সময়ের টি-টোয়েন্টির দুই সেরা অলরাউন্ডার—শহীদ আফ্রিদি ছিল তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম উইকেট, আরেকটি মোহাম্মদ হাফিজের।
মোস্তাফিজ-রাবাদা অভিষেক ম্যাচেই প্রত্যাশামতো দলের দুর্দান্ত জয় দেখেছেন। ক্যারিয়ারের শুরুতে মোস্তাফিজের তোপ মানেই যেন ব্যাটারদের জন্য কঠিন ধাঁধা। অফ কাটারের ধাঁধায় ফেলে প্রথম চার ম্যাচেই নিয়েছিলেন ১৫ উইকেট। সেটিও ভারত-পাকিস্তানকে গুঁড়িয়ে দেওয়া সিরিজেই। বেশি সময় লাগেনি ক্রিকেট বিশ্লেষকেরা তাঁর বিশেষণ জুড়ে দেন ‘কাটার মাস্টার’।
ছন্দ ধরে রেখে ৫৪ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম ১০০ উইকেট নেন নিজের ঝুলিতে। ক্যারিয়ারের প্রথম চার বছরে ৯৩ ইনিংসে ৪.৫৩ ইকোনমিতে শিকার করেন ১৫৩ উইকেট, বোলিং গড় ২২.০০। তারপরই যেন খেই হারাতে থাকনে এই বাঁহাতি পেসার। পরের প্রায় সাড়ে চার বছরে ১৪০ ইনিংসে মোস্তাফিজের শিকার ৬ ইকোনমিতে ১৭৪ উইকেট, বোলিং গড় ২৭.৫৫।
সময়ের সঙ্গে মোস্তাফিজের পারফরম্যান্সের গ্রাফ শুধু নিচের দিকেই অবনমন হলো। বিপরীতে শুরুতে কয়েক ম্যাচে অনুজ্জ্বল থাকলেও নিজের লাইন-লেন্থের ধার বাড়িয়ে পারফরম্যান্সের গ্রাফটা রাবাদা নিয়ে গেলেন অনেক উচ্চতায়। বলাই যায়, প্রোটিয়া পেসার এখন মোস্তাফিজের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
নিজের ৬৫ তম টেস্টে ৩০৪ উইকেট রাবাদার, মোস্তাফিজের নামের পাশে ১৫ টেস্টে ৩১ উইকেট। মোস্তাফিজের মিরপুরে রাবাদা তোপ দাগলেও, শুধু টেস্টে অনীহার ফলে পাদপ্রদীপ থেকে যেন একটু দূরেই সরে গেলেন দ্য ফিজ। পরিসংখ্যানই বলছে টেস্ট বাদ দিলে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে ২৯৬ উইকেট মোস্তাফিজের, রাবাদার ২২৮ উইকেট। মোস্তাফিজের অবশ্য লেগেছে ২০৮ ইনিংস, ১৬৪ ইনিংস লেগেছে রাবাদা। সব দিক থেকে নিজের ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ করেছেন জোহানেসবার্গের এই ক্রিকেটার।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৯ বছর বয়সী রাবাদার ২৮২ ইনিংসে ৫৩২ উইকেট। নজরকাড়া ইকোনমি ৪.২০, বোলিং গড় ২৪.৩০। মোস্তাফিজের ২৩৩ ইনিংসে ৩২৭ উইকেট। ইকোনমি ৫.২৮, বোলিং গড় ২৫.৩৮। মোস্তাফিজের চেয়ে ২০৫ উইকেট এগিয়ে ডেল স্টেইন, জ্যাক ক্যালিস, অ্যালান ডোনাল্ডেরদের ধাওয়া করছেন রাবাদা। ফিট থাকলে হয়তো ছাড়িয়ে যাবেন কাউকে।