না, বেয়ার লেভারকুজেনকে বিকৃত করে এখন আর ‘নেভারকুজেন’ ডাকার অধিকার আপনার নেই। একটি দৃশ্যের জন্ম দিতে ১২০ বছরের যে অপেক্ষা, গত রাতে সেটি ঘুচে গেছে তাদের। পাঁচ রাউন্ড হাতে রেখেই নিশ্চিত করে ফেলেছে বুন্দেসলিগা শিরোপা। এখন থেকে তারা ‘উইনারকুজেন।’
বায়ার্ন মিউনিখের একচ্ছত্র দাপট ভেঙে দিয়েছে লেভারকুজেন। ১১ মৌসুম পর মিউনিখ থেকে বুন্দেসলিগা যাচ্ছে জার্মানির অন্য কোনো শহরে। সেই শহরের নাম লেভাকুজেন। জার্মানির বিখ্যাত রাইন নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত। এ যে শুধু জার্মানির নয়, পুরো ফুটবল বিশ্বের ইতিহাসের পাতায় নতুন সংযোজন!
শীর্ষ লিগের শিরোপা জিততে এত লম্বা সময় কাউকে অপেক্ষা করতে হয়েছে কী? এ প্রশ্নের উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলতে হবে। ২০১৫-১৬ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ জিতে শত বছরের বেশি অপেক্ষার ইতি টেনেছিল লেস্টার সিটি। লেস্টার অবশ্য অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি।
লেভারকুজেন সেখানে অনন্য। নিজেদের মাঠ বে অ্যারেনায় ফ্লোরিয়ান উইর্টজের হ্যাটট্রিকে ভেরডের ব্রেমেনকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে শিরোপা নিষ্পত্তি করল লিগে অপরাজিত থেকে। এ মৌসুমে কোনো প্রতিযোগিতায় যে একটি ম্যাচও হারেনি তারা! টানা ৪৩ ম্যাচ অপরাজিত থাকা দলটির এ মৌসুমে ট্রেবল জেতারও রয়েছে সমূহ সম্ভাবনা। সেই পথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিরোপাটি জিতল লেভারকুজেন। নিজেদের ১২০ বছরের ইতিহাসে জার্মান ফুটবলের শীর্ষে লিগের প্রথম শিরোপা।
লেভারকুজেন এমন রূপকথা লেখার নায়ক জাবি আলোনসো। বে অ্যারেনায় নিজের প্রথম মৌসুমেই অমরত্ব পেয়ে গেলেন স্প্যানিশ কোচ। ২০১০ সালে স্পেনের হয়ে বিশ্বকাপ জেতা মিডফিল্ডারের অধীনে জার্মানির ফুটবলে ইতিহাস লিখল লেভারকুজেন। শিরোপা নিশ্চিত করতে একটি জয় হলেই চলত তাদের। আগেরদিন বায়ার্ন আলিয়েঞ্জ অ্যারেনায় কোলনের কাছে হারলে সেটিরও আর দরকার পড়ত না। বাভারিয়ানরা জিতে লেভারকুজেনের শিরোপা উৎসব একদিন পিছিয়ে দিতে পারলেও সাম্রাজ্যের পতনের বিউগল ঠিকই শুনল। ২০১১-১২ মৌসুম থেকেই বুন্দেসলিগা ছিল তাদের হাতে।
বায়ার্নের এত দিনের সাম্রাজ্য পতনের নায়ক আলোনসো হাসিমুখে ‘টাইটেল’ হাতে নিয়ে দাঁড়ালেন শিষ্যদের সঙ্গে। খেলোয়াড়ি জীবনটা তিনি শেষ করেছিলেন আলিয়েঞ্জ অ্যারেনায়। এরপর কোচিং ক্যারিয়ার শুরু। আর শীর্ষ লিগে প্রথম কোনো দলের ডাগআউটে দাঁড়িয়ে জিতলেন লিগ শিরোপা। লেভারকুজেন ও আলোনসো গল্পটা যে রূপকথাকেও হার মানায়।
২৯ ম্যাচে ২৫ জয় ও ৪ ড্রয়ে ৭৯ পয়েন্ট নিয়ে বুন্দেসলিগা জিতল লেভারকুজেন। দুইয়ে থাকা বায়ার্ন তাদের বাকি ৫ ম্যাচ জিতলে হবে ৭৮ পয়েন্ট। আর্সেন ওয়েঙ্গারের অধীনে ২০০৩-০৪ মৌসুমে অপরাজিত থেকে প্রিমিয়ার লিগ জিতেছিল আর্সেনাল। সেই ‘ইনভিন্সিবল’ গানারদের রেকর্ডে ভাগ বসানোরও সম্ভাবনা রয়েছে লেভারকুজেনের। লিগের বাকি ম্যাচগুলোতে না হারলেই সেটি সম্ভব।