বাংলাদেশে নেমেই হামজা চৌধুরী হুংকার দেন, ‘ভারতের বিপক্ষে জিতব।’ এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে ভারতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গতকাল সন্ধ্যায় বসুন্ধরা স্পোর্টস অ্যারেনায় প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের সঙ্গে অনুশীলনেও নিজেকে ঝালিয়ে নিয়েছেন হামজা। আর আজ সকালেই বাংলাদেশ ফুটবল দল ভারতের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছে।
আগামী ২৫ মার্চ শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে লড়বে তারা। বিমানবন্দরে প্রবেশের সঙ্গেই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ২৪ সদস্যের দল ঘোষণা করেছে।
বাংলাদেশ দল ভারত সফরের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন দলের ম্যানেজার মোহাম্মদ আমের খান। বিমানবন্দরে সংবাদমাধ্যমকে আমের বলেন, ‘প্রতিপক্ষ যেই হোক, পরিকল্পনা সব সময়ই থাকে, আর চোট সমস্যা খেলারই অংশ বলে তিনি মনে করেন। তাই স্কোয়াড গঠনেও নেওয়া হয়েছে কৌশলী সিদ্ধান্ত।’
হামজার সংযোজন দলের আত্মবিশ্বাস ও পরিবেশ বদলে দিয়েছে বললেন আমের খান, ‘আমাদের কোচিং স্টাফ যে পরিকল্পনা করছে, সেই অনুযায়ীই আমাদের খেলার ধরন নির্ধারিত হবে। তবে এবারের সফরে আমরা একটু বাড়তি আশাবাদী। দলের সবাই অনুভব করছে, হামজা চৌধুরীর অন্তর্ভুক্তি পুরো দলের পরিবেশ বদলে দিয়েছে। তার উপস্থিতিতে দল আরও উজ্জীবিত হয়েছে, যা আমাদের ভালো ফল পেতে সাহায্য করবে।’
হামজা চৌধুরী প্রসঙ্গে আমের খান বলেন, ‘ওকে দলে পাওয়া আমাদের জন্য দারুণ এক বাড়তি পাওয়া। আমরা সবাই গর্বিত, এমন একজন প্রতিভাবান ফুটবলার আমাদের সঙ্গে রয়েছে। দলের খেলোয়াড়েরাও তার সঙ্গে দারুণভাবে মিশে গেছে। হামজা অত্যন্ত ভদ্র, বিনয়ী একজন খেলোয়াড়, তার মধ্যে কোনো অহংকার নেই যে সে ইউরোপিয়ান লিগে খেলে। বরং তার উপস্থিতি দলে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও দৃঢ় করেছে।’
চোট শঙ্কায় কয়েকজন বাড়তি খেলোয়াড় নিয়ে গেছে বাংলাদেশ। আমের বলেন, ‘কিছু ফুটবলার চোটের কারণে যেতে পারছেন না, তবে স্কোয়াডে পর্যাপ্ত বিকল্প রাখা হয়েছে। আমরা ২৬ জন খেলোয়াড় নিয়ে যাচ্ছি, তবে ম্যাচের আগের দিন পর্যন্ত আমাদের সুযোগ থাকবে ২৩ জনের চূড়ান্ত স্কোয়াড ঘোষণা করার।’
দর্শকদের প্রত্যাশা নিয়ে তিনি বলেন, ‘দর্শকই আমাদের প্রাণ। তারা সব সময় দলের ভালো চায়, তাই তাদের মতামত আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করি। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, যাঁরা দায়িত্বশীল এবং যাঁরা ক্রীড়াঙ্গনের শীর্ষ পর্যায়ে আছেন, সবাই বিষয়গুলো নিয়ে সচেতন। দল গঠনের ক্ষেত্রে বাড়তি কিছু না ভেবে দর্শকদের আগ্রহ ও বাস্তবতা বিবেচনাই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।’
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার সোহেল রানা মনে করেন, ভারতের বিপক্ষে লড়াই হবে দারুণ প্রতিযোগিতামূলক। স্কোয়াডে প্রতিটি পজিশনে যত বেশি প্রতিযোগিতা থাকবে, দলের জন্য ততই ভালো হবে বলে তিনি মনে করেন। ঢাকা ছাড়ার আগে বিমানবন্দরে সংবাদমাধ্যমে এই ফুটবলার বলেন, ‘একটা দলে যত বেশি প্রতিযোগিতা থাকবে, খেলোয়াড়রা ততটাই উন্নতি করবে। প্রতিটা পজিশনেই প্রতিযোগিতা থাকা দরকার, কারণ এটা দলের জন্য ইতিবাচক। ভারতের বিপক্ষে আমাদের লড়াই হবে উপভোগ্য, আর আমরা সেরাটা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।’
হামজা চৌধুরীর অন্তর্ভুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ড্রেসিংরুমের পরিবেশ সত্যিই দারুণ ছিল। হামজা আমাদের সঙ্গে খুব সহজেই মানিয়ে নিয়েছে, যা দলের জন্য ইতিবাচক। এর আগে সে কখনো বাংলাদেশে আসেনি বা বাংলাদেশের হয়ে খেলেনি, কিন্তু তার পরও সে খুব দ্রুত আমাদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছে।’
ইংলিশ লিগের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই মিডফিল্ডারের বিনয় ও দলে মিশে যাওয়ার মানসিকতাকে বিশেষভাবে প্রশংসা করেন সোহেল রানা, ‘ও এত বড় মাপের খেলোয়াড়, কিন্তু তার মধ্যে কোনো অহংকার নেই। সে ইউরোপের বড় মঞ্চে খেলেছে, কিন্তু আমাদের সঙ্গে খেলতে এসে সেটা একবারও প্রকাশ করেনি। বরং তার ব্যবহার অত্যন্ত সহজ ও বন্ধুত্বপূর্ণ। এটাই একজন ভালো খেলোয়াড় ও ভালো মানুষের গুণ হওয়া উচিত।’
দলের কৌশল নিয়ে সোহেল বলেন, ‘আমরা সবাই কোচের পরিকল্পনাতেই খেলব। ফুটবলের ভাষা সর্বত্র একই, তাই আমরা চেষ্টা করব কোচের দেওয়া পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে। হামজাও সেভাবেই খেলবে। আমরা একসঙ্গে মাঠে নামব, সেরাটা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।’