নারী ফুটবলের অনিশ্চয়তা যেন কাটছেই না। চলমান সংকট নিরসনে এখন পর্যন্ত বাফুফের পক্ষ থেকে আসছে না কোনো বার্তা। অথচ পেরিয়ে গেছে প্রায় দুই সপ্তাহ। লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর গতকাল প্রথমবার সংবাদ সম্মেলনে আসেন বাফুফে সভাপতির তাবিথ আউয়াল। সেখানে নিজের কথা বললেও সাংবাদিকদের প্রশ্নের সুযোগ না দিয়ে সংবাদ সম্মেলনকক্ষ ত্যাগ করেন তিনি।
কোচ-ফুটবলার দ্বন্দ্বে বল এখন বাফুফে সভাপতির কোর্টে। বিশেষ কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে গত বৃহস্পতিবার। আরেকটি বৃহস্পতিবার ঘনিয়ে এলেও বিদ্রোহী ১৮ ফুটবলারকে অনুশীলনে ফিরিয়ে আনতে পারেননি তাবিথ।
বাফুফে সূত্রে জানা গেছে, বিদ্রোহী ফুটবলারদের ছাড়াই ছয় শ্রেণিতে ৩৭ ফুটবলারের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। নতুন করে যুক্ত হয়েছেন ১২ ফুটবলার। তা ছাড়া গত সাফজয়ী দলের ৭ ফুটবলার আছেন চুক্তিতে। কিন্তু সাবিনা খাতুন-ঋতুপর্ণা চাকমারা এখনো নিজেদের জায়গায় অটল আছেন। কোনোভাবেই কোচ পিটার বাটলারের অধীনে অনুশীলন করবেন না। বাটলারকে রাখা হলে শেষ পর্যন্ত অবসরে যেতেও দ্বিধান্বিত হবেন না তাঁরা।
এই অনড় অবস্থানের কারণে সাবিনাদের ভবিষ্যৎ যেন সুতোয় ঝুলছে। গতকাল জার্সির পৃষ্ঠপোষকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এক ভিডিও প্রকাশ করেছে বাফুফে। তবে সেখানে রাখা হয়নি নারী দলের অধিনায়ক সাবিনার কোনো মন্তব্য।
তাহলে কি বিদ্রোহীদের ছাড়াই এগোচ্ছে বাফুফে? কোচ বাটলার এমন ইঙ্গিত আগেই দিয়ে রেখেছেন। আরব আমিরাতের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের জন্য দল গোছানোর কাজ শুরু করেছেন তিনি। যাঁদের নিয়ে দল গোচ্ছাচ্ছেন কোচ, তাঁরা সাবিনাদের সঙ্গে একই ক্যাম্পে থাকেন। বাফুফের সঙ্গে চুক্তি হলেও চুক্তিবদ্ধ নারী ফুটবলারদের যে স্বস্তিতে দিন কাটছে, তা অবশ্য বলার সুযোগ নেই। যাঁদের সঙ্গে দীর্ঘদিন একসঙ্গে কাটিয়েছেন, সেই তাঁদেরই দিন কাটছে উৎকণ্ঠায়!
সম্প্রতি ছেলেদের ফুটবলে মূল আলোচনাই এখন হামজা চৌধুরীকে ঘিরে। ইংল্যান্ডপ্রবাসী এই ফুটবলারের বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা। ছেলেদের মতো মেয়েদের ফুটবলেও প্রবাসী ফুটবলারের দিকে ঝুঁকছে বাফুফে। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন ফুটবলারের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে তাদের।
সাবিনাদের বিকল্প খুঁজে নিতেই কি বাফুফের এমন পরিকল্পনা? তা জানার জন্য বাফুফে সহসভাপতি ফাহাদ করিমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কল ধরেননি তিনি।
২৪ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাবে নারী ফুটবল দল। সেখানে স্বাগতিক নারী দলের সঙ্গে দুটি ম্যাচ খেলবেন মেয়েরা। প্রথম ম্যাচ ২৬ ফেব্রুয়ারি ও পরের ম্যাচ হবে ২ মার্চে। আরব আমিরাত সফরের জন্যই সাবিনাদের অনুশীলনে ফেরার অনুরোধ জানিয়েছিলেন বাফুফে সভাপতি। কিন্তু বিদ্রোহী ফুটবলাররা সায় দেননি তাতে। তবে ক্যাম্পেই অবস্থান করছেন তাঁরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বিদ্রোহী ফুটবলার বললেন, ‘ফেডারেশন যা ভালো মনে করে, সেটাই করছে। চুক্তি নিয়ে আমার কিছু বলার ইচ্ছা নেই, এমনকি জানারও ইচ্ছা নেই। আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে অটল আছি।’
কোচ-ফুটবলারদের মধ্যে দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রথমে উঠে আসে গত অক্টোবরে নেপালে অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে। টুর্নামেন্ট চলাকালীন বিতর্কের মাঝেও সেবার শিরোপা ধরে রাখে বাংলাদেশ। তবে গত ডিসেম্বরে বাটলারের সঙ্গে নতুন করে দুই বছরের চুক্তি করে বাফুফে। এরপর গত ৩০ জানুয়ারি বাটলারের কঠোরতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ডাক দেন ১৮ ফুটবলার। নারী ফুটবলের এই সংকট নিরসনে ৭ সদস্যের বিশেষ কমিটি গঠন করে বাফুফে। এক সপ্তাহের তদন্তের পর দুই পক্ষেরই ভুল খুঁজে পেয়েছে বিশেষ কমিটি। কিন্তু এখনো সমস্যা সমাধানের সূত্র বের করতে পারেনি বাফুফে।
অনড় অবস্থানের কারণে সাবিনাদের ভবিষ্যৎ যেন সুতোয় ঝুলছে। গতকাল জার্সির পৃষ্ঠপোষকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এক ভিডিও প্রকাশ করেছে বাফুফে। তবে সেখানে রাখা হয়নি নারী দলের অধিনায়ক সাবিনার কোনো মন্তব্য।