বাংলাদেশের প্রধান কোচ হিসেবে ‘কড়া হেডমাস্টার’ ট্যাগ জুড়ে গিয়েছিল চন্ডিকা হাথুরুসিংহের নামের পাশে। নিয়ম-শৃঙ্খলার প্রশ্নে তিনি ছিলেন আপোসহীন। বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমে কিছুটা ভিন্ন ধরনের সংস্কৃতি চালু করেছিলেন হাথুরু। যেগুলো আবার বর্তমান প্রধান কোচ ফিল সিমন্সের অজানা।
হাথুরু বাংলাদেশের প্রধান কোচ থাকাকালে ক্রিকেটারদের হাতে বিশেষ বই ‘দ্য টাইগার্স কোড’ তুলে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ড্রেসিংরুমের পরিবেশ কেমন হবে, কীভাবে ক্রিকেটাররা একটা আদর্শ দল হয়ে খেলতে পারবে—টাইগার্স কোডের মূল কথা ছিল এটাই। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে ২০২৪-এর অক্টোবর পর্যন্ত তিনি এই বিশেষ বই ক্রিকেটারদের দিয়েছিলেন। এছাড়া ম্যাচের সেরা পারফর্মারদের উৎসাহ দিতে ‘মেরুন জ্যাকেট’ দেওয়ার রীতিও চালু করেছিলেন হাথুরু। তাঁর (স্থলাভিষিক্ত) হয়ে যিনি এসেছেন, সেই সিমন্সের কাছে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল হাথুরুর বিশেষ সংস্কৃতি সম্পর্কে। আজকের পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সিমন্স বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে খুব একটা জানি না।’
ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধ্বে ক্রিকেটাররা যাতে দলের জন্য খেলেন, এমন সংস্কৃতি চালু করতে চান বলে আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন সিমন্স। বাংলাদেশের প্রধান কোচ বলেন, ‘আমি এমন সংস্কৃতি চালু করতে চাই, যেটা হবে দলীয় সংস্কৃতি। এমন সংস্কৃতি যেখানে সবাই সবার জন্য খেলতে চায়। আমরা চাই দলের সাফল্য। দলের সাফল্যে আমরা খুশি হতে চাই। সংস্কৃতি হচ্ছে একে অন্যের জন্য খেলা। নিজের জন্য কিছু নয়।’
২০২৪-এর অক্টোবর থেকে এ বছরের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত সিমন্সের সঙ্গে চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শেষে বিসিবি তাঁর চুক্তি বাড়িয়েছে আরও দুই বছর। দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও নামিবিয়ায় হতে যাওয়া ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধান কোচের দায়িত্বে থাকছেন সিমন্স।
বড় মঞ্চে নিয়মিত হোঁচট খাওয়া বাংলাদেশ ২০২৬ সালে খেলবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং পরের বছর খেলবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। সিমন্সের মতে আইসিসি ইভেন্টে বাংলাদেশের ভালো করতে ভালো প্রস্তুতির পাশাপাশি নিজেদের সামর্থ্যের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। আজকের পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের প্রধান কোচ বলেন, ‘আমাদের সামর্থ্যের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে যে বড় মঞ্চে বড় টুর্নামেন্টে আমরা কী করতে পারি। টুর্নামেন্টের আগে ভালো প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে হবে। শুধু টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া নয়, বছরজুড়ে এমনভাবে খেলতে হবে যেন সবাই অভ্যস্ত হয়ে উঠবে যে একটা দল হিসেবে আমাদের কীভাবে খেলতে হবে। দুই বিশ্বকাপ সামনে রেখে আমাদের প্রস্তুতি শুরু এখন থেকেই।’
হাথুরু দুই মেয়াদে বাংলাদেশের প্রধান কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। ২০১৪-এর মে মাসে শেন জার্গেনসেনের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন হাথুরু। প্রথম মেয়াদে যে তিন বছর (২০১৪ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত) দায়িত্বে ছিলেন হাথুরু, সেই সময় বাংলাদেশ ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে। যেটা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ওয়ানডে বিশ্বকাপে সেরা সাফল্য। পাকিস্তানকে ধবলধোলাইয়ের পাশাপাশি ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ধবলধোলাই করেছিল হাথুরুর অধীনেই। তাঁর প্রথম মেয়াদে বাংলাদেশ ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সেমিফাইনালে উঠেছে।
দ্বিতীয় মেয়াদে ২০২৩-এর জানুয়ারিতে বাংলাদেশের প্রধান কোচ হিসেবে আসেন। তাঁর অধীনে ইংল্যান্ড, আফগানিস্তান-এই দুই দলকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ধবলধোলাই করেছে বাংলাদেশ। আর গত বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানকে তাদের মাঠে বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজে ধবলধোলাই করেছিল হাথুরু দায়িত্বে থাকা অবস্থায়। এই সিরিজ জিতে পাকিস্তানের মাঠে পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হারানোর ২১ বছরের অচলায়তন ভাঙে বাংলাদেশ।