দেশের ফুটবলে সব আলোচনা এখন হামজা চৌধুরীকে ঘিরে। যদিও এখনো জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপাননি, তবু কারও কারও চোখে তিনি ইতিমধ্যে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় সুপারস্টার। এতে বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইংল্যান্ড প্রবাসী হামজাকে নিয়ে স্বপ্নটা আকাশছোঁয়া।
প্রবাসী ফুটবলারদের আনাগোনা নতুন কিছু নয়। শুরু হয় ২০১৩ সালে ডেনমার্ক প্রবাসী জামাল ভূঁইয়াকে দিয়ে। অনেক দিন ধরে জাতীয় দলের নেতৃত্বের ভার সামলাচ্ছেন তিনি। তাঁর পরে অনেক প্রবাসী ফুটবলার এসেছেন, কিন্তু তারিক কাজী ছাড়া কেউই সেভাবে থিতু হতে পারেননি। হামজার আগমন অবশ্য ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলার অভিজ্ঞতা। লেস্টার সিটির হয়ে পেয়েছেন এফএ কাপ জয়ের স্বাদ।
সব ঠিক থাকলে ২৫ মার্চ এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে অভিষেক হবে হামজার। দলে চমক হিসেবে আরও এক প্রবাসী ফুটবলারকে রেখেছেন বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। ফেনীতে জন্ম নেওয়া ফাহামিদুল ইসলাম বেড়ে উঠেছেন ইতালিতে। স্পেৎজিয়া-সাম্পদোরিয়ার একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেওয়া ১৮ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড বর্তমানে খেলছেন দেশটির চতুর্থ স্তরের ক্লাব ওলবিয়া কালসিওতে। দল ঘোষণার আগে খুব একটা আলোচনায় ছিলেন না তিনি। তবে ফুটেজ দেখে তাঁকে দলে রাখার উপযুক্ত মনে হয়েছে বাংলাদেশ কোচের, যা এক রহস্যই বটে। ইতিমধ্যে সৌদি আরবে জাতীয় দলের ক্যাম্পে যোগ দিয়েছেন তিনি। কিন্তু তাঁকে আলোর বাইরে রাখার চেষ্টা করছেন কাবরেরা।
হামজা-ফাহামিদুলের পথ ধরে আলোচনায় রয়েছেন কানাডিয়ান প্রবাসী সামিত সোম, আমেরিকান প্রবাসী কুইন সুলিভান, সুইডিশ প্রবাসী ম্যাক্স রহমানরা। ভবিষ্যতে হয়তো তাঁদের উপস্থিতি দেখা যেতে পারে।
জাতীয় দলে তাই প্রবাসী ফুটবলারদের রাজত্ব দেখছেন আলফাজ আহমেদ। তবে এমনটি হলে ফুটবলের ক্ষতি দেখছেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কোচ ও সাবেক ফুটবলার। আজকের পত্রিকার সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, ‘দেশে কীভাবে ফুটবলার তৈরি করতে হবে, সেই চিন্তা না করে যদি প্রবাসী ফুটবলার খুঁজতে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে শুধু প্রবাসীরাই জাতীয় দলে খেলবে। আর দেশের ফুটবলাররা চেয়ে চেয়ে দেখবে। ফুটবল ধ্বংস হতে যা বাকি আছে, তা ধীরে ধীরে পূরণ হচ্ছে আরকি। যতটুকু ধ্বংস হওয়ার তা তো হয়েছে, কিন্তু আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে। বাংলাদেশে ১৫-২০ কোটি মানুষ, তারপরও হামজাকে আমরা বাইরে থেকে নিয়ে এসে খেলছি। আমাদের কীভাবে এগোতে হবে, তা সবাই জানে; কিন্তু এগোনোর মানসিকতা নেই কারও।’
বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়ালের আগ্রহের পর প্রবাসী ফুটবলারদের খেলানো নিয়ে তোড়জোড় অনেকটা বেড়েছে। তবে এর চেয়ে তৃণমূল ফুটবলে বেশি নজর দিতে বললেন সাবেক তারকা ফুটবলার শেখ মোহাম্মদ আসলাম, ‘(প্রবাসীরাই ভবিষ্যৎ) এই চিন্তা করে যদি আমাদের ফেডারেশন এগোয়, তাহলে বিরাট ভুল করবে। আমাদের দেশের যে রিসোর্স (সম্পদ), তা কোনো অংশে কম নয়। যদি প্রাথমিক লিগ চালু করা যায়, তাহলে খেলোয়াড়ের অভাব থাকে না। খুলনায় লিগ না হলে আসলামের জন্ম হতো না। জার্মানির হামবুর্গ থেকেও আমাকে খেলার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আর আজ বাইরের দেশ থেকে খেলোয়াড় আনতে হচ্ছে। এতে বোঝা যায়, আমাদের ফুটবলের দৈন্য কতটুকু। তাই সারা বাংলাদেশে লিগ চালু করা দরকার।’
প্রবাসী ফুটবলারদের নিয়ে দল গড়ায় অসুবিধা দেখছেন না গোলাম সারোয়ার টিপু। এতে দলের ভেতর প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও বাড়বে বলে মনে করেন বাংলাদেশের সাবেক ফুটবলার ও সাবেক কোচ। তিনি বলেন, ‘এখন এই যে বিদেশি খেলোয়াড়দের আনা হচ্ছে। এটা কিন্তু কেউ না কেউ স্কাউটিং করেছে। তাই তাদের এনে যদি আমাদের কাজে লাগে, তাহলে অসুবিধা কী! আমাদের তো খেলোয়াড় তৈরি করার মতো কেনো জায়গা নেই। এখন যদি আমরা তৈরিকৃত খেলোয়াড় পাই বাইরে থেকে, সেটা আমাদের জন্য ভালো। আমাদের ছেলেরাও ভয়ে থাকবে যে ভালো না খেললে বাইরে থেকে কেউ না কেউ জায়গা নিয়ে নেবে। তাই এ ধরনের প্রতিযোগিতা খারাপ কিছু নয়।’