নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
এই স্বপ্ন তিনি দেখছেন কৈশোর থেকে। মেহেদী হাসান মিরাজের মধ্যে নেতৃত্বগুণ বিসিবি খুঁজে পেয়েছিল অনেক আগে। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে তাঁকে দলের অধিনায়ক করা সে কারণেই। ২০১৬ সালে যুব বিশ্বকাপ বাংলাদেশ খেলেছে তাঁরই নেতৃত্বে। যে মিরাজের মধ্যে ভবিষ্যতের নেতা খোঁজা হচ্ছিল, সেই তিনি বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পেলেন ক্যারিয়ারের ৮ বছর কাটিয়ে দেওয়ার পর, ১৭৬তম আন্তর্জাতিক ম্যাচে।
মিরাজ কতবার বলেছেন, ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখেছেন বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার। হতে পারে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক, তবু জাতীয় দলকে অধিনায়কত্ব করার স্বপ্ন কিছুটা হলেও পূরণ তো হয়েছে। সেটিও এমন এক ম্যাচে, যেটিতে বাংলাদেশ খেলতে নেমেছিল সিরিজ জয়ের লক্ষ্যে। অলিখিত ফাইনালে তাঁর হাতে নেতৃত্বের ব্যাটন এসেছে দৈব চক্রে। নিয়মিত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত হঠাৎ চোটে পড়ায় দলের অধিনায়কত্বের ভার তাঁর কাঁধে বর্তেছে। কদিন ধরে শান্তর বিকল্প মিরাজকে অধিনায়ক হিসেবে চিন্তা করতে শুরু করেছে বিসিবি। সেটির একটা রিহার্সাল যেন কাল শারজায় হয়ে গেল।
শারজার তপ্ত দুপুরে কাল যখন তিনি টস করতে নামলেন প্রতিপক্ষের অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শাহিদির সঙ্গে, রোদচশমার ফাঁকে চিকচিক করছিল মুখে ছড়িয়ে থাকা উজ্জ্বল হাসি। ভাগ্যের খেলায় নেমেই জিতলেন মিরাজ। টস জিতেই নিলেন ব্যাটিং। আর ব্যাটিংয়ে যথারীতি সেই একই চিত্র—হঠাৎ ধসে বিপদে বাংলাদেশ। ১ উইকেটে ৫৩ রান থেকে হুট করে হয়ে গেল ৪ উইকেটে ৭২। বিরুদ্ধস্রোতে লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা মিরাজের ভালোই আছে। কালও নেতৃত্বের প্রথম প্রহরে কঠিন পরিস্থিতিতে ধরলেন দলের হাল।
বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহকে যোগ্য সঙ্গ দিতে মিরাজ এগিয়েছেন ঠান্ডা মাথায়, অতিরক্ষণাত্মক ব্যাটিংয়ে। ফিফটি করতে খেলেছেন ১০৬ বল। মিরাজের এই মন্থরতম ফিফটির আগে ২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১১৩ বলে ফিফটি করেছিলেন জাভেদ ওমর।
মিরাজ চেয়েছেন মাঝ ইনিংসে আর কোনো উইকেট না হারিয়ে স্লগ ওভারে গিয়ে চালিয়ে ২৫০ পেরোনো একটা স্কোর গড়তে। মাহমুদউল্লাহ-মিরাজের পঞ্চম উইকেটে যোগ করা ১৪৫ রানের জুটি মূলত বাংলাদেশের ইনিংসের হাইলাইট। ৪৫.৬ ওভারে ওমরজাইকে তুলে মারতে গিয়ে যখন ফিরছেন, নামের পাশে ৬৬ রান।
অধিনায়কত্বের প্রথম পরীক্ষায় মিরাজ কেমন করলেন, সে তো কাল দেখলেনই। তাঁর অধিনায়কত্বের আরেকটি পরীক্ষা হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজে। নিয়মিত টেস্ট অধিনায়ক শান্ত কুঁচকির চোটে পড়ে নেই ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে। মিরাজও চাইছেন শারজার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ক্যারিবীয় দ্বীপে ভালো করতে। ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘এখানে কিছু অর্জন আছে আমাদের ৷ অনেক দিন পর শারজায় খেললাম ৷ আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম ৷ পরের সিরিজ ওয়েস্ট ইন্ডিজে, আজ সেখানে রওনা দিচ্ছি। কাজটা হবে কঠিন।’