আহমেদ রিয়াদ, কানপুর থেকে
লাঞ্চের আগেই সেঞ্চুরিটা হবে তো? হলে তৃপ্তি নিয়ে লাঞ্চ করা যাবে, নাহলে টেনশন নিয়ে বিরতিতে যেতে হবে ৷ মুমিনুল হকের সামনে সমীকরণ যেন ‘টেস্টি লাঞ্চ বনাম টেনশনের লাঞ্চ’!
‘ধুচ্ছাই! ৪ রানের জন্য এত টেনশন নিয়ে লাঞ্চে যাওয়ার কোনো মানে আছে!’—এ ভাবনাতেই কিনা রবীচন্দ্রণ অশ্বিনকে সুইপে দুর্দান্ত সেঞ্চুরিটা তুলে নিয়েই মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে গেলেন মুমিনুল। উদ্যাপনে স্বভাবসুলভ সাদামাটা: এক হাতে ব্যাট, আরেক হাতে হেলমেট উঁচিয়ে ধরার পর একটা সেজদা। তবে দেখার মতো দৃশ্য হলো ড্রেসিংরুমে ফেরার সময়। প্রতিপক্ষের সেরা ব্যাটার বিরাট কোহলি এগিয়ে এসে পিঠ চাপড়ে দিলেন মুমিনুলকে। ভারতের মাঠে এমন সেঞ্চুরির পর অবশ্য বাহাবা তিনি অনেকেরই পাবেন। ধারাভাষ্যকক্ষ থেকে রবি শাস্ত্রী, দিনেশ কার্তিকেরা প্রশংসায় ভাসালেন মুমিনুলকে। ধারাভাষ্যকক্ষ থেকেই যেমন রবি শাস্ত্রী বলছিলেন, ‘আ গ্রেট ইনিংস ফ্রম দিস লিটল ম্যান।’
তামিম ইকবাল তুলে ধরছিলেন মুমিনুলের কঠিন বাস্তবতা। শুধু খেলেন টেস্ট ম্যাচ। তিন-চার বছর আগেও বাংলাদেশ বছরে খেলত ২-৩টা করে টেস্ট। এখন তবু টেস্টের সংখ্যা বেড়েছে। মুমিনুলের মতো একটি সংস্করণ বিশেষ করে শুধুই টেস্ট খেলা খেলোয়াড়দের জন্য নিজেকে দারুণ কিছু করতে উজ্জীবিত করা যথেষ্ট কঠিন। মুমিনুল সেই কঠিন কাজটাই করে যাচ্ছেন বছরের পর বছর ৷
৪০ রান নিয়ে মুমিনুল আজ চতুর্থ দিনে ব্যাটিং শুরু করেন। সতীর্থরা যেখানে বিলাসী শটে উইকেট ছুড়ে দিয়ে এসেছেন, মুমিনুল দিয়েছেন ধৈর্যের পরিচয়। সকালের শুরুতে জসপ্রীত বুমরা, আকাশ দীপ, মোহাম্মদ সিরাজদের পেস বোলিংয়ে কিছুটা অস্বস্তি থাকলেও পরে সেটা মুমিনুল সামলেছেন দারুণভাবে। বলের মেরিট বুঝে কখনো আপার কাট, স্কয়ার কাট, সুইপ, স্লগ সুইপ, কখনো শৌর্যের প্রতীক পুল শট, আবার কখনো দৃষ্টিনন্দনে ড্রাইভে নিজের রানের চাকা সচল রেখেছেন। ১৭২ বলে তুলেছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৩তম সেঞ্চুরি। ১৫ মাস পর টেস্টে তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন মুমিনুল। ক্রিকেটের রাজকীয় সংস্করণে সবশেষ বেশি সেঞ্চুরি তিনি পেয়েছিলেন ২০২৩ সালের জুনে মিরপুরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। কানপুরে পেসারদের বিপক্ষে ৫৬ শতাংশ রান তুলেছেন, স্পিনারদের বিপক্ষে তুলেছেন ৪৪ শতাংশ। মুমিনুল ভালো পরীক্ষাই নিচ্ছেন ভারতীয় বোলারদের ৷
বিপদে পড়া বাংলাদেশকে টেনে তুলতে মুমিনুলের এই সেঞ্চুরির আরও একটি বিশেষত্ব রয়েছে। মুশফিকুর রহিমের পর ভারতের মাঠে দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান বনে গেলেন মুমিনুল। সেঞ্চুরির পর ভারতের ক্রিকেটারদের কাছ থেকেও তাই অভিবাদন পেয়েছেন মুমিনুল।
কানপুর টেস্টের চতুর্থ দিনে আজ সকালে ধারাভাষ্যের মঞ্চে মাইক্রোফোন হাতে তামিম ধারাভাষ্যকার রবি শাস্ত্রীর সঙ্গে আলাপে মুমিমুলকে নিয়ে বলছিলেন, ‘এই মুমিনুল বাংলাদেশের এমন এক ক্রিকেটার,যিনি বছরে এক সংস্করণের ক্রিকেটে খেলে নিজেকে অনুপ্রাণিত করছেন, যা সত্যি একজন ক্রিকেটারের জন্য দারুণ কষ্টকর। একই সঙ্গে কঠিনও। কিন্তু এই কঠিন কাজটাই বছরের পর বছর করে চলেছেন মুমিনুল।’