নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে প্রতি ম্যাচে। মিরপুরে অস্ট্রেলিয়া সিরিজের প্রতিটিই হচ্ছে লো স্কোরিং ম্যাচ। নিয়মিত ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে নিয়মিত ব্যর্থ হচ্ছে টপ অর্ডার। মিডল অর্ডার কিংবা লোয়ার মিডল অর্ডার থেকে দু-একজন বুক চিতিয়ে লড়ছেন। আর প্রতিটি লো স্কোরিং ম্যাচ নিজেদের মুঠোয় এনে দিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন বোলাররা। কিন্তু প্রতি ম্যাচই কি বোলাররা জেতাবেন?
গত পরশু দুর্দান্ত জয়ের পর বাংলাদেশ দলের এক বোলারের মনেও উঁকি দিচ্ছিল চিন্তাটা, ‘প্রতি ম্যাচেই বোলারদের পক্ষে জেতানো কঠিন। যদি একটু ওপরের দিকে রান আসে, আমাদের কাজটা আরও সহজ হয়। অবশ্য সময় সবার এক যায় না। টপ অর্ডার তো জিম্বাবুয়ে সিরিজেও রান পেয়েছে। এখন ওদের স্বাভাবিক খেলাটা খেললেই হয়ে যায়। ওরা সম্ভবত চাপ নিয়ে নিচ্ছে বেশি।’
জিম্বাবুয়ে সিরিজে দুর্দান্ত খেলা সৌম্য সরকার এই সিরিজের একটি ইনিংসেও ‘ডাবল ডিজিটে’ যেতে পারেননি। তাঁর চারটি ইনিংস—২, ০, ২ ও ৮ রান। সৌম্যর ওপেনিং জুটির সঙ্গী মোহাম্মদ নাঈমও আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি খুব একটা। দুবার ভালো শুরুর পরও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। তরুণ বাঁহাতি ওপেনারের চারটি ইনিংস—৩০, ৯, ১ ও ২৮। দুই ওপেনারের ধারাবাহিক ব্যর্থতায় বাংলাদেশ স্বচ্ছন্দে এগোতে পারছে না পাওয়ার প্লেতে। চার ম্যাচে প্রথম ৬ ওভারে বাংলাদেশ গড়ে তুলেছে ৩২.২৫ রান।
যখন দুর্দান্ত শুরু এনে দেওয়ার সুযোগ, তখন বাংলাদেশের রানরেট থাকছে ছয়ের নিচে। দলের স্কোরও বড় হচ্ছে না, চার ম্যাচে ইনিংস প্রতি বাংলাদেশ গড়ে করতে পেরেছে ১২১ রান।
অস্ট্রেলিয়া দল কালও দুটি পরিবর্তন নিয়ে খেলেছে। বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট অবশ্য চাইলে গতকাল ছন্দ হারিয়ে ফেলে ‘চাপে পড়ে’ যাওয়া ব্যাটসম্যানদের বিশ্রাম দিয়ে রিজার্ভ বেঞ্চের খেলোয়াড়দের বাজিয়ে দেখতে পারত। সেটি অবশ্য হয়নি। অস্ট্রেলিয়াকে ধবলধোলাইয়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ‘উইনিং কম্বিনেশন’ ভাঙেনি। টানা খেলার ধকল তো আছেই, ছন্দ হারিয়ে ফেলা ব্যাটসম্যানদের জন্য কাজটা আরও কঠিন হয়ে করে দিয়েছে উইকেট-কন্ডিশন।
যেহেতু সিরিজে বিশ্রাম নীতিতে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট যায়নি, টানা তিনটি ম্যাচ মন্থর ও নিচু উইকেটে খেলে সিরিজ জেতার পর স্বাগতিকেরা চাইলে কাল ‘ট্রু উইকেটে’ও খেলতে পারত। ভালো উইকেটে খেলতে পারলে সেটি কী কাজে দিত, বলছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেটের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান তুষার ইমারন, ‘ছন্দ হারিয়ে ফেলা ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাস ফেরার সম্ভাবনা তৈরি হতো। যেহেতু সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ব্যাটসম্যানদের একটু সুযোগ করে দেওয়া দরকার ব্যাটিং সহায়ক পিচে খেলার। বিশ্বকাপের কথা চিন্তা করা উচিত এখন থেকেই।’
সাদা বলের ক্রিকেটে আইসিসির টুর্নামেন্ট খেলাই হয় রানপ্রসবা উইকেটে। দর্শকদের পূর্ণ বিনোদন দিতে আইসিসির লক্ষ্য থাকে ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ম্যাচ আয়োজনের। অক্টোবর-নভেম্বরে আরব আমিরাত-ওমানে হতে যাওয়া এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও সেটির ব্যতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে রেখে অস্ট্রেলিয়া যেখানে সিরিজ হারের পরও নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। সিরিজ নিশ্চিত করেও বাংলাদেশ সে পথে হাঁটেনি। কিন্তু নিয়মিত লো স্কোরিং ম্যাচে বোলারদের পক্ষে প্রতিদিন যে ম্যাচ জেতানো কঠিন, সে তো কাল দেখাই গেল।