এক পদে টানা দুই মেয়াদের বেশি থাকা যাবে না—খেলোয়াড়, কোচ, রেফারি ও সংগঠকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার এমন কথার পরই ৫৫ ফেডারেশনের সংগঠকদের নিয়ে জল্পনাকল্পনা শুরু। কে বাদ যাবেন, কারা আসবেন—এসব নিয়ে চলছে আলোচনা। এরই মধ্যে জানা গেল, দেশের এসব ফেডারেশন/অ্যাসোসিয়েশনের তিন ডজন সাধারণ সম্পাদকের নাম সার্চ কমিটির বাতিলের খাতায়।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ক্রীড়াঙ্গনেও পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের যৌথ তত্ত্বাবধানে অল্প দিনের মধ্যে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর ৪৫টি ফেডারেশনের সভাপতিকে ছেঁটে ফেলে মন্ত্রণালয়। আর তিন ফেডারেশন আগেই সভাপতিশূন্য ছিল। সব মিলিয়ে বর্তমানে ৪৮ ফেডারেশনে নেই সভাপতি। পাশাপাশি চারটি ফেডারেশনে নেই সাধারণ সম্পাদকও। এ ছাড়া কয়েকটি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন আত্মগোপনে।
তবে সিংহভাগ ফেডারেশনে এখনো সাধারণ সম্পাদকেরা আছেন বহাল তবিয়তে। এগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশন উল্লেখযোগ্য। এই ফেডারেশনের শুরু থেকে আসাদুজ্জামান কোহিনূরই সাধারণত সম্পাদকের আসনে ৷ যখন তাঁর বয়স ২৪ বছর, তখন ফেডারেশনের জয়েন্ট সেক্রেটারি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন কোহিনূর। এরপর ১৯৯১ থেকে দীর্ঘ চার দশক হ্যান্ডবলে চলে কোহিনূরের রাজত্ব। এই সময়ে সভাপতি পরিবর্তন হলেও তিনি ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। শুধু কোহিনূর নন, এমন আটজন সংগঠক আছেন, যাঁরা অন্তত এক যুগ এক চেয়ারেই পার করে দিয়েছেন। সেই তালিকায় সবার আগে থাকবেন ৪৪ বছর সাধারণ সম্পাদক থাকা কুস্তি ফেডারেশনের তাবিউর রহমান পালোয়ান। এরপর ক্রমান্বয়ে তায়কোয়ান্দো ফেডারেশনের মাহমুদুল ইসলাম রানা ২৭ বছর; আর্চারির কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপল, ভলিবলের আশিকুর রহমান মিকু—এই দুজন আছেন ২৩ বছর করে। এ ছাড়া রাগবির মৌসুম আলী, ঘুড়ি অ্যাসোসিয়েশনের শাহজাহান মৃধা আছেন দুই সংস্থার জন্মলগ্ন থেকে। রানা-তাবিউরদের মতো যাঁরা ফেডারেশনগুলোতে এভাবে খুঁটি গেড়েছেন, তাঁদের এবার ছেড়ে যাওয়ার সময় হয়েছে।
শুধু তা-ই নয়, দুই বা তার বেশি মেয়াদে সাধারণ সম্পাদকের পদে থাকায় বিদায় নিতে হবে আরও ২৯ ফেডারেশন/অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদককে। তালিকায় রয়েছেন বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম, রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের আহমেদ আসিফুল হাসান, বাস্কেটবলের অভিজিৎ কুমার (এ কে) সরকার, বক্সিংয়ের মাজহারুল ইসলাম তুহিন, হকি ফেডারেশনের মমিনুল হক সাঈদ, সুইমিং ফেডারেশনের এম বি সাইফ, শুটিং ফেডারেশনের ইন্তেখাবুল হামিদ অপু, উশুর মো. দুলাল হোসেন, রোইংয়ের হাজি মো. খোরশেদ আলম, মার্শাল আর্ট কনফেডারেশনের হাসান উজ জামান মনি, বাশাআপ অ্যাসোসিয়েশনের খালেদ মনসুর চৌধুরী, খো-খো ফেডারেশনের ফজলুর রহমান বাবুল, বেসবল-সফটবল অ্যাসোসিয়েশনের আমিনুল ইসলাম লিটন, আন্তর্জাতিক তায়কোয়ান্দো অ্যাসোসিয়েশনের সোলায়মান শিকদার, স্কোয়াশের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জি এম কামরুল ইসলাম, সাইক্লিং ফেডারেশনের তাহের উল আলম চৌধুরী স্বপন, ভারোত্তোলনের লে. কর্নেল মো. নজরুল ইসলাম, ব্যাডমিন্টনের পরিমল সিং, টেনিস ফেডারেশনের আবু সাঈদ মোহাম্মদ হায়দার, টেবিল টেনিসের জাহাঙ্গীর আলম, বাংলাদেশ জুডো ফেডারেশনের কামরুন নাহার হিরু, ব্রিজ ফেডারেশনের এম এ কুদ্দুস, ফেন্সিং অ্যাসোসিয়েশনের সেলিম ওমরাও খান, সার্ফিংয়ের ইউসুফ হারুন, থ্রোবলের শামীম আল মামুন, ক্যারম ফেডারেশনের আশরাফ আহমেদ লিয়ন, কিকবক্সের মোস্তাফিজুর রহমান, ব্যুথানের কামাল ইউরী ও বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান জামিল।