নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) তাদের স্বপ্নের ‘এলিট’ একাডেমি করেছে দেড় বছর আগে। সেখান থেকে সাফল্য পাওয়ার আগেই আবারও একাডেমি বন্ধ করে দেওয়ার চিন্তা বাফুফের।
সিলেট বিকেএসপি ও বেরাইদের ফর্টিস ক্লাবে দুই দফা একাডেমি গড়ার ব্যর্থ চেষ্টার পর কমলাপুরে থিতু হয়েছে বাফুফের একাডেমি। অনূর্ধ্ব-১৫ বয়সের ৫১ ফুটবলারকে নিয়ে ২০২১ সালের ১৬ আগস্ট শুরু হয়েছিল এলিট একাডেমির পথচলা। নামের পাশে এলিট থাকলেও একাডেমি কতটা অভিজাত, তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা থাকলেও রুগ্ণ জাতীয় দলের পাইপলাইন সমৃদ্ধ হবে, এমনটাই ছিল প্রত্যাশা।
একাডেমির দল দিয়ে সাফ ও এএফসিতে একাধিক টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। তবে এখন পর্যন্ত জাতীয় দলে জায়গা পাননি এই একাডেমির কোনো ফুটবলার। একাডেমির ফুটবলাররা খেলছেন বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে, এলিট একাডেমি নামেই। তবে প্রতিযোগিতামূলক অভিজ্ঞতার জন্য এই টুর্নামেন্ট খুব বেশি গুরুত্ব বহন করে না বলে একাডেমির ফুটবলারদের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলাতে চায় বাফুফে। সেই প্রসঙ্গ উঠতেই জানা গেল কঠিন বাস্তবতার কথাও।
বাফুফের ডেভেলপমেন্ট কমিটির সভা ছিল আজ। সেই সভা শেষে ডেভেলপমেন্ট কমিটির প্রধান ও বাফুফে সহসভাপতি আতাউর রহমান মানিক শোনালেন একাডেমি নিয়ে শঙ্কার কথা। বললেন, ‘আমাদের একাডেমিতে অনেক খরচ। চালিয়ে নেওয়া অনেক কষ্ট। ভবিষ্যতে আমরা এটা কতটা চালিয়ে যেতে পারব, সেটা আমরা এখনো জানি না।’
বাফুফে তাদের একাডেমি চালিয়ে যাওয়ার জন্য এখন তাকিয়ে সরকারের দিকে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ফেডারেশনের চাওয়া ৫৮৭ কোটি টাকা। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব বা ডিপিপি নামের পাঁচ বছর মেয়াদি এই উন্নয়ন প্রকল্পের ৩৯৭ কোটি টাকা চারটি একাডেমি ও নারী-পুরুষ জাতীয় দলের পেছনে খরচ করতে চায় বাফুফে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে সেই অর্থ ছাড় না হলে আগামী এক বছরও একাডেমি চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে জানালেন আতাউর রহমান মানিক। বলেছেন, ‘আমরা আশা করছি, মন্ত্রণালয় আমাদের সহায়তা করবে। এ ছাড়া আমরা ডিপিপি পাঠিয়েছি, প্রস্তাব আকারে। ওই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে আমাদের মনে হয়, টাকার সমস্যা থাকবে না। মন্ত্রণালয় যদি চায়, তবে আগেই হয়তো এটা হয়ে যেত। আমরা তো কষ্ট করে একাডেমি চালিয়ে নিচ্ছি। যত দিন চালাতে পারি, চেষ্টা তো করবই।’
কমলাপুরের আগে ফিফার অর্থায়নে ২০১৪ সালে সিলেটে প্রথম একাডেমি করেছিল বাফুফে। এক বছরও চলেনি সেই একাডেমি। ২০১৯ সালে বেরাইদের ফর্টিসে আরেকটি একাডেমি করা হলে সেটিও ধরে রাখতে পারেনি বাফুফে। সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে কমলাপুরে একাডেমি গড়া হলেও এখন তা নিয়ে অনিশ্চয়তা।
জুলাইয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ ও সেপ্টেম্বরে অনূর্ধ্ব-১৬ সাফ খেলবে বাংলাদেশ। দুই টুর্নামেন্টের আগে যুবাদের বাইরের দেশের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলাতে চায় বাফুফে। তবে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার মতো অর্থ নেই বলে আক্ষেপ আতাউর রহমান মানিকের, ‘অনূর্ধ্ব-১৭ আসরে আমরা মালদ্বীপকে, শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছি। ভারতের কাছে শুধু হেরেছি। দল অনেক মজবুত। এরা যদি বেশি বেশি ম্যাচ খেলতে পারে, সাফে এরা শিরোপা এনে দিতে পারবে। ফান্ডে ঘাটতি বলে বাইরে হয়তো তাদের খেলাতে পারছি না। তবে পলের (পল স্মলি, টেকনিক্যাল ডিরেক্টর) দাবি একটাই—প্র্যাকটিস ম্যাচ দাও। যদি টাকা জোগাড় করতে পারি, তাহলে আমরা বিদেশি দল এনে বা সেখানে গিয়ে খেলব। যদি সেই টাকা না থাকে, তবে আধাআধি প্রস্তুতি নিয়ে হয়তো গ্রুপ পর্বে ভালো করব, তবে সেমিফাইনাল, ফাইনালে পারব না।’