ক্রীড়া ডেস্ক
ডিয়েগো ম্যারাডোনা মানেই একজন উন্মাতাল রাজার গল্প। ম্যারাডোনা মানে নিছক পাগলামি ও হুল্লোড়। অক্টোবরের শেষের আগের দিনটা তো কেবলই ম্যারাডোনার ছিল। এদিন বুয়েন্স আয়ার্স থেকে নেপলসের রাস্তায় ম্যারাডোনার অবিশ্বাস্য সব রূপকথার গল্পগুলো স্মরণ করা হতো। সেসব দিন এখন আর নেই! নেপলসের রাস্তায় ঢেউ তোলা সেই সব রংধনু এখন আর নেই। আসলেই কি নেই? ম্যারাডোনার না থাকা কি কখনো সম্ভব?
৩০ অক্টোবর লানোস শহরের ডিয়েগো ও দালমার ঘর আলো করে জন্মেছিলেন ম্যারাডোনা। পরের গল্পটা এর ফুটবল জাদুকরের উত্থানের। কিছুটা কি পতনেরও নয়? হয়তো! কেউ কেউ বলেন, ঈশ্বর ও মানুষের মাঝে যেটুকু পার্থক্য সেখানেই নাকি ম্যারাডোনার অবস্থান। হয়তো একটু বাড়িয়েই বলেন। ফুটবল সাহিত্যিক এদোয়ার্দো গালেয়ানো অবশ্য বলেছিলেন, ‘নিজের দ্যুতির আগুনে পুড়ে যাওয়া এক রাজা।’ একেবারে মিথ্যে বোধ হয় না এই কথা। নিজের শ্রেষ্ঠত্বের সঙ্গে লড়াই করেই জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন ম্যারাডোনা। ভক্তদের আদরের ‘ডিয়েগো’। ভাগ্যিস এইটুকু খাদ ছিল, নয়তো তিনি ম্যারাডোনা হতেন কি করে! এসব নিয়েই তো তিনি গণ মানুষের ম্যারাডোনা।
বুয়েন্স আয়ার্স থেকে নেপলস এমনকি সারা দুনিয়ার মানুষ ম্যারাডোনাকে পাগলের মতো ভালোবেসেছিল। একবার নাকি, নেপলসের জয়ের পর রাস্তায় নেমে হুল্লোড় করছিলেন ম্যারাডোনা ও তাঁর সতীর্থরা। এক বুড়ি লাঠি হাতে রাগ দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, এরা কোন শয়তান! ম্যারাডোনা পালটা উত্তর দিয়ে বলেন, আমি ডিয়েগো নেপলসের রাজা! বুড়ি চিনতে পেরে আদর করে দিয়ে বলেন, আরে সত্যিই তো, এ তো আমাদের রাজাই দেখছি। এমন সত্য, অর্ধ সত্য, এমনকি মিথ্যে অনেক গল্প ম্যারাডোনাকে নিয়ে চালু আছে। এসব কিছু মিলিয়েই তো তিনি ম্যারাডোনা। যিনি নাপোলিতে যোগ দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি নেপলসের দরিদ্র শিশুদের আদর্শ হতে চাই। কারণ, তারা আমার মতোই। বুয়েন্স আয়ার্সে ছোটবেলায় আমি এমনই ছিলাম।’
পরের গল্পটা শুধুই রাজত্বের। অসম্ভব এক স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। ঈশ্বরের হাত হোক কিংবা অবিশ্বাস্য সব গোল অথবা মাদকে জড়িয়ে এক রাজার পতন। এসব মিলিয়েই ম্যারাডোনা। যার হাতে-পায়ে আঁকা ছিল চে গুয়েভারা ও ফিদেল কাস্ত্রোর মুখ। যিনি নশ্বর এই পৃথিবীতে বাঁ পায়ে লিখেছেন অসামান্য সব গল্প। তিনিই একজন! একবারই এসেছিলেন। ডিয়েগো আরামান্দো ম্যারাডোনা। যিনি জন্মেছেন ঠিকই, কিন্তু তাঁর মৃত্যু নেই।