নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
শুরুটা হয়েছিল আশা নিয়ে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় দিয়ে। ১৬ বছর ধরে সাফের ফাইনাল খেলার স্বপ্ন পূরণের সেটাই ছিল প্রথম ধাপ। ফাইনালটা ছিল হাতের মুঠোতেই। নেপালের বিপক্ষে জয় পেলেই ২০০৫ সালের পর আবারও সাফ শ্রেষ্ঠত্বের পথে এক পা দিয়ে রাখতেন জামাল ভূঁইয়ারা। কিন্তু গত পরশু ‘অলিখিত সেমিফাইনালে’ রেফারির শেষ মুহূর্তের পেনাল্টির সিদ্ধান্তে নেপালের সঙ্গে ১-১ গোলের ড্রয়ে সেই স্বপ্নটা ভেঙেছে বাংলাদেশের।
সাফের প্রায় দুই সপ্তাহ আগে হঠাৎই বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব পান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন দল বসুন্ধরা কিংসের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন। মাত্র এক সপ্তাহের প্রস্তুতিতে বাংলাদেশ দলকে সাফে যেভাবে খেলিয়েছেন ব্রুজোন, সার্বিকভাবে একে সাফল্যই বলছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলাররা। ২০০৫ সালের ফাইনালিস্ট দলের স্ট্রাইকার জাহিদ হাসান এমিলি বললেন, ‘খুব যে উন্নতি হয়েছে তা বলা যাবে না। তবে এবার ফাইনাল খেলার ভালো একটা সুযোগ সত্যি তৈরি হয়েছিল, যেটা গত চার আসর ধরে হয়নি। জেমি ডের আমলে যেভাবে লম্বা ক্রসে খেলা হতো এবার সেটা কমে পাসিং ফুটবলে খেলতে দেখা গেছে দলকে। আমার কাছে ধরনটা ভালোই লেগেছে। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বলের দখল ধরে রেখে জয়, ভারতের সঙ্গে ১০ জনের দল নিয়ে ড্র-ফাইনালে বাংলাদেশ উঠেই গিয়েছিল। কিন্তু শেষটায় দুর্ভাগ্য আমাদের!’
২০০৩ সালে সাফ জয়ী দলের স্ট্রাইকার রোকনুজ্জামান কাঞ্চনকে পোড়াচ্ছে বাংলাদেশ দলের একের পর গোল করার সুযোগ হাতছাড়া করার কষ্ট। ভারত ও শেষ ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে সহজ কিছু গোল মিস না হলে জামালরা হেসেখেলেই ফাইনালে যেতে পারতেন বলে মনে করেন তিনি, ‘নেপালের বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধে সুমন রেজা গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারল না। রেফারি হয়তো ভুল করেছেন। খেলোয়াড়দের ঠান্ডা মাথায় ফিনিশিং দেওয়া উচিত ছিল। দুটি সহজ সুযোগের একটিও কাজে লাগাতে পারলে ফাইনাল নিশ্চিত ছিল। সেই ভুলের খেসারত হিসেবে আজ আমরা ফাইনালের বাইরে। ভারত ম্যাচেও আমরা অনেক ভুল করেছি। তবে কোচের পরিকল্পনা আর খেলোয়াড়দের লড়াইটা দারুণ ছিল।’
তবে জাতীয় দলের আরেক সাবেক ফুটবলার ও কোচ গোলাম সারোয়ার টিপু বলছেন অন্য কথা। ডি-বক্সে ঢুকে স্ট্রাইকারদের গোলমুখে শট নেওয়ার সাহসের অভাবটা চোখ পড়েছে তাঁর, ‘সাদ উদ্দিনকে দেখেছি কয়েকটি শট ২০-৩০ গজ দূর থেকে নিয়েছে। সে তো আরও ভেতরে গিয়ে শটগুলো নিতে পারত! স্ট্রাইকাররা প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতে না পারায় প্রতিনিয়তই ডিফেন্ডার আর গোলরক্ষকের ওপর চাপ বেড়েছে। এরাও তো মানুষ। এদেরকে শ্বাস নেওয়ার সময় তো দিতে হবে! স্ট্রাইকারদের মেধার অভাব আছে।’
জাতীয় দলের ফুটবলারদের খেলার ধরন নিয়ে ভিন্ন মতভেদ থাকলেও কোচ অস্কার ব্রুজোনের কোচিংয়ে মুগ্ধ সাবেক তিন ফুটবলারই। আপাতত সাফের জন্য দায়িত্ব পাওয়া স্প্যানিশ কোচ রাজি থাকলে তাঁর সঙ্গে চুক্তি বাড়াতে বলছেন টিপু। লম্বা সময়ের জন্য ব্রুজোনকে দেখতে চান কাঞ্চনও। আর এমিলি বলছেন, ‘অস্কার ব্রুজোন যদি লম্বা সময়ের জন্য দায়িত্ব পান, তাহলে এই দলটার ভালো করার সুযোগ আছে। তিনি দলের অনেককেই ভালোভাবে জানেন। তাঁকে যদি পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দিয়ে লম্বা সময়ের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় তাহলে হয়তো বাংলাদেশ পরের সাফে চ্যাম্পিয়নও হতে পারে।’