নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
দুবাইয়ে গত সোমবার রাজস্থান-হায়দরাবাদ ম্যাচের ঘটনা। চতুর্থ ওভারের চতুর্থ বলটা জ্যাসন রয়ের অফ স্টাম্পের বাইরে করেছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। উইকেটে পড়েই গতি কমে যাওয়া কাটারটা হায়দরাবাদ ওপেনারের কাছে জটিল এক ধাঁধা হয়ে গেল। বলটা ব্যাটেই ছোঁয়াতে পারেননি রয়। বল ঠিকঠাক ধরতে পারেননি রাজস্থানের উইকেটকিপার ও অধিনায়ক সাঞ্জু স্যামসনও। সাঞ্জুর দুই পায়ের মাঝ দিয়ে বল চল গেছে বাউন্ডারির বাইরে!
দুর্দান্ত একটা বল, যেটিতে ব্যাটসম্যান পরিষ্কার হার মেনেছেন, সেটিতে কি না সাঞ্জুর মতো চৌকস উইকেটকিপারের দৃষ্টিকটু ভুলে বাউন্ডারি! ‘বল যেভাবে মোচড় দিয়েছে, সে (সাঞ্জু) ঠিক ম্যানেজ করতে পারেনি’—মোস্তাফিজ তাঁর অধিনায়কের ভুলটা বড় করে দেখতে রাজি নন। ওই ওভারে ১৩ রান দিলেও বাঁহাতি পেসার দারুণভাবে ফিরে আসেন নিজের পরের দুই ওভারে। হায়দরাবাদের বিপক্ষে ৩.৩ ওভারে ২৬ রানে ১ উইকেট—বোলিংটা মোটেও খারাপ বলা যাবে না তাঁর।
এ ম্যাচেই নয়, পুরো টুর্নামেন্টেই (দুটি অংশেই) ধারাবাহিক ভালো বোলিং করে রাজস্থান টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে বড় ভরসা হয়ে উঠেছেন মোস্তাফিজ। গতকালের আগের ম্যাচ পর্যন্ত ১০ ম্যাচে ৭.৮৪ ইকোনমি রেটে ১১ উইকেট নিয়ে নিজেকে দলের সেরা তিন বোলারের তালিকায় রেখেছেন।
ধারাবাহিক দারুণ বোলিং করছেন, রাজস্থানে বিদেশি কোটায় খুব বেশি শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীও নেই মোস্তাফিজের। রাজস্থানের একাদশে সুযোগ পেতে তাই খুব একটা ভাবতে হচ্ছে না বাংলাদেশ পেসারের। যদিও পয়েন্ট টেবিলে তাঁর দল খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। ১০ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে রাজস্থান কালকের ম্যাচের আগেও ছিল সাতে। আইপিএল ছাপিয়ে মোস্তাফিজের ভাবনায় অবশ্য ঢুকে পড়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। জানালেন, নিয়মিত খেলে উইকেট-কন্ডিশন সম্পর্কে বেশ একটা ধারণা তাঁর হয়েছে। ‘উইকেট ভালোই মনে হচ্ছে। ১৬০-১৭০ রানের উইকেট। এখন অন্য প্রান্তে আরেকজন বোলার যদি নিয়মিত সমর্থন দিতে পারে, দারুণ কিছু হতে পারে। উইকেট না পেলেও যদি চাপে রাখা যায় (প্রতিপক্ষের ব্যাটারকে) সেটাও কাজে দেবে। এতে একজনের ওপর বেশি চাপ পড়ে না’—দুবাই থেকে ফোনে বলছিলেন মোস্তাফিজ।
আইপিএলে মোস্তাফিজের ঠিক বিপরীত অভিজ্ঞতা হচ্ছে সাকিব আল হাসানের। গত পরশু তাঁর একটি ছবি ফেসবুকে বেশ ভাইরাল হয়েছে। গত পরশু দিল্লির বিপক্ষে বাউন্ডারি লাইনে পানির বোতল নিয়ে বসে ছিলেন সাকিব। ছবিটাই বলে দিচ্ছে কলকাতা দলে তাঁর দিন কাটছে কেমন। আইপিএলের এই অংশে এখনো ম্যাচ খেলার সুযোগ মেলেনি বাংলাদেশের তারকা অলরাউন্ডারের। অবশ্য গত মে মাসে স্থগিত আইপিএলেও একাদশের বাইরে থাকতে হয়েছে সাকিবকে।
কলকাতার একাদশে জায়গা পেতে সাকিবের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী সুনীল নারাইন। ক্যারিবীয় রহস্যময় স্পিনার বোলিংয়ে যে ছন্দে আছেন, সাকিবের জন্য ম্যাচ পাওয়া আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। অবশ্য দুই দিন আগে কলকাতার আন্দ্রে রাসেল চোটে পড়ায় একটা সুযোগ আসার সম্ভাবনা মিলেছিল সাকিবের সামনে। কলকাতা টিম ম্যানেজমেন্ট পরশু শারজায় দিল্লির বিপক্ষে ম্যাচে রাসেলের জায়গায় টিম সাউদিকে খেলিয়েছে। উইকেট কিছুটা স্পিন-সহায়ক হওয়ার পরও সাকিবকে না খেলানোর ব্যাখ্যায় কলকাতার সহকারী কোচ অভিষেক নায়ার বলেছেন, ‘শারজার মাঠ ছোট। অধিনায়কের মনে হয়েছে, তিন স্পিনার খেলানো আমাদের জন্য কঠিন। আর রাসেল যেহেতু নেই, পেস বোলিংয়ে বাড়তি একজন দরকার বলে আমরা মনে করেছি। সাউদিকে খেলানো সে কারণেই।’
তবে সাকিবের সামর্থ্য নিয়ে সংশয় নেই অভিষেকের। বলেছেন, ‘সে (সাকিব) পরীক্ষিত খেলোয়াড়। এ ধরনের কন্ডিশনে সব সময়ই সে ভালো করেছে। তবে সানির (নারাইন) ব্যাটিংয়ের ওপরও ভরসা আছে আমাদের। সব বিবেচনা করে আমরা চেয়েছি বাড়তি একজন পেস বোলার নিতে (দিল্লির ম্যাচে), যে পাওয়ার প্লেতে ভালো করতে পারবে।’