সার্চ ইঞ্জিনের বাজারে শামিল হলো চ্যাটজিপিটি নির্মাতা ওপেনএআই। গত বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ‘সার্চজিপিটি’ নামের সার্চ ইঞ্জিন নিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছে কোম্পানিটি। এর মাধ্যমে গুগলসহ অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামল ওপেনএআই।
ইন্টারনেট জুড়ে থাকা রিয়েলটাইম (তাৎক্ষণিক) তথ্য জানাবে সার্চজিপিটি। কোনো কিছু সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তা বিভিন্ন ওয়েবসাইটের তালিকা দেওয়ার পরিবর্তে উত্তরটি গুছিয়ে লেখে ও বোঝানোর চেষ্টা করবে এই সার্চ ইঞ্জিন। উদাহরণস্বরূপ, কোনো সংগীত উৎসব সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সে সম্পর্কে একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করে দেবে। সেই সঙ্গে উৎসব সম্পর্কিত বিভিন্ন ওয়েবসাইটের লিংকও দেখাবে।
আবার টমেটো গাছের চারা কখন রোপণ করা হবে, সে সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে বিভিন্ন প্রজাতির টমেটো গাছ কোন সময়ে রোপণ করতে হবে তা জানাবে সার্চজিপিটি। এর পরও ফলোআপ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারবেন ব্যবহারকারীরা বা সাইডবার থেকে প্রাসঙ্গিক ওয়েবসাইটের লিংকগুলো চালু করতে পারবেন।
প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট দ্য ভার্জকে চ্যাটজিপিটির মুখপাত্র কায়লা উড বলেন, সার্চজিপিটি এখনো প্রোটোটাইপ বা পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। প্রথমেই মাত্র ১০ হাজার ব্যবহারকারী ও ডেভেলপারের কাছে সার্চ ইঞ্জিনটি উন্মোচন করা হবে। কোম্পানিটির জিপিটি-৪ মডেলের ওপর ভিত্তি করে এটি তৈরি করা হয়েছে। থার্ড পার্টি অংশীদারত্বদের সঙ্গে কাজ করছে ওপেনএআই এবং সার্চ ফলাফল তৈরির জন্য সরাসরি কনটেন্ট ফিড ব্যবহার করবে সার্চ ইঞ্জিনটি। চ্যাটজিপিটির সঙ্গে ফলাফলগুলো একত্রিত করাই কোম্পানিটির চূড়ান্ত লক্ষ্য।
ওপেনএআইয়ের সার্চ ইঞ্জিনটি গুগলের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। সার্চজিপিটি উন্মোচনের ঘোষণা দেওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার গুগলের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেটের শেয়ারদর ৩ শতাংশ কমেছে। এর মাধ্যমে এআইভিত্তিক আরেক সার্চ ইঞ্জিন পারপ্লেক্সিটির সঙ্গেও তীব্র প্রতিযোগিতা করবে ওপেনএআই। সম্প্রতি এআই দিয়ে তৈরি উত্তরের জন্য সমালোচনার মুখে পড়েছে পারপ্লেক্সিটি। বিভিন্ন প্রকাশক দাবি করেন, সার্চ ইঞ্জিনটি সরাসরি তাদের কাজ চুরি করছে।
এসব সমালোচনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে এগিয়েছে ওপেনএআই। এক ব্লগ পোস্টে কোম্পানিটি বলেছে, সার্চজিপিটি তৈরির জন্য ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল, দ্য অ্যাসোসিয়েট প্রেস ও ভক্স মিডিয়ার মতো বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে অংশীদারত্ব করেছে।
ওপেনএআই আরও বলেছে, সার্চজিপিটির ফলাফলের সঙ্গে বিভিন্ন লিংক ও উদ্ধৃতি মাধ্যমে প্রকাশকদের সঙ্গে ব্যবহারকারীদের যুক্ত করা হবে। সার্চজিপিটির উত্তরগুলোতে স্পষ্টভাবে প্রকাশদের স্বীকৃতি ও লিংক দেওয়া হয়েছে। ফলে কোথা থেকে তথ্যগুলো নেওয়া হয়েছে তা ব্যবহারকারীরা জানতে পারবেন এবং বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দ্রুত জানা যাবে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ব্লুমবার্গের ও মে মাসে দ্য ইনফরমেশনের প্রতিবেদনে ওপেনএআইয়ের এই পণ্য সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানা যায়। গুগলের অনেক কর্মীকেও ওপেনএআই নিজের কোম্পানিতে নিয়োগ দিতে চেয়েছিল বলে সে সময় জানা গেছে।
চ্যাটজিপিটিতে রিয়েলটাইম তথ্য যুক্ত করতে চায় ওপেনএআই। যখন চ্যাটজিপিটি ৩.৫ উন্মোচন হয়েছিল, তখন কয়েক মাস পিছিয়ে ছিল এআই মডেলটির তথ্য। চ্যাটজিপিটির মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্রাউজ করার জন্য গত সেপ্টেম্বরে নতুন একটি উপায় উন্মোচন করে ওপেনএআই। সে সময় চ্যাটজিপিটির সঙ্গে বিং সার্চ ইঞ্জিনের ক্ষমতা জুড়ে দেওয়া হয়।
ওপেনএআই পণ্যের দ্রুত অগ্রগতির ফলে কয়েক বছরে চ্যাটজিপিটিতে লাখ লাখ ব্যবহারকারী যুক্ত হয়েছে। এক প্রতিবেদনে দ্য ইনফরমেশন বলেছে, এ বছর এআই প্রশিক্ষণে ওপেনএআইয়ের খরচ ৭০০ কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে। সার্চজিপিটি প্রাথমিকভাবে বিনা মূল্যে ব্যবহার করা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে শিগগিরই পণ্যটি ব্যবহারের জন্য ব্যবহারকারীদের অর্থ খরচ করতে হতে পারে।